সব প্রটোকল মেনে শ্রমিক পাঠানো হবে – মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি দলকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার: সব ধরনের প্রটোকল বজায় রেখে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিক পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান বৃহস্পতিবার গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে প্রধানমন্ত্রী তাকে এ আশ্বাস দেন। এর আগে সকালে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’র বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ ও এম সারাভাননও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে ইমরান আহমদ বলেন, চলতি মাস থেকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেবে মালয়েশিয়া।

২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করে মালয়েশিয়া। চার বছর পর দেশটিতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার খুলল। জনশক্তি রপ্তানি ঝুলে থাকার প্রেক্ষাপটে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান বুধবার একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে ঢাকায় আসেন। ইমরান আহমদের আমন্ত্রণে তিনি এ সফরে আসেন।

ইমরান আহমদ বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে আর কোনো বৈঠকের হয়তো প্রয়োজন হবে না। সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী সব শর্ত মেনেই দেশটিতে কর্মী পাঠানো হবে। সরকারের ডাটা ব্যাংক থেকে কর্মী পাঠানো হবে। তার আগে সংবাদপত্র ও টিভিতে বিজ্ঞাপন দেয়া হবে।

সাংবাদিকরা জানতে চান, মালয়েশিয়ায় মোট কত কর্মী যেতে পারে? জবাবে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘এমওইউতে পাঁচ বছরে ৫ লাখ কর্মী নেয়ার কথা। এ বছরের মধ্যে ২ লাখ নেয়ার কথা। আমাদের তো মনে হচ্ছে, এই বছরের মধ্যেই পাঁচ লাখ যাবে।’

কর্মীদের কত টাকা খরচ হতে পারে, সেই প্রশ্নের উত্তরে ইমরান আহমদ বলেন, ‘আগেরবার কর্মী পাঠানোর সময় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা আমরা নির্ধারণ করেছিলাম। এবার সেটা থেকেও কমে আসবে। তবে কত কমে আসবে সেটা এখনো হিসাব করি নাই। তবে নিশ্চিতভাবে কমে আসবে।’

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, দেশে সরকারিভাবে বৈধ ১ হাজার ৫২০ এজেন্সি রয়েছে। তাদের তালিকা আমরা আগেই পাঠিয়েছি। সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী তালিকা থেকে বাছাই করার অধিকার মালয়েশিয়ার রয়েছে। কারণ তারা বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেবে। সিন্ডিকেটের কথা সমঝোতা চুক্তিতে নেই, আজকের (বৃহস্পতিবার) আলোচনাতেও ছিলো না।

মালয়েশিয়ার বাছাই করা এজেন্সির বাইরে যেসব এজেন্সি থাকবে, তারা কী করে ব্যবসা করবে-জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, মানুষ ব্যবসার চিন্তা করেই লাইসেন্স নেয়। তারা নিজ নিজ ব্যবসা খুঁজে নেবে।

ব্রিফিংয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব মুনিরুছ সালেহীন বলেন, আগামী ১ বছরে দেশটির অর্থনৈতিক খাতে বাংলাদেশ থেকে দুই লাখ কর্মী নেবে। মালয়েশিয়ার মন্ত্রী বলেছেন, চুক্তি অনুযায়ী কম খরচে কর্মী নেবে। পাশাপাশি সিকিউরিটি পারসোনাল এবং ডোমেস্টিক ওয়ার্কার্স পদে লোক নেবে। এসব খাত এখনো বাংলাদেশের জন্য উন্মুক্ত হয়নি। এ ছাড়া মন্ত্রণালয় থেকে যারা তালিকাভুক্ত হবেন, এমন তালিকা থেকেই মেডিকেল সেন্টারও তারা ঠিক করবেন। আমরা চাই কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে। তাদের বেতন হবে ১ হাজার ৫০০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত (বাংলাদেশি প্রায় ৩০ হাজার টাকা)। তাদের সব নিরাপত্তা হবে মালয়েশিয়ান আইনে।

সচিব আরও বলেন, মালয়েশিয়ার মন্ত্রী আমাদের অভিবাসন খরচ ‘জিরো’তে রাখার কথা বলেছেন। যদি কোনো রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়মভঙ্গ করে, তাহলে তারা আইনি ব্যবস্থা নেবেন। আমরা একটি খরচ নির্ধারণ করে দেব, তার বাইরে কোনো বাড়তি টাকা নিলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। কর্মীদের সুরক্ষার জন্যই এসব উদ্যোগ।

সমঝোতা অনুযায়ী, মালয়েশিয়াতে পৌঁছানোর পর কোয়ারেন্টিন খরচ কর্মীকে বহন করতে হবে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পাসপোর্টসহ কিছু খরচ কর্মীকেই বহন করতে হবে। তবে যাওয়া-আসার টিকিটের খরচ দেবে নিয়োগকর্তা।

২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে সমঝোতা স্মারক সই হয়। চুক্তির এক মাসের মধ্যেই কর্মী পাঠানোর কথা থাকলেও সিন্ডিকেট ইস্যুতে তা গত ছয় মাস ধরে ঝুলে ছিল।

জনশক্তি রপ্তানি করে ২৫ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা : মালয়েশিয়ার জনশক্তি রপ্তানিতে ২৫ এজেন্সির সিন্ডিকেট ২৫ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্ট। তাদের মতে, এর আগেও সিন্ডিকেটের সদস্যরা অতিরিক্ত ফি আদায় করেছেন। এ কারণে জনশক্তি রপ্তানিতে বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। সংগঠনটি কর্মী প্রেরণে সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য বাজার উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি ড. মোহাম্মদ ফারুক বলেন, তিন বছরের বেশি সময় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ থাকার পর ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর বাজারটি পুনরায় খোলার জন্য দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সমগ্র জাতি আশা করেছিল চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই শ্রমিক রপ্তানি শুরু হবে। কিন্তু সিন্ডিকেটের অপতৎপরতার কারণে সেই আশা পূরণ হয়নি। ২০১৬ সালে সিন্ডিকেটের সদস্য সংখ্যা ছিল ১০, এখন তা হয়েছে ২৫ জন।

দেশে প্রায় ২ হাজারের কাছাকাছি বৈধ এজেন্সি থাকার পরও কেন ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী প্রেরণের সুযোগ পাবে-এমন প্রশ্ন রেখে মোহাম্মদ ফারুক বলেন, বর্তমানে ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ বৈধ এজেন্সি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক রপ্তানি করছে। কোন অপরাধে শত শত এজেন্সিকে বাদ দিয়ে শুধু ২৫টি এজেন্সি মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রপ্তানি করার অনুমতি পাবে?

বায়রার মহাসচিব মোস্তফা মাহমুদ বলেন, বর্তমানে মালয়েশিয়ার প্রচুর বিদেশি শ্রমিকের প্রয়োজন। আগামী ৩ বছরে মালয়েশিয়ার প্রয়োজন ১৫ থেকে ২০ লাখ শ্রমিক। আর সেই সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে ২৫ জনের তৈরি একটি সিন্ডিকেট। এবারের ন্যূনতম টার্গেট মালয়েশিয়ার শ্রমিক রপ্তানি করে ২০ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গতবছরের মতো এবারও জনপ্রতি অতিরিক্ত ২ লাখ টাকা করে আদায় করতে পারলে তারা ২০ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে পারবে।

সংবাদ সম্মেলনে সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্টের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রিয়াজ-উল-ইসলাম লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। উপস্থিত ছিলেন গোলাম মোস্তফা বাবুল, সিরাজ মিয়া, রেদোয়ান খান বোরহান প্রমুখ।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More