সাংবিধানিক কাঠামোর বাইরে যেতে চায় না আওয়ামী লীগ

বিএনপির ১০ দফা দাবি প্রসঙ্গ.......

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশ নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে বেশ আগ্রহ ছিল, ব্যাপক সাড়াও পড়েছিল। নানা ঝক্কিঝামেলা পেরিয়ে, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটিয়ে নয়াপল্টন থেকে সরে গিয়ে শেষমেশ রাজধানীর গোলাপবাগে সমাবেশ করে বিএনপি। ওই সমাবেশ থেকে সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরেছে মাঠের এই প্রধান বিরোধী দলটি। কিন্তু ওই দাবিগুলো কোনোভাবেই আমলে নিচ্ছে না ক্ষমতাসীনরা। তবে জনস্বার্থে মানার মতো কোনো দাবি আছে কি না আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড তা খতিয়ে দেখছে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেছেন, বিএনপির দাবিগুলোর মধ্যে কোনো নতুনত্ব নেই, এটা গতানুগতিক। বিএনপির ১০ দফার প্রথমটি হলো বর্তমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। কিন্তু সরকার পদত্যাগের মতো দেশে কোনো ঘটনা ঘটেনি বা কোনো উপাদানও তৈরি হয়নি, বরং সরকার গত ১৪ বছরে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিতে নজিরবিহীন ভূমিকা রেখেছে। বিশ্বের অনেক দেশের কাছে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের অনেকে আজ এ দেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। দ্বিতীয়টি হলো একটি দলনিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার বা অন্তবর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আদালতের নির্দেশে বাতিল হয়েছে এক দশক হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে দলীয় সরকারের অধীনে দু’টি নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি ও তার মিত্ররা অংশ না নিয়ে ঠেকাতে চেয়েছিল, সফল হয়নি। আর ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি ও তার মিত্ররা অংশগ্রহণ করে। তারা মাঠে টিকে থাকতে পারেনি এটা তাদের ব্যর্থতা। এর দায় তো সরকার নিতে পারে না। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিটি অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য। সংবিধানপরিপন্থী দাবি তো মানা যাবে না। অন্য যে দাবিগুলো আছে সেগুলো দলীয় ফোরামে আলোচনা হবে। যদি কোনো বিষয় মানার মতো হয় সেটিও যাচাই-বাছাই করা হবে। সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে থেকে তাদের দাবিগুলো মানার সুযোগ থাকলে অবশ্যই সেটি খতিয়ে দেখা হবে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় তার সরকারি বাসভবনে বলেছেন, বিএনপির ১০ দফা দাবির মধ্যে নতুন কিছু নেই; সব পুরোনো কথা। এরপরও খতিয়ে দেখা হচ্ছে; মেনে নেয়ার মতো কোনো দাবি আছে কি না। বিএনপির এমপিদের পদত্যাগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১০ ডিসেম্বর সব অচল করে দেয়ার ছক এঁকে বিএনপি এখন নিজেরাই অচল। বিএনপির সংসদ সদস্যরাও চলে গেলেন, এভাবে বয়কট করা বড় ভুল, অচিরেই বুঝতে পারবেন।

বিএনপির সমাবেশ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ১০ লাখ মানুষের সমাবেশের কথা বলে তারা বড়জোর ৫০ হাজার মানুষের সমাবেশ করেছে। আমাদের থানা সম্মেলনেও অনেকসময় এর চেয়ে বেশি মানুষ হয়। তিনি আরো বলেন, বিএনপি বলেছিল, ১০ ডিসেম্বর তাদের এক দফা দাবি। আর সমাবেশে তারা দিলো ১০ দফা দাবি। এক দফা থেকে এখন দশ দফায় গেছে। তাদের দাবিগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। এগুলো তারা বহুদিন ধরে বলে আসছে। সেখানে মানার মতো নতুন কোনো কিছু নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপির সর্বমোট সাতজন সংসদ সদস্য আছে। তারা বলেছিল সরকারের পদত্যাগ দাবি করবে, ১০ তারিখ সরকার হটিয়ে দেবে, এখন দেখা যাচ্ছে নিজেরাই হটে গেছে। এই পদত্যাগের মধ্যদিয়ে সংসদের কিংবা সরকারের কোনো ক্ষতি হবে না, কোনো কিছু যায় আসে না।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, বিএনপির দাবি অনুযায়ী নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে পারলে বিএনপির দাবিগুলো মানতে সরকার অনেকটা চাপে পড়ত; কিন্তু নয়াপল্টন থেকে সরে গিয়ে রাজধানীর গোলাপবাগে সমাবেশ করেছে তারা। এতেই বিএনপির এক ধরনের নৈতিক পরাজয় হয়েছে। তবে তারা সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছে এটা এক দিয়ে সফল হয়েছে; কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কোনো দাবি আদায় করার মতো পরিস্থিতি বিএনপি তৈরি করতে সক্ষম হয়নি। যার কারণে বিএনপির ১০ দফা দাবি মানার ব্যাপারে কোনোভাবেই নমনীয়তা দেখাবে না সরকার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের মধ্যম সারির এক নেতা বলেন, বিএনপি যতই দাবিদাওয়া পেশ করুক না কেন তাদের কোনো দাবিই সরকার মেনে নেবে না। বিদেশীদের কাছে ধরনা দিয়েও তারা কোনো দাবি আদায় করতে পারবে না। হয়তো কিছুটা চাপ সৃষ্টি করতে পারবে। সে জন্যও দলীয়ভাবে আন্তর্জাতিক লবিং জোরদার করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সাথে দুই দফায় বৈঠক করা হয়েছে। এভাবে দফায় দফায় বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বিদেশী রাষ্ট্রদূত ও ব্যক্তিবর্গের সাথে বৈঠক করে আন্তর্জাতিক লবিং শক্তিশালী করা হবে। ওই সমস্ত বৈঠকে বিরোধী শক্তির নেতিবাচক কর্মকা- এবং সরকারের ইতিবাচক কর্মকা- তুলে ধরে তাদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করা হবে। তবে বিএনপিকে দাবি আদায় করতে হলে অভ্যন্তরীণ শক্তি জোরদার করতে হবে। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক শক্তি জোরদার করে চাপে ফেলে দাবি আদায়ে সরকারকে একপ্রকার বাধ্য করতে হবে। অন্য কোনো উপায়ে আশাতীত সফলতা আসার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম নয়া বলেন, ১০ ডিসেম্বর সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি যে স্বপ্ন দেখেছিল তা নস্যাৎ হয়েছে। নয়াপল্টন থেকে সরে গিয়ে গোলাপবাগে সমাবেশ করেছে, এখানেই তো বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তাদের সন্ত্রাসী কর্মকা- ও নৈরাজ্য ভ-ুল করে দিয়েছে। ভবিষ্যতেও যদি তারা কোনো অপরাজনীতি করার অপচেষ্টা করে তাহলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। তিনি আরো বলেন, বিএনপি যে ১০ দফা দাবি দিয়েছে, তাতে নতুন কিছু নেই। এই দাবিগুলো তারা বিভিন্ন সময় সভা-সমাবেশে বলে আসছে। ফলে এটা মানার কোনো প্রশ্নই আসে না। বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিএনপির দাবি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। এটা তো আদালতের নির্দেশে বাতিল হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখন জাদুঘরে চলে গেছে। সাংবিধানিক কাঠামো, রীতিনীতি পদ্ধতির বাইরে আমরা যাবো না। আগামী নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে এবং সংবিধানের আলোকেই অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপিকে আহ্বান জানাব, নৈরাজ্যের পথ পরিহার করে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে, এটা তাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে। আর নির্বাচন পরিহার করলে হবে আত্মহনন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More