সিনিয়র নেতাদের দাবি – বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে কোনো সমস্যা নেই

স্টাফ রিপোর্টার: ওয়ান-ইলেভেনের ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। তারা বলেছেন, দেশের গণতন্ত্র ও বিএনপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আরও ষড়যন্ত্র হবে, কিন্তু তা মোকাবেলা করতে হবে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে বিএনপিতে কোনো সমস্যা নেই বলেও মন্তব্য করেন নেতারা। শুক্রবার রাতে ‘মুক্তিযুদ্ধকালে পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক দেশনেত্রী খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানের বন্দি দিবস’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় বিএনপির সিনিয়র নেতারা এসব কথা বলেন। সভয় নেতারা বলেন, ১৯৭১ সালে ২ জুলাই সন্তানসহ খালেদা জিয়াকে রাজধানী ঢাকার একটি বাসা থেকে পাকিস্তানি বাহিনী গ্রেফতার করে, বিজয় দিবসে তিনি মুক্ত হন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশকে যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনতে চাই, শহীদ জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার অসমাপ্ত কাজ যদি বাস্তবায়ন করতে চাই এবং দেশের মানুষের অধিকার যদি ফিরিয়ে আনতে চাই আন্দোলন, আন্দোলন, আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নাই। তরুণদেরকে বলব, সামনে এগিয়ে আসুন। আর সময় নেই। এখন জেগে উঠতে হবে। জেগে উঠতে হবে এবং দেশকে ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। এই আন্দোলন সংগ্রাম কোনো ব্যক্তির জন্য নয়, এই আন্দোলন এই সংগ্রাম কোনো দলের জন্য নয়। এই আন্দোলন দেশের মানুষের জন্য, জাতির জন্য।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ যেখানে ব্যর্থ জিয়াউর রহমান সেখানে সফল। যার কারণে ষড়যন্ত্র হয় জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে। তিনি শাহাদাত বরণ করেন, ষড়যন্ত্রকারীরা মনে করেছিল বিএনপি শূন্য হয়ে যাবে। জিয়াউর রহমানের উত্তরসূরী খালেদা জিয়া দুর্দিনে বিএনপির পতাকা হাতে তুলে নিয়েছিলেন এবং দলকে সবচেয়ে জনপ্রিয় দলে পরিণত করেছেন। বর্তমান ক্ষমতাসীনরা জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও তাদের সুযোগ্য সন্তান তারেক রহমানকে নিয়ে ভয়। এ জন্য তারা একের পর এক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করছে।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় খালেদা জিয়া পাকিস্তানের হাতে বন্দি ছিলেন, এখন তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে বন্দি। ওয়ান-ইলেভেনে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশে চলে যাওয়ার জন্য বারবার প্রলুব্ধ করা হয়েছে। কিন্তু দেশের মাটি ও মানুষকে ছেড়ে তিনি যাননি। ওয়ান ইলেভেনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরও বলেন, ২০০৮ সালে কারাগার থেকে বের হওয়ার পর দেশনেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ওয়ান ইলেভেনে ১৩টি প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো- তা মেনে নিলে ম্যাডামকে মুক্ত ও বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানো হবে। প্রতিটি প্রস্তাবই ছিলো দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে, যার কারণে তা মেনে নেননি। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, জিয়াউর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধকে থামাতে ১৯৭১ সালে ২ জুলাই খালেদা জিয়াকে দুই শিশু সন্তানসহ (তারেক ও কোকো) আটক করা হয়েছিলো। তেমনি ওয়ান ইলেভেন সরকার খালেদা জিয়াকে থামাতে দুই সন্তানসহ (তারেক ও কোকো) তাকে আটক করেছিলো। এর আগে দরকষাকষি হয়েছিলো। তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোকে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া অথবা ম্যাডামকে বিদেশে চলে যেতে হবে। নেত্রীর মুখে শুনেছি, ওইদিন আমাদের নেতা বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছিলেন, আমি কোনো অন্যায় করিনি, কেন আমাকে বিদেশ যেতে হবে? আমার যদি কোনো অন্যায় থাকে বিচার করুক। বিচার তো করতে পারলো না, তারা নির্যাতন করলো। সেদিনও খালেদা জিয়া মাতৃত্ব নয়, দেশ ও দেশের মানুষকে বেছে নিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেন গয়েশ্বর। তিনি বলেন, ওয়ান ইলেভেনের ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত রয়েছে। গণতন্ত্র ও নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র আমাদের সামনে আরও আছে। আমরা এখনো নেত্রীকে মুক্ত করতে পারলাম না।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে ইঙ্গিত করে বিএনপির এই নেতা বলেন, কিছু সুধীজন আমাদের মাঝে মাঝে কিছু উপদেশ দিয়ে থাকেন। আমাদের নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলতে থাকেন। তাদেরকে সবিনয়ে বলব, এ কথাগুলো প্রকারন্তরে ফ্যাসিবাদকে উৎসাহীত করে। যারা ক্ষমতায় আছে তাদের ক্ষমতায় থাকার পথকে প্রশস্ত করে। আমাদের নেতৃত্ব নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। জনগণকে বিভ্রান্ত করবেন না। সমস্যা দেশে গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই। আমাদের নেতৃত্ব পদে পদে পরীক্ষিত এবং পরীক্ষায় তারা উত্তীর্ণ। নেতাকর্মীদের বলবো, গণতন্ত্রের নেতৃত্ব যারা দেন তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র হবে, অপপ্রচার চালানো হবে, আমরা যেন কোনোভাবে বিভ্রান্ত না হই। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন-স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। সভা পরিচালনা করেন সূবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More