সয়াবিন তেল লিটারে ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৫৩ টাকা নির্ধারণ

স্টাফ রিপোর্টার: ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের দেয়া প্রস্তাবই মানতে হলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে এক বৈঠকে নতুন করে সয়াবিন ও পামঅয়েলের দাম নির্ধারণ করা হয়। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামের রেকর্ড গড়েছে সয়াবিন তেল। প্রতিলিটার সয়াবিন তেলের দাম এক সঙ্গে ১২ টাকা বেড়েছে। এই দর বৃদ্ধির ফলে এখন প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে ১৫৩ টাকা গুনতে হবে। এ নিয়ে এক মাসের মধ্যে দুইবার সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হলো। গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনষ্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়াকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে দেশে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হলো।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, গত ১৯ মে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক বিষয়ক জাতীয় কমিটির তোয়াক্কা না করে ব্যবসায়ীরা নিজেরাই তখন প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে পাঁচ টাকা করে বাড়িয়ে দেন। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে লিটারে পাঁচ টাকার পরিবর্তে দুই টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তখন প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ হয় ১৪১ টাকা। এ হিসেবে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে ৯ টাকা বাড়ানো হলে দাম হবে ১৫০ টাকা। কিভাবে প্রতি লিটার সয়াবিনের খুচরা মূল্য ১৫৩ টাকা হয়? এ প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা আরো বলেছেন, কয়েকদিন আগে সংগঠনটি প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে ১৩ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। আজকের (গতকাল বৃহস্পতিবার) বৈঠকে কার্যত ব্যবসায়ীদের দেয়া প্রস্তাবটিই মানতে বাধ্য হলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি জানায়, এখন থেকে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৫৩ টাকা ও পাঁচ লিটারের বোতল বিক্রি হবে ৭২৮ টাকায়। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন তেল লিটার প্রতি ১২৯ টাকা ও পাম সুপার তেল ১১২ টাকায় বিক্রি করা হবে। তবে পাম অয়েলের দাম লিটারে এক টাকা কমানো হয়েছে। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ভোজ্যতেলের দর বাড়ানোর প্রস্তাবে সংগঠনটি বলেছে, দেশে চাহিদার ৯৫ শতাংশ ভোজ্য তেল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। আর আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু সে হিসেবে দেশে সয়াবিন তেলের দাম তুলনামূলক কম বেড়েছে। গত মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ২০২০ সালের পর থেকে ভোজ্য তেলের আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। যেহেতু, ভোজ্য তেল একটি আমদানি নির্ভর পণ্য, তাই ভোজ্য তেলের বাজার দর নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজার দরের উঠানামার ওপর। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় বাজারেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে বলে জানানো হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, বৈঠকে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, আগামী কোরবানির ঈদের আগে তারা আর ভোজ্যতেলের দাম বাড়াবে না। এই শর্তে এবার দাম বাড়ানো হয়েছে। এর আগে গত ১৫ মার্চ কমিটি এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৩৯ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ৬৬০ টাকা, খোলা সয়াবিন ১১৭ টাকা ও পামতেল ১০৯ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। আর ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো ভোজ্য তেলের দর নির্ধারণ করা হয়ে। সে সময় প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১১৫ টাকা, বোতলজাত সয়াবিনের লিটার ১৩৫ টাকা ও পামঅয়েল ১০৪ টাকা বিক্রির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিলো।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জাফর উদ্দিন বলেন, ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে ব্যবসায়ীরা আবারও প্রস্তাব দিয়েছেন। বিশ্ববাজারেও তেলের দাম নতুন করে বেড়েছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বোতলজাত সয়াবিন খুচরায় ১৩৫ টাকা দাম নির্ধারণের পর ১৫ মার্চ আরেক দফায় চার টাকা দাম বাড়ানো হয়েছিলো। এর বাইরেও ধাপে ধাপে খোলা বাজারে তেলের দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা বলে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা জানান। মাঝে এপ্রিল মাসে একবার এবং মে মাসে আরেক দফায় বেড়েছিলো ভোজ্যতেলের দাম। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং রমজান মাসে ভোজ্যতেলের দাম সহনীয় রাখতে গত ১০ এপ্রিল সয়াবিন ও পাম তেল আমদানিতে ৪ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার করে এনবিআর। বর্তমানে বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে অনেক কম দাবি করে ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও টিকে গ্রুপের পরিচালক মোস্তফা হায়দার বলেন, ‘দাম না বাড়ালে ব্যবসায়ীরা নতুন করে এলসি খুলতে পারবেন না। ফলে সামনে কোরবানির ঈদে একটা সঙ্কট দেখা দিতে পারে। ‘পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি মোহাম্মদ আলী ভুট্টো জানান, ঈদের পর থেকেই ভোজ্যতেলের দাম ওঠানামা করছে। আগামী দুই মাসে এই পরিস্থিতি চলমান থাকবে বলে তাদের ধারণা। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজার এখন ঊর্ধমুখী। সেপ্টেম্বরের দিকে আমেরিকার বাজারে নতুন মৌসুমের সয়াবিন তেল আসবে। জুলাইয়ের দিকে মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া অঞ্চলে পাম তেলের নতুন পণ্য আসবে। ‘এই দুটি বাজারই ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভোজ্যতেলের দাম কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে।’ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অনুবিভাগের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১৪ সাল থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত ভোজ্যতেলের বাজার মোটামুটি স্থিতিশীল ছিলো। জুন, ২০২০ এর পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিক উর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ‘ভোজ্যতেলের মোট চাহিদার ৯৫ ভাগেরও বেশি আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে স্থানীয় বাজারেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। তবে, আন্তর্জাতিক বাজারে যেই পরিমাণে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে স্থানীয় বাজারে সেই পরিমাণে মূল্য বৃদ্ধি পায়নি,’ বলা হয় মন্ত্রণালয়ের ওই প্রতিবেদনে। মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, বিগত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম প্রায় ১৬০ শতাংশ বেড়েছে। বিপরীতে দেশের বাজারে দাম বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। সেই হিসেবে এর আগে দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোকে যৌক্তিক মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More