সাগরে লঘুচাপ ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা : চুয়াডাঙ্গায় ঝড়ে ভেঙে পড়েছে গাছ : বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ

মাহফুজ মামুন: ঝড়ো হাওয়া, বজ্রসহ মুসুলধারে বৃষ্টি হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। ঝড়ে গাছ উপড়ে পড়ে সড়কে। আর বিদ্যুত লাইনের তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে জেলায়। বৃহস্পতিবার রাতে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৩১ মিলিমিটার। আর ঘন্টায় ঝড়ের গতিবেগ ছিলো ৫৬ কিলোমিটার। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সাইক্লোন ‘আম্ফান’ গতিপথ পরিবর্তন করলেও বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও দক্ষিণ আন্দামান সাগরের কাছে সৃষ্ট এই লঘুচাপটি যে কোনো সময়ে সুস্পষ্ট নিম্নচাপ থেকে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন। আগামী রোববারের মধ্যে এটা উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে দিক পরিবর্তন করতে পারে। তখন ভয়াল রূপ ঘূর্ণিঝড়ের রূপ ধারণ করতে পারে এটি। তবে এই ঘূর্ণিঝড় কোথায় আঘাত হানতে পারে তা গতকাল পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেনি আবহাওয়া দফতর। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, নিম্নচাপে পরিণত হয়ে এটি বঙ্গোপসাগর থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে যেতে পারে।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জেলায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় জনজীবন কষ্টকর হয়ে পড়ে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সন্ধ্যা থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়। রাত সাড়ে ৯টা থেকে ঝড়ো হাওয়া ও বজ্রপাত শুরু হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে মুসুল ধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে ১২টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। পরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাত পড়তে থাকে। চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ৩১ মিলিমিটার। ঝড়ের গতিবেগ ছিলো ঘণ্টায় ৫৬ কিলোমিটার। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঝড়ের গতিবেগ বেশি থাকায় চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরসহ বিভিন্ন স্থানে গাছ উপড়ে পড়েছে। ডাল ভেঙে পড়ে বিদ্যুৎ লাইনের তার ছিঁড়ে পড়ায় জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। চুয়াডাঙ্গা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন অফিস জানায়, বিদ্যুৎ লাইনের তার ছিঁড়ে গিয়েছে। যার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। লাইন মেরামতের কাজ চলছে। কখন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে বোঝা যাচ্ছে না। অনেক গ্রাহক জানাচ্ছে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে তার ছিঁড়ে গেছে।চুয়াডাঙ্গায় সদর থানা পুলিশের কয়েকটি টহল দল শহরের রাস্তায় ঝড়ে ভেঙে পড়ে থাকা গাছগুলো সরানোর কাজ করছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা শহরের কোর্ট রোড এলাকায় বড় একটি গাছ উপড়ে পড়ে সড়কে। বড়বাজারে বিদ্যুৎ লাইনের তার ছিঁড়ে যায় ও গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। ঝড়ের কারণে মাঠের ধানসহ উঠতি ফসলের ক্ষতি হয়েছে।চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছামাদুল ইসলাম জানান, তাপমাত্রা বেশি থাকায় গরম বেশি অনুভূত হয়েছে। দুই দিন ধরে তাপমাত্র কিছুটা বেশি। সন্ধ্যা থেকে আকাশ মেঘলা ছিলো। রাতে বজ্রসহ বৃষ্টি হয়েছে মুসুলধারে। ঝড়ের গতিবেগ গত দিনের চেয়ে ১৬ কিলোমিটার বেশি ছিলো।যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া পূর্বাভাস, ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর মিডিয়াম রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্ট, যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর আবহাওয়ার পূর্বাভাস, কানাডার আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস, জার্মানির আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস উদ্ধৃত করে আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, লঘুচাপ থেকে যে নিম্নচাপটি হতে যাচ্ছে এটা শেষ পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। আগামী ১৯ কিংবা ২০ মে কোনো এক সময়ে উপকূলে আঘাত করতে পারে এটি। মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইসিএমডব্লিউএফ) আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল নির্দেশ করছে যে, ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের উড়িষ্যা উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তবে অন্যান্য আবহাওয়ার মডেলগুলো ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছে। আমেরিকার মডেল নির্দেশ করছে, ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানতে পারে। কানাডার মডেল বলছে, এটি সুন্দরবন উপকূলে আঘাত হানতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, এটি ঘূর্ণিঝড় হবে কি না, তা আজ শুক্রবার বোঝা যাবে। কারণ অনেক সময় নিম্নচাপেও সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় শক্তি হারায়। এদিকে আজ শুক্রবার দেশের কয়েকটি জেলায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ ভারি বৃষ্টি হতে পারে বলে আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More