চুয়াডাঙ্গা বেগমপুর ইউনিয়নে রয়েছে প্রায় ২ হাজার বিঘা খাসজমি

তদারকি করে বন্দবস্তর আওতায় আনা গেলে সরকার পবে রাজস্ব
বেগমপুর প্রতিনিধি: তদারকির অভাবে খাস জমি খুব সহজেই বেহাত ও বেদখল হয়ে যায়। প্রভাব প্রতিপত্তি থাকলে আর জাল দলিল হলেই সরকারি এ জমিকে নিজের জমি বলে হরহমায়াসেই ভোগ দখল করে থাকে অনেকেই। যদিও খাস জমির প্রকৃত মালিক ভূমি মন্ত্রণালয়। কিন্তু ইউনিয়নে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এসব জমি রক্ষায় ভূমি কর্মকর্তারা নানা কারণে তদারকি করতে পারেন না। তারই ধারাবাহিকতায় চুয়াডাঙ্গার বেগমপুর ইউনিয়নের ১৯টি মৌজার আওতায় বিভিন্ন পাঠে প্রায় ২ হাজার বিঘা জমি খাস রয়েছে। ফলে যুগযুগ ধরে এক শ্রেণির ভূমিদস্যুরা সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভোগ করে থাকে সরকারি খাস জমি।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দোস্ত, কুন্দিপুর, নেহালপুর, হিজলগাড়ি, ডিহি, রঙ্গগোহাইল, কৃষ্ণপুর, উজলপুর, আকন্দবাড়িয়া, ভবানীপুর, রাঙ্গিয়ারপোতা, শৈলমারী, ফুরশেদপুর, দর্শনা, কোটালী, বোয়ালিয়া, বেগমপুর, যদুপুর ও ঝাঝরী মৌজায় পাঠ-১ শ্রেণির আওতায় খাস জমি আছে ১ হাজার ৬৪৬ দশমিক ৯১ বিঘা, পাঠ-২ আছে ১৯৫ বিঘা, ও পাঠ-৩ আছে ৪১ দশমিক ৭৬ বিঘা। সর্বমোট বেগমপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসারের আওতায় খাস জমি আছে ১ হাজার ৮৮৩ দশমিক ৪৪ বিঘা।
বেগমপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসসূত্রে জানা গেছে, এর মধ্যে বন্দবস্ত যোগ্য জমির পরিমাণ ৭৮ দশমিক ৯৯ একর, যার মধ্যে বন্দবস্ত দেয়া হয়েছে ৪৯ দশমিক ৯৯ একর। মামলাভুক্ত জমি রয়েছে ২ দশমিক ৬৮ একর। রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ২ দশমিক ৬৬ একর। সরকারি ভবন আছে ১ দশমিক ১২ একর। বন্দবস্ত যোগ্য জমি পড়ে আছে ২২ দশমিক ৭৫ একর। যা বন্দবস্ত দিলে সরকার প্রতিবছর পেতো মোটা অংকের রাজস্ব।
একটি সূত্র জানিয়েছে, ২৭নং ফুরশেদপুর মৌজায় বিভিন্ন শ্রেণির প্রায় ৩৭৫ একর খাস জমি আছে। অভিযোগ উঠেছে ওই খাস জমির মধ্যে ১১১৯ নং দাগে ২ একর ৬৬ শতক এবং ১১১০ নং দাগে ৫৯ শতক প্রায় ১১ বিঘা জমি কৌশল অবলম্বন কওে দেড়যুগ ধরে ফুরশেদপুর গ্রামের কতিপয় ব্যক্তি কোন প্রকার বন্দবস্ত না নিয়ে নিজ দখলে নিয়ে ভোগ করছে। অপর একটি সূত্র জানায়, সরকারি খাস জমি রক্ষার দায়িত্ব জেলা প্রশাসকদের ওপর ন্যস্থ করা আছে। বিভিন্ন চক্র জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে জমি ভোগ দখল করে থাকে। ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে তারা আদালতের আশ্রয় নিয়ে যুগের পর যুগ আইনের মার প্যাচে ফেলে ভোগ করে থাকে। অনেকেরই মন্তব্য ফুরশেদপুরের মতো এমন আরও অনেক ঘটনা অগোচরেই রয়ে গেছে। যারা খাস জমি দখল করে, তাদের কোনো দল নেই। যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে, তারা সেই সরকারের ওপর ভর করে চলে। এসব জমি উদ্ধারে প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। এ ধরনের জমি যাতে বেহাত না হয়, সে জন্য বর্তমান সরকার ডিজিটাইজেশনের ওপরও জোর দিয়েছে। খাস জমি উদ্ধার করে গৃহহীন-ভূমিহীনদের মধ্যে বন্দবস্ত দিলে অনেকেই উপকৃত হবে।
সূত্রে জানা গেছে, ভূমি মন্ত্রণালয়ে খাস জমি-১ ও খাস জমি-২ এ দুটি শাখা আছে। নানা কাজে সরকারি-বেসরকারি খাতে এ ধরনের জমির বন্দবস্ত দেয়ায় এসব শাখার মূল কাজ। এসব জমি রক্ষার ক্ষেত্রে কোনো দায়িত্ব পালন করে না এ মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে জমির খুব কাছাকাছি থাকলেও জেলা প্রশাসকরা খাস জমি তত্ত্বাবধানের কাজ জটিলতার কারণে যথাযথভাবে করতে পারেন না। তাই প্রতিবছর মোট খাস জমির পরিমাণ, ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্দ, সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন ও কল্যাণমূলক কাজের জন্য বরাদ্দ জমির হিসাব সংরক্ষণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। উল্লেখ্য, বেদখল হওয়া খাস জমি উদ্ধারে প্রশাসনিক শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো ২০১৭ সালের অক্টোবরে।
ভূমি ব্যবস্থাপনার মূল কাজ শুধু খাজনা আদায়ে সীমাবদ্ধ নয়। খাজনাকে নতুন আইনের ভাষায় বলা হয় ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ট্যাক্স বা ভূমি উন্নয়ন কর। ভূমি ব্যবস্থাপনার আওতায় প্রকৃত কাজ হচ্ছে রায়ত প্রজাদের নামে রেকর্ডকৃত ভূমির যথারীতি হালনাগাদ করা, সরকারের নিজ মালিকানায় বিস্তৃত চরভূমিসহ সমস্ত খাস জমির সুষ্ঠু বন্দবস্ত দেয়া এবং প্রজাদের ভূমি শিকস্তির কারণে জমার কমবেশি পরিবর্তন সাধন করা, ভূমিহীন বা প্রান্তিক কৃষকদের চাষের উন্নয়ন প্রয়োজনে নানাবিধ উপকরণ, যথা সেচব্যবস্থা, উন্নত বীজ, সার বিতরণের সুব্যবস্থা এবং ব্যাংক থেকে আর্থিক সাহায্যের বা কৃষিঋণের ব্যবস্থা করা। এছাড়া, খাজনা বাকি পড়লে তা আশু আদায়ের ব্যবস্থা নেয়া ভূমি ব্যবস্থাপনার একটি বিশেষ কর্তব্য।
বেগমপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আতিকুল হক বলেন, সব জমির ব্যাপারে খোঁজ খবর রাখা সম্ভব হয়ে ওঠে না। কারণ খাস জমির অনেক শ্রেণি বিভাগ আছে। সব খাস জসিই বন্দবস্ত দেয়া যায় না। তারপরও ইউনিয়নের খাস জমির তথ্য উপাত্ত লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। পর্যায় ক্রমে বিধি মোতাবেক বন্দবস্ত যোগ্য জমি বন্দবস্তর আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সরকারের স্বার্থ রক্ষা করায় আমাদের মূল কাজ। এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইসরাত জাহান বলেন, সরকারি সম্পদ রক্ষাণা-বেক্ষণা করাই আমাদের কাজ। সব বিষয়ে তো জানা থাকে না। তবে সরকারি সম্পত্তি অবৈধভাবে কারো দখলে থাকলে তথ্য পেলে তদন্তপূর্বক তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More