অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুমোদন কাল : প্রয়োজন ৬৪ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার: অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আগামী পাঁচ বছরে প্রয়োজন হবে ৬৪ লাখ ৯৫ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ (দেশীয়) উৎস থেকে আসবে ৫৭ লাখ ৪৮ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। যা মোট ব্যয়ের ৮৮ দশমিক ৫ শতাংশ।
বৈদেশিক উৎস থেকে আসবে ৭৪ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়া মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১২ লাখ ৩০ হাজার ১২০ কোটি টাকা এবং ব্যক্তি খাত থেকে ৫২ লাখ ৬৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) থেকে এই ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে এই পরিকল্পনাটি। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে গণভবন থেকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।
পরিকল্পনাটির সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করবেন জিইডি’র সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। সারসংক্ষেপটি ইতোমধ্যেই চলে এসেছে যুগান্তরের হাতে।
জিইডি’র সদস্য ড. শামসুল আলম রোববার বলেন, দারিদ্র্যবান্ধব, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাটি প্রণয়ন করা হয়েছে। এই পরিকল্পনায় গুণগত শিক্ষা, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ও কোভিড-১৯ এর ফলে সৃষ্ট সাময়িক বেকারত্বসহ বিদেশ ফেরত কর্মীদের জন্য কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা হবে।
এছাড়া শ্রমবাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিতকরণ, আয় বৈষম্য কমানো, সমন্বিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলা, টেকসই নগরায়ণ এবং আমার গ্রাম আমার শহর ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং কারিগরি শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়ন রূপকল্প ও নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে এ পরিকল্পনার নীতি ধারাবাহিকতার দিকটিতেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি)-এর লক্ষ্যগুলো এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এসব লক্ষ্য অর্জনের প্রচেষ্টাকে অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তা গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
এনইসি’র জন্য তৈরি সারসংক্ষেপ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নকালে বার্ষিক গড় জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) অর্জন হবে ৮ শতাংশ হারে। যেটি পরিকল্পনার শেষে ২০২৫ সাল নাগাদ গিয়ে দাঁড়াবে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ। পরিকল্পনা মেয়াদে ১ কোটি ১৩ লাখ নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
এর মধ্যে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩২ লাখ ৫০ হাজার। বাকি ৮০ লাখ ৫০ হাজার কর্মসংস্থান হবে দেশেই।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পরিকল্পনায় ২০২৫ সাল নাগাদ কর জিডিপির অনুপাত বর্তমানের ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ করা হবে।
রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য শুল্কের ওপর নির্ভরতা কমাতে এই দুই লক্ষ্য অর্জনের জন্য রাজস্ব আইন অধিকতর সংস্কার এবং কর প্রশাসনে আধুনিকায়ন ও শক্তিশালীকরণে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
এনইসি সভার সারসংক্ষেপে আরও বলা হয়েছে, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আগের মতো কার্যকরী পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এজন্য পরিকল্পনা দলিলে জাতীয় অগ্রাধিকার সামষ্টিক ও খাতভিত্তিক ১৫টি ক্ষেত্র পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নের লক্ষ্যে ১০৪টি সূচক সংবলিত একটি ফলাফলভিত্তিক কাঠামো সংযোজন করা হয়েছে।
এই কাঠামোর ভিত্তিতে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ পরিকল্পনা দলিলের মধ্যবর্তী ও সমাপ্ত মূল্যায়ন করে প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।
সূত্র জানায়, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়ায় দেশের মূল্যস্ফীতির লাগাম টানার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হয়েছে পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে পাঁচ দশমিক চার শতাংশ, পাঁচ দশমিক তিন শতাংশ,পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ, চার দশমিক নয় শতাংশ এবং চার দশমিক আট শতাংশ মূল্যস্ফীতি হবে।
পরিকল্পনায় বিনিয়োগের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে মোট জিডিপির ৩৭ দশমিক চার শতাংশ। অর্থবছরভিত্তিক লক্ষ্য হচ্ছে- চলতি ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে জিডিপির ২০ দশমিক আট শতাংশ, ৩৩ দশমিক পাঁচ শতাংশ, ৩৪ দশমিক পাঁচ শতাংশ, ৩৫ দশমিক ছয় শতাংশ, ৩৬ দশমিক দুই শতাংশ এবং ৩৭ দশমিক চার শতাংশ বিনিয়োগ।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More