দর্শনার করোনা চিত্র : ছড়াচ্ছে ছোঁয়াচে ছড়ানোর ভয়

৩১ জন করোনা আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যু ১ : সুস্থ ১৮ চিকিৎসাধীন ১২

দর্শনা অফিস: করোনা ভাইরাস দিনদিন মহামারী আকার ধারণ করছে। গোটা দেশের মতোই দর্শনায় দিনদিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যেন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এরই মধ্যে করোনা উপস্বর্গ নিয়ে দর্শনায় একজনের মৃত্যু হলেও আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে ১৮ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও ১০ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন পৌর কাউন্সিলর অপু ও পেশ ইমাম উসমান। দর্শনা পৌরসভার ২, ৫ ও ৭নং ওয়ার্ড রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে লকডাউন ঘোষণা করা হলেও মানছে না অনেকেই। পুলিশের নিরব ভূমিকায় সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বিরাজ করছে। মানা হচ্ছে না সরকারের স্বাস্থ্যবিধি। করোনা আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও দর্শনা পৌর মেয়র। গত ২৬ মে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ মাহব্বুর রহমান কাজল। একই দিন করোনা টেস্টে পজেটিভ রিপোর্ট আসে দর্শনা মোহাম্মদপুরের রুবেলের। দু’দিন পর দর্শনা থানার কনস্টেবল নারায়নের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট পাওয়া যায়। ওসিসহ দুজন করোনা আক্রান্তের পর দর্শনা থানার প্রায় অর্থশত সদস্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এদের মধ্যে ২য় দফায় ৬ পুলিশ সদস্যের করোনা ভাইরাস পজেটিভ রিপোর্ট আসে। আক্রান্ত ওই ৬ জনের মধ্যে ছিলেন থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই জাকির হোসেন, এসআই শরিফুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, মাহমুদুল হক, পিএসআই সোয়াদ ও কনস্টেবল আলাউদ্দিন। প্রত্যেককেই চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। ৩য় দফায় আরও ৬ পুলিশ সদস্যসহ থানার কাজের বুয়ার করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে। ওই দফায় ৬ পুলিশের মধ্যে ছিলেন দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শেখ মাহবুবুর রহমান, এএসআই মারুফ হাসান, সাইদুর রহমান, মহিউদ্দিন, কনস্টেবল ফরহাদ ও মিজান। ৪র্থ দফায় দর্শনা থানার কনস্টেবল হুমায়ুন ও মামুন করোনায় আক্রান্ত হন। সেই সাথে থানার কাজের বুয়া দর্শনা রিফুজি কলোনীপাড়ার পারুলের মেয়ে পপি ও নাতনি ৪ বছরের শিশু সুশমিতার নমুনা পরীক্ষা করা হলে তাদের দেহে করোনা উপস্থিতি পাওয়া যায়। এদিকে দর্শনা বাসস্ট্যান্ড এলাকার দিলরুবা নামের এক নারী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও শেষ অবধি তার হদিস মেলেনি। এছাড়া করোনা উপস্বর্গ নিয়ে মারা যান দর্শনা বাসস্ট্যান্ডের সোলায়মান হক (৫৮)। সোলায়মানের পরিবারের সদস্যদের নমুনা পরীক্ষা করা হলে স্ত্রী বিলকিছ ও ছেলে কেরুজ নিরাপত্তা কর্মী জসিমের পজেটিভ রিপোট আসে। পরপরই পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নমুনা পরীক্ষা করা হলে সোলায়মানের ছোট ছেলে রাসেলের স্ত্রী ফাহিমা সাদিয়া (২৬) ও ৭ বছর বয়সী ছেলে রেদওয়ান আহমেদ তাছিমের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। সেই সাথে দর্শনা বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদের পেশ ইমাম উসমান গনির নমুনা পরীক্ষায়ও পজেটিভ রিপোর্ট পাওয়া যায়। এদিকে গত বৃহস্পতিবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন দর্শনা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাহিকুল আলম অপু। অপু দর্শনা বাসস্ট্যান্ড গোরস্থানপাড়ার খোরশেদ আলমের ছেলে। সবশেষ গতকাল সোমবার করোনা আক্রান্তের তালিকায় যুক্ত হলেন দর্শনা মোবারকপাড়ার আবুল কাশেম মাস্টারের ছেলে রাজন। দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু হেনা জামাল শুভ জানান, দর্শনায় সর্বমোট ৩১ জন করোনা আক্রান্তের মধ্যে মারা গেছেন সোলায়মান হক। ঝিনাইদহ হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন দর্শনা থানার ওসি মাহব্বুর রহমান কাজল, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন দর্শনা থানার ওসি তদন্ত শেখ মাহবুবুর রহমান আরও ১৭ জন। ফলে আক্রান্তদের মধ্যে ১৮ জন ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়েছেন। আক্রান্ত ১২ জনের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে দর্শনা থানার ২ পুলিশ সদস্য, থানার রাধুনি পারুলসহ তার পরিবারের ৩ জন, মৃত সোলায়মানের ছেলে জসিমসহ ওই পরিবারের ৪ জন ও মোবারকপাড়ার রাজন। বাড়িতেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন পৌর কাউন্সিলর সাহিকুল আলম অপু ও পেশ ইমাম উসমান গণি।
এলাকাবাসীর অভিযোগে জানা গেছে, ২৬ মে দর্শনা থানায় প্রথম করোনা আক্রান্ত হলেও ১৯ জুনে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের বৈঠকে দর্শনা পৌরসভার ৫ ও ৭নং ওয়ার্ডকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ওই দুটি ওয়ার্ডের থানাপাড়া ও রিফুজিকলোনী এলাকাকে লকডাউন ঘোষণা করা হলেও ২/৩ দিন তা পরিপূর্ণ বলবৎ ছিলো। পুলিশি কঠোর অবস্থান, ৭টি পয়েন্টে পুলিশি চৌকি, মহল্লার প্রবেশ দ্বারে বাঁশের ব্যারিকেট, লকডাউন সংবলিত ব্যানার ও ম্যাপের দৃশ্য ছিলো চোখে পড়ার মতো। ২/৩ দিন যেখানকার পানি সেখানেই গড়িয়েছে। পুলিশি চৌকি ও ভূমিকা যেমন দেখা মেলেনি, তেমনিভাবে বাঁশের ব্যারিকেট ও ব্যানার কোথায় হারিয়েছে তা যেন খুজে পাওয়া মুশকিল। তবে ২/১টি পয়েন্টে বাঁশের ব্যারিকেট থাকলেও তা সরিয়ে অবাধে যাতায়াত করছেন পথচারীরা। রাতারাতি দর্শনা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২৪ জুন পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে বাসস্ট্যান্ডপাড়াকে লকডাউনের আওতায় আনা হয়। সেখানেও পুলিশের ভূমিকা দেখা গেছে ২/১ দিন। দর্শনা পৌরসভার বৈঠকে করোনা আক্রান্ত পরিবারগুলোকে সহায়তা ও করোনা প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়। সে মোতাবেক পৌরসভা থেকে করোনা আক্রান্ত পরিবারগুলোকে সহায়তা চলমান রেখেছে। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর, জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার, পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী মুনছুর বাবু, উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান, পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান, জেলা বিএনপির অন্যতম নেতা হাজি মোখলেসুর রহমান তরফদার টিপু করোনা আক্রান্ত পরিবারের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। সচেতন মহল অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন, দর্শনাবাসী কোনোভাবেই সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে না। সরকারি বিধি নিষেধ অমান্য করে স্বাভাবিক নিয়মেই অবাধে যেমন খোলা থাকছে দোকানপাট, তেমনি মানুষের চলাচলেও নেই নিরাপদ দূরত্ব। ফলে যতোই দিন যাচ্ছে, ততোই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এমনভাবে চলতে থাকলে দর্শনায় করোনা ভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করতে পারে। তাই নিজেদের স্বার্থে হলেও এখনি প্রশাসনকে কঠোর অবস্থান গ্রহণে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে জোর দাবি তুলেছে দর্শনাবাসী।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More