আমি কী পরব, কীভাবে বাঁচব সেটা বলার অধিকার কারো নেই: বাঁধন

অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার মতামত প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে তিনি ব্যক্তিজীবনের অনেক অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন। এবার তিনি পোশাক পরার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে নিজের অতীত, পোশাক নির্বাচন এবং স্বাধীনতা নিয়ে অকপটে লিখেছেন তিনি।

শুরুতে বাঁধন লিখেছেন, ‘একটা সময় আমিও একটি সুন্দর-সাধারণ মেয়ে ছিলাম, সে সময় এমন পোশাক-আশাক পরতাম যা সমাজ প্রত্যাশা করত। বাবা-মায়ের পছন্দের পোশাক পরতাম, যেমনটা সমাজ চায়—সেভাবেই চলতাম। কখনো জিন্স পরিনি, সমাজের চাপেই। কারণ জিন্স নাকি খারাপ মেয়েরা পরত!’

এরপর বাঁধন উল্লেখ করেন, ‘আমি ঠিক করেছিলাম, আমি হবো সমাজের চোখে’ পারফেক্ট মেয়ে—যেমনটা সমাজ চায়, তেমনই নিজেকে গড়ে তুলব। কিন্তু এরপর আমার পুরো পৃথিবীটাই ভেঙে পড়ল। একটা ট্রম্যাটিক সংসার জীবন থেকে বাঁচতে আমি বিচ্ছেদ চাই; যা আমাকে রিহ্যাব অব্ধি নিয়ে যায়। এরপরই আমি লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় অংশ নিই, ২০০৬ সালে। আর তার মাধ্যমেই আমি নিজেকে খুঁজে পাই। তবে শুধু নারী হিসেবেই নয়, একজন মানুষ হিসেবে।’

বাঁধন লেখেন, ‘তবুও, তখনও আমার ভেতরে ছিল সেই ইচ্ছা। সমাজ যেন আমাকে সেরা নারী হিসেবে মেনে নেয়, আমাকে দেখে সম্মান করে। তবে পার্থক্য ছিল— আমি জিন্স পরতাম। এমন পোশাক পরতাম, যেখানে আমার ত্বক দেখা যেত। এমন পোশাক, যা ভালো মেয়েদের পরা উচিত নয়; যা মনে করতো সমাজ।’

বাঁধন আরও লেখেন ‘আমার দ্বিতীয় বিচ্ছেদের পর নিজেকে শুধু ব্যর্থই মনে হয়নি- সমাজ আমাকে চিহ্নিত করতে শুরু করে একজন খারাপ নারী হিসেবে। আর সেটাই আমাকে ভেঙে দেয়। তখন থেকে নিজের অধিকার দাবি করতে শুরু করি, নিজের স্বাধীনতার জন্য লড়তে শুরু করি।’

এক ঘটনার উদাহরণ দিয়ে বাঁধন লেখেন, ‘একদিন এক বন্ধু ফোন করে বলল, “তুমি কত সুন্দর করে কথা বলো, এত ভালো কাজ করছ— কিন্তু তোমার আরেকটু ঢেকে পোশাক পরা উচিত।” আমি শুধু হেসে ফেললাম।’

বাঁধন লেখেন, ‘একবার আমি একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে গিয়েছিলাম স্লিভলেস ব্লাউজ পরে। চ্যানেলের টিম তখন আমাকে বলেছিল, কাঁধ ঢাকতে যেন চুলটা সামনে রেখে দিই। তারা আমকে লেকচার ই দিল। বছরের পর বছর ধরে আমি অসংখ্য পরামর্শ শুনে এসেছি এমন, একজন মা হিসেবে, একজন ‘বুদ্ধিমতী নারী’ হিসেবে, কিংবা একজন রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে হিসেবে—আমার কী পরা উচিত, কীভাবে পরা উচিত।’

খানিকটা জিদ করে বাঁধন লিখলেন, ‘কিন্তু জানেন কী? আমি আর এসব একটুও পরোয়া করি না। আমি এখন স্বাধীন। আমার কী পরা উচিত, কী বলা উচিত, কী ভাবা উচিত, বা কীভাবে জীবন কাটানো উচিত—এটা কেউ আমাকে বলে দিতে পারে না। এটা শুধুই আমার একার সিদ্ধান্ত।’

সবশেষ বাঁধন লেখেন, ‘এই ধরনের বিচার-বিশ্লেষণ আমাকে খুব কষ্ট দেয়—আর ঘৃণাও লাগে। কিন্তু এটাই আমাদের, নারীদের, প্রতিদিনের বাস্তবতা।’

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More