চিকিৎসককে বিয়ে করে অভিনয় ছেড়েছিলেন প্রথম ‘লেডি সুপারস্টার’

বিনোদন জগতের জনপ্রিয় অভিনেত্রী বৈজয়ন্তীমালা সিনেমার ইতিহাসে উজ্জ্বল এক নক্ষত্র। সৌন্দর্য, নাচ আর অভিনয়—সব মিলিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক অনন্য। যেমনটি হয়েছে ভাগ্যশ্রী বা নীতু কাপুরের ক্ষেত্রে, তেমনি বৈজয়ন্তীমালাও বিয়ের পর আলো ঝলমলে পর্দা ছেড়ে সংসারে মন দেন। অথচ তার ক্যারিয়ার তখন চূড়ান্ত সাফল্যের শিখরে ছিল।

বৈজয়ন্তীমালার নাম শুধু একজন নায়িকার সাফল্যের গল্প নয়, তার উত্তরাধিকার হয়ে রয়ে গেছে ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে। তিনি প্রমাণ করেছিলেন দক্ষিণী থেকে উঠে এসেও বলিউডে সমান রাজত্ব করা সম্ভব। নাচের অনন্য প্রতিভা, রূপ-সৌন্দর্য আর অভিনয়গুণে তিনি হয়ে ওঠেন তিন ইন্ডাস্ট্রির সম্রাজ্ঞী। একসঙ্গে হিন্দি, তামিল ও তেলেগু—তিনটি ইন্ডাস্ট্রিতেই তিনি দাপটের সঙ্গে শাসন করছিলেন। তাই তাকে বলা হয়—চলচ্চিত্রের প্রথম প্রকৃত ‘লেডি সুপারস্টার’।

বিয়ের কারণে আলো ঝলমলে জগৎ থেকে বিদায় নিলেও বৈজয়ন্তীমালার ঝলক এখনো ম্লান হয়নি। ভারতীয় সিনেমার ভক্তদের কাছে তিনি আজও এক কিংবদন্তি, যার মতো আর কেউ আসেনি।

ঘটনা ১৯৪০ সাল। ভ্যাটিকান সিটিতে এক ঐতিহাসিক দিন ছিল। সাত বছরের এক ভারতীয় কন্যা পোপ পায়াস দ্বাদশের সামনে পরিবেশন করলেন শাস্ত্রীয় নৃত্য। মেয়েটির নাম বৈজয়ন্তীমালা। পাশে বসে তার মা বিস্ময়ে দেখছিলেন কন্যার প্রতিভার ঝলকানি। গুরু ভাঝুভুর রামাইয়া পিল্লাইয়ের কাছে ভরতনাট্যম আর মানাক্কাল শিবরাজ আয়ারের কাছে কর্নাটক সংগীতে তালিম নেওয়া এ কিশোরী মাত্র ১৩ বছর বয়সে করলেন তার আরঙ্গেত্রম—শাস্ত্রীয় নাচের আনুষ্ঠানিক সূচনা।

১৯৪৯ সালে পরিচালক এমভি রমন চেন্নাইয়ের গোকলে হলে বৈজয়ন্তীমালার নাচ দেখে মুগ্ধ হন। খুঁজছিলেন নতুন মুখ—এভিএম প্রোডাকশনের ‘ভাজকাই’-এর জন্য। মাত্র ১৩ বছরের কিশোরী বৈজয়ন্তীমালা পেলেন জীবনের প্রথম সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ। ‘ভাজকাই’ ছিল তামিল সিনেমার বিশাল সাফল্য। পরে এর হিন্দি সংস্করণ বাহার ও তেলেগু সংস্করণ মুক্তি পায়। সবই বক্স অফিসে রেকর্ড গড়ে।

আর সেখান থেকেই শুরু হয় এক অপ্রতিরোধ্য যাত্রা বৈজয়ন্তীমালার। তিন ইন্ডাস্ট্রির একচ্ছত্র নায়িকা হয়ে উঠলেন তিনি। ‘নাগিন’, ‘দেবদাস’, ‘নয়া দৌড়’, ‘সাধনা’, ‘আম্রপালি’—একের পর এক হিট ছবি তাকে শীর্ষে পৌঁছে দেয়। শুধু বলিউডে নয়, তামিল ও তেলেগুতেও অভিনেত্রী ছিলেন সমান জনপ্রিয়। একসঙ্গে তিন ইন্ডাস্ট্রির দর্শককে মুগ্ধ করার ক্ষমতা খুব কম অভিনেত্রীর ছিল। তিনি হয়ে ওঠেন দক্ষিণী নায়িকাদের পথপ্রদর্শক। হেমা মালিনী, জয়াপ্রদা ও শ্রীদেবীর মতো অনেকেই তার হাত ধরে হিন্দি সিনেমায় জায়গা করে নিয়েছিলেন।

সেই বৈজয়ন্তীমালার আলো-আঁধারির ক্যারিয়ারে সাফল্যের পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত জীবনও ছিল আলোচনায়। অভিনেতা দিলীপ কুমারের সঙ্গে তার জুটিকে বলা হতো ব্লকবাস্টার জুটি। ‘গঙ্গা যমুনা’র শুটিংয়ে প্রতিটি দৃশ্যে বৈজয়ন্তীমালার পরনে কোন রঙের শাড়ি হবে, তা নাকি ঠিক করতেন নিজে দিলীপ কুমার।

আবার ষাটের দশকে ‘সরগম’-এর শুটিংয়ে রাজকাপুরের সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে পড়ে। শোনা যায়, তাদের বিয়ের সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছিল; কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই সম্পর্ক বাস্তবে রূপ নেয়নি। এরপর চিকিৎসা নিতে গিয়ে পরিচয় ঘটে রাজকাপুর পরিবারের চিকিৎসক চমনলাল বালির সঙ্গে। চিকিৎসা থেকেই শুরু, এরপর ধীরে ধীরে প্রেমে পরিণত হয় তাদের সম্পর্ক। বিষয়টি এতটাই গভীরে পৌঁছে যায় যে, বিবাহিত চমনলাল বালি প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেন এবং বৈজয়ন্তীমালাকে বিয়ে করেন।

অভিনেত্রী সংসারকে বেছে নিয়েছেন। ১৯৬৮ সালে বিয়ের পর ধীরে ধীরে অভিনয় জগৎ থেকে সরে আসেন বৈজয়ন্তীমালা। তবে বিয়ের আগে চুক্তিবদ্ধ হওয়া কিছু ছবি—‘পেয়ার হি পেয়ার’, ‘প্রিন্স’, ‘গাঁওয়ার’ ১৯৭০ সাল পর্যন্ত মুক্তি পায়। এরপর আর নতুন কোনো সিনেমায় দেখা যায়নি তাকে। রুপালি জগৎ ছেড়ে তিনি মন দেন সংসার আর ব্যক্তিগত জীবনে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More