ঢালিউডে ছ’মাসে ২২ সিনেমা, কতটুকু ফুটলো আশার ফুল?

চলতি বছরের ছয় মাস পার হয়েছে। এর মধ্যে গত দুই ঈদে ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রিতে মুক্তি পেয়েছে ১২ সিনেমা। আর বাকি পাঁচ মাসে মুক্তি পেয়েছে ১০টি। সেগুলোও খুব একটা দর্শক টানতে পারেনি, অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়ে। অথচ, ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন বছর শুরু হয়েছিল নতুন এক স্বপ্ন নিয়ে। ২০২৫-এর শুরুতেও ঢাকাই সিনেমার যাত্রাটা হয়তো অতীতের থেকে কিছুটা ভালো হবে এটাই প্রত্যাশা করেছিল সিনেপ্রেমীরা। কতটা প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছে এ ছয় মাসে ঢাকাই সিনেমা? ২০২৪ সালে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ৫২টি সিনেমা। চলতি বছরের গত ছয় মাসে মুক্তি পেয়েছে ২২টি। সে হিসাবে সিনেমা মুক্তির সংখ্যায় এখন পর্যন্ত সমান রয়েছে। হয়তো বছর শেষে পূর্ণাঙ্গ হিসাব মেলানো সম্ভব। তবে ছয় মাসে কয়টি সিনেমা আলোচিত ছিল আর কয়টি ব্যবসাসফল হয়েছে সে হিসাবটি একটু খতিয়ে দেখা যাক। এ ছাড়া মুখ থুবড়ে পড়া সিনেমার তালিকার দিকেও একটু নজর দেওয়া প্রয়োজন রয়েছে।

জানুয়ারিতে মুক্তি পায় চার সিনেমা

চলতি বছর সিনেমার হালখাতা খুলেছিল শিশির সরদার ও এলিনা শাম্মি অভিনীত ‘মধ্যবিত্ত’ সিনেমাটি। এটি পরিচালনা করেছেন তানভীর হাসান। বছরের শুরুতেই ব্যর্থতার ইতিহাস লিখিয়েছেন তারা। পরের সপ্তাহে মুক্তি পায় অনন্য মামুন পরিচালিত ‘মেকাপ’ ও আব্দুল হান্নানের পরিচালনায় ‘কিশোর গ্যাং’। দুটি সিনেমাই ব্যর্থতার খাতায় নাম লেখায়। শেষ সপ্তাহে মুক্তি পায় অমিতাভ রেজা চৌধুরীর ‘রিকশা গার্ল’। এতে অভিনয় করেছেন নভেরা আহমেদ। ব্যবসায়িকভাবে সফল না হলেও, এটি অভিনয় ও নির্মাণে প্রশংসিত হয়েছে।

ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পায় চার সিনেমা

বছরের দ্বিতীয় মাসে নাসির উদ্দিন খান নিয়ে আসেন ‘বলি’ নামে একটি সিনেমা। একই সপ্তাহে মুক্তি পায় সাইমন সাদিক অভিনীত সিনেমা ‘দায়মুক্তি’। দুটি সিনেমার ভাগ্যেই জুটে ফ্লপ তকমা। এদিকে ‘বলি’ কিছুটা আলোচনায় এসেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিয়ে। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষ্যে পর্দায় হাজির হয়েছিলেন রাফিয়াথ রশীদ মিথিলা ও এফ এস নাঈম ‘জলে জ্বলে তারা’ নিয়ে। সিনেমাটি সেভাবে সুবিধা করতে না পারলেও কিছুদিন আলোচনায় ছিল। এদিকে রাজ রিপা ও কায়েস আরজু অভিনীয় ‘ময়না’ পড়েছে বিপাকে। দর্শক আগ্রহ না থাকায় সিনেমাটি মুখ থুবড়ে পড়েছে।

মার্চ মাসে মুক্তি পায় ছয় সিনেমা

মার্চে এসে সিনেমা মুক্তির হিড়িক পড়ে। ঈদ উপলক্ষ্যে মুক্তি পায় একাধিক সিনেমা। এগুলোর মধ্যে শাকিব খান ও ইধিকা পাল অভিনীত সিনেমা ‘বরবাদ’ আলোচনায় ছিল। ব্যবসায়িকভাবেও সফল হয়েছে বলে প্রযোজনা সংশ্লিষ্টদের দাবি। নির্মাতা মেহেদী হাসান হৃদয়ের দাবি, সিনেমাটির বাজেট ছিল ১৫ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, ৫০ দিনে ৭৫ কোটি টাকা ব্যবসা করেছে সিনেমাটি। এরপর আলোচনায় আসে আফরান নিশো ও তমা মির্জা অভিনীত সিনেমা ‘দাগি’। শিহাব শাহীনের পরিচালনা দ্বিতীয়বার জুটি বাঁধেন তারা এবং প্রশংসিতও হন।

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, সিনেমাটির সর্বমোট গ্রস সেল ১০ কোটি টাকা। আলোচিত সিনেমার আরও একটি হচ্ছে ‘জংলি’। এতে অভিনয় করেন সিয়াম আহমেদ ও শবনম বুবলী। আরও রয়েছেন প্রার্থনা ফারদিন দীঘি। সিনেমাসংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যবসা করেছে সিনেমাটি। ঈদের আলোচিত সিনেমার মধ্যে অন্যটি হচ্ছে মোশাররফ করিম অভিনীত ‘চক্কর ৩০২’। এ ছাড়া ঈদের সিনেমার অন্য দুটি সিনেমা আব্দুন নূর সজল ও নুসরাত ফারিয়া অভিনীত ‘জ্বীন-৩’ ও শাকিব খান অভিনীত ‘অন্তরাত্মা’ ফ্লপ তকমা গায়ে জড়ায়। এরপর এপ্রিল মাসে কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি।

মে মাসে মুক্তি পায় দুই সিনেমা

এ মাসেই জয়া আহসান অভিনীত সিনেমা ‘জয়া আর শারমিন’ মুক্তি পায়। করোনাকালীন গল্প নিয়ে নির্মিত এ সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। একই সপ্তাহে নীরবে মুক্তি পায় ‘আন্তুঃনগর’ নামে আরও একটি সিনেমা। প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই বে-নামি শিল্পীদের নিয়ে নির্মিত এ সিনেমাটি মুখ থুবড়ে পড়ে।

জুন মাসে মুক্তি পায় ছয় সিনেমা

বছরের ষষ্ঠ মাসে ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে মুক্তি পায় ছয়টি সিনেমা। আলোচনায় ছিল ঈদকেন্দ্রিক নায়ক শাকিব খান ও সাবিলা নূর অভিনীত সিনেমা ‘তাণ্ডব’। ছিল জয়ার উপস্থিতি। তবে আলোচনার পাশাপাশি সমালোচিতও হয় সিনেমাটি। এদিকে ‘উৎসব’ সিনেমাটি মুক্তির চতুর্থ সপ্তাহে এসে ‘তাণ্ডব’কে পাশ কাটিয়ে দর্শক চাহিদা ও গ্রস সেলে এগিয়ে রয়েছে। সিনেমাটি বর্তমানে শীর্ষস্থানে রয়েছে। এতে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান, জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরী, সুনেরাহ বিনতে কামাল, সাদিয়া আয়মান প্রমুখ। এখন মাল্টিপ্লেক্সে এ সিনেমাটির সবচেয়ে বেশি হাউজফুল শো যাচ্ছে। এদিকে মুক্তির দিন থেকে দুই সপ্তাহ আলোচনায় ছিল তাসনিয়া ফারিণ ও শরিফুল রাজ অভিনীত ‘ইনসাফ’ সিনেমাটি।

তবে সেটি ব্যবসায়িকভাবে সফল নয় এখনো। এদিকে দর্শক চাহিদা কমে যাওয়ায় কমেছে এর শো সংখ্যাও। তবে দিন যত গড়াচ্ছে তত আলোচনায় আসছে আজমেরী হক বাঁধন অভিনীত ‘এশা মার্ডার : কর্মফল’ সিনেমাটি। মুক্তির পর থেকে এটি নিয়ে তেমন আলোচনা ছিল না। দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে এটির প্রচারণা জোরদার হওয়াতে দর্শক আগ্রহ বাড়ে। তবে আলোচনা তৈরি করতে পারলেও, ব্যবসায়িকভাবে এটিও সফল নয়। অন্যদিকে আরেফিন শুভ ও মন্দিরা চক্রবর্তী অভিনীত ‘নীলচক্র’ এবং আদর আজাদ ও পূজা চেরীর ‘টগর’ সিনেমা দুটি প্রেক্ষাগৃহে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More