আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি পুরোদমে এগিয়ে নিচ্ছে ইসি

স্টাফ রিপোর্টার: সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক উপযুক্ত সময়ে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে সার্বিক প্রস্তুতির কাজ পুরোদমে এগিয়ে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ এ কথা জানান। তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচনী আইনের কিছু সংশোধনী প্রস্তুত করা হচ্ছে। সেসব সংশোধনীর বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাতে নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করা যায়। আমরা আমাদের প্রস্তুতি সেভাবে এগিয়ে নিচ্ছি। দেশের জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সরকারের পক্ষ থেকে যখনই সিদ্ধান্ত আসবে, তখনই নির্বাচন কমিশন শিডিউল ঘোষণা করবে। আগামী জাতীয় নির্বাচন করার ক্ষেত্রে ইসির সামনে কি কি চ্যালেঞ্জ আছে, এ বিষয়ে কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, নির্বাচন সম্পন্ন করা একটি কঠিন কাজ। কিন্তু অসাধ্য নয়। আমাদের সতর্কতার সঙ্গে এই কাজগুলো করতে হবে। সে দিক থেকে নির্বাচনটা ভালোভাবে সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিলেও গত ১৩ জুন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালে রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহে দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে। লন্ডন বৈঠকের পর নির্বাচন কমিশন নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে ২০২৬ সালের এপ্রিল কিংবা তার আগে নির্বাচনের ডামাডোল বাজিয়ে তুলতে প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। সেজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিমূলক কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য কমিশন তার কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে। এদিকে, গত ১৫ জুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নির্বাচনের সময়সূচি যখনই হোক না কেন, ইসিকে প্রস্তুত থাকতে হবে। আমরা এখন আমাদের প্রস্তুতির দিকে মনোনিবেশ করছি। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কমিশনের নির্দেশনার আলোকে ভোটার তালিকার হালনাগাদ, নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ, ভোটকেন্দ্র সংস্কার ও মেরামত, ভোটের সরঞ্জামাদির প্রয়োজনীয় কেনাকাটা, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, বিভিন্ন নির্বাচনি আইন ও বিধিমালা সংশোধন, নির্বাচনি দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের কার্যক্রম এখন পুরোদমে চলছে। এছাড়া কমিশনের কর্মপরিকল্পনায় নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজের মধ্যে রয়েছে-অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ, আরপিও-সহ বিভিন্ন আইন ও বিধিমালা সংশোধন, নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকার ম্যানুয়েল ও নির্দেশিকা সংশোধন। এ প্রসঙ্গে ইসি সূত্র জানান, তারা নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্তের আলোকে গৃহীত প্রস্তাবনা এবং সুপারিশের অপেক্ষা করছেন।
এদিকে গতকাল শনিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ যথাসময়ে ঘোষণা করা হবে। নির্ধারিত সময়েই নির্বাচনের তফশিল জানানো হবে। তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে আমাদের প্রতিনিয়ত যোগাযোগ হচ্ছে বিষয়টা এমন নয়। আবার এমনও নয় যে একদমই হচ্ছে না। নির্বাচনের তফসিলও নির্ধারিত সময়ে ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, আমরা যেটিকে কর্মপরিকল্পনা বলছি, অনেকেই সেটিকে রোডম্যাপ বলে থাকেন। এটি তৈরির কাজ আসলে আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই শুরু হয়েছে। এতে নির্ধারণ করা হয়েছে কোন কাজ কখন শুরু হবে এবং কখন শেষ হবে। গত বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০২৫ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। বিধিমালায় আসন্ন সংসদ নির্বাচনে পোস্টারের ব্যবহার বন্ধ, বিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা জরিমানা ও প্রচার প্রচারণায় পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহারের নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানিয়েছেন, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের কাজ চলতি সপ্তাহের শেষ নাগাদ সম্পন্ন হতে পারে বলে। ৭৬টি সংসদীয় আসনে সীমানা নির্ধারণে ইসিতে ৬৩৮ আবেদন জমা পড়েছে। ইসির কর্মকর্তারা জানান, ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ভোটার তালিকা প্রস্তুত করার সময় রয়েছে কমিশনের হাতে। তারা আশা করছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভোটার তালিকা প্রস্তুতের কাজ শেষ করতে পারবেন। কমিশন সূত্র জানান, নির্বাচন কেন্দ্রিক আয়োজনে অনেক কিছুরই প্রয়োজন হয়। যে-সব প্রয়োজনীয় কেনাকাটা আছে, এরমধ্যে ভোটের জন্য প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে স্বচ্ছ ব্যালটবাক্স ও ঢাকনা, ছবিসহ ভোটার তালিকা, ব্যালট পেপার, অমোচনীয় কালি, কয়েক ধরনের সিল, গালা, স্ট্যাম্প প্যাড, কালি, থলে, ১৭ ধরনের খাম, কাগজ, কলম, ছুরি, মোমবাতি, দেশলাই অন্যতম। ব্যালট পেপারের কাগজ সাধারণত নেয়া হয় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী পেপার মিল থেকে। আর প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর ব্যালট পেপার ছাপা হয় সরকারি ছাপাখানায়। এর বাইরে অন্য সামগ্রীর বেশ কিছু কিনতে হয় উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে।
জানা গেছে, ভোটের জন্য যে-সব মালামাল ক্রয় করতে হবে তার টেন্ডার শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া একেবারে শেষের পথে। আগামী জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে এ বিষয়ে ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া সম্ভব হবে বলে কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ আছে, যেমন ভোটার কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। পর্যবেক্ষক নীতিমালা নিয়ে কাজ অনেকটাই এগিয়ে গেছে। নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের আবেদনের সময়সীমা ২২ জুন শেষ হবে।
ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, গত ১০ মার্চ নির্বাচন কমিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে ২০ এপ্রিলের মধ্যে নিবন্ধনের জন্য নতুন রাজনৈতিক দলগুলির কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করে। ওই সময়সীমার মধ্যে মোট ৬৫টি দল আবেদন করেছিল। ইসি পরে ২২ জুন পর্যন্ত সময়সীমা বৃদ্ধি করেছে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, আমাদের ভোটার তালিকার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বৃহস্পতিবার কমিশন সভায় রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণ বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। এরপর আমরা সংসদীয় আসনে সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে কাজ করছি। এটাও বেশিদিন লাগবে না। তিনি বলেন, নির্বাচন কেন্দ্রিক আমাদের যে-সব মালামাল ক্রয় করতে হবে তারও টেন্ডার শেষ হয়েছে। মূল্যায়ন প্রক্রিয়াও একেবারে শেষের পথে। আমরা আশা করছি, এই মাসের মধ্যে না পারলেও সামনের মাসের প্রথম সপ্তাহে এই ওয়ার্ক অর্ডার দিতে পারব। তিনি বলেন, আমাদের অন্যান্য যে আনুষঙ্গিক কাজ আছে, যেমন-ভোট কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতেছি। এরপর পর্যবেক্ষকের যে নীতিমালা রয়েছে, এই নীতিমালা

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More