আলমডাঙ্গায় শিক্ষকের ঘরের আসবাবপত্র পুড়ে যাচ্ছে রহস্যজনক আগুনে ঢাকা থেকে হুজুর এসে করছেন দিনভর ঝাড়ফুঁক
শরিফুল ইসলাম রোকন: আলমডাঙ্গায় স্কুল শিক্ষকের বাড়ির ঘটনাটি হরর সিনেমাকেও হার মানাবে। স্কুল শিক্ষকের বাড়িতে রহস্যজনভাবে ঘরের আসবাবপত্র আগুনে পুড়ে যাচ্ছে। ঘটনাটি ঘটছে আলমডাঙ্গা থানাপাড়ার স্কুল শিক্ষক আক্তারুজ্জামানের বাড়িতে। কিভাবে আগুনের সূত্রপাত হচ্ছে কেই বলতে পারছে না। স্কুলে শিক্ষকের প্রতিবেশিরা অলৌকিক ঘটনা বলে অনেকেই দাবি করছেন। জানা গেছে, বেশ কয়েক বছর আগে আলমডাঙ্গা থানাপাড়ায় হারদী মীর শামসুদ্দিন আহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আক্তারুজ্জামান ৩তলা বাড়ি নির্মাণ করেন। সেখানে তিনি বসবাস করছেন দুই ছেলে, স্ত্রী ও শাশুড়িকে নিয়ে। প্রায় ৩ মাস ধরে তার বাড়িতে ঘটছে রহস্যজনক আগুনের ঘটনা। গত রোববার সন্ধ্যায় শিক্ষক আক্তারুজ্জামানের বাড়িতে হঠাৎ যে কোনো জিনিসে আগুন ধরে যাওয়া বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। রাতেই আলমডাঙ্গা থানার ওসি মাসুদুর রহমান পিপিএম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। স্কুল শিক্ষকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। প্রায় ২ মাস ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। ঘরে বিদ্যুৎ লাইনের সকল লাইনের তার খুলে ফেলেছেন। তারপরও আগুন ধরা বন্ধ হয়নি। তার ঘরের প্লাস্টিকের আসবাবপত্র, খাটের জাজিম, পরনের কাপড়, বই-খাতা, রান্নাঘর প্লাস্টিকের জিনিসপত্র, বাথরুম প্লাস্টিকের শাওয়ার, হ্যাঙ্গার, ও পানির ট্যাংকি আগুনে পুড়ে গেছে। স্কুল শিক্ষ আক্তারুজ্জামান জানান, প্রায় ৩ মাস আগে পরপর দুই দিন বিদ্যুৎ লাইনের মেইন তার মিটার থেকে কে বা কারা কেটে নিয়ে যায়। তার ঘরে কিছু বড় বড় বড়শি পায়। তার কয়েকদিন পর আমার ঘরের, মোটরসাইকেলের, আলমারির চাবি গায়েব হয়ে যায়। বৈদ্যুতিক লাইট জ¦ালাতে গেলে সুইজ পুড়ে গলে যাচ্ছিলো। তিনি বিদ্যুৎ অফিস থেকে লোক নিয়ে আসে। তারা জানায় লাইনের কোনো সমস্যা নেই। পরে তিনি বাধ্য হয়ে বাড়ি থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। কয়েকদিন আগে সন্ধ্যায় তিনি দেখতে পান তার দরজার পর্দায় আগুন জ¦লছে। দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলেন। তারপর তার শ^াশুড়ি নামাজ পড়ার সময় কাপড়ের আচলে আগুন ধরে যায়। তার ঘরের প্লাস্টিকের সবকিছু একে একে পুড়ে গেছে। বাড়ির ছাদে থাকা পানির ট্যাংকিও পুড়ে গেছে। বাড়ির সকল বাথ রুমের প্লাস্টিকের শাওয়ার পুড়ে গেছে। ঘরের অনেক আসবাবপত্র কাপড়, খাটের জাজিম পুড়ে গেছে। তিনি তার পরিবার নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন। রাসায়নিক কোনো পদার্থের কারণে এটা হচ্ছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, রাসায়নিক কোন পদার্থ দিয়ে আগুন ধরাতে হলে কাউকে না কাউকে সে পদার্থ রাখতে হবে। স্কুল শিক্ষকের এক প্রতিবেশি বলেন, ঘটনা শুনতে পেয়ে আমরা শিক্ষকের বাড়ি গিয়েছিলাম। আমাদের সামনে প্লাস্টিকের র্যাকে হঠাৎ আগুন জ¦লে উঠলো। তার সেটা নিভাতেই বাড়ির ছাদের ট্যাংকির মুখে আগুন জ¦লে উঠে। কোন পদার্থ দিয়ে আগুন দিতে হলে তো কাউকে না কাউকে আসতে হবে। শিক্ষক আক্তারুজ্জামানের মেজো ভাই কামরুজ্জামান পান্না জানান, তার ভাই আক্তারুজ্জামানের বাড়িতে বেশ কিছুদিন ধরে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। শিক্ষক আক্তারুজ্জামানের বাড়িতে নেই বিদ্যুৎ লাইন। অন্ধকারেই গত ২ মাস কাটাচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে বাড়ির আসবাবপত্রে হঠাৎ করেই আগুন ধরে যাচ্ছে। এক জায়গার আগুন নেভানোর পর পরই অন্য জায়গায় আগুন ধরছে। জামা-কাপড়, খাটের জাজিন, টেবিল, চেয়ার, আলমারিসহ বাসার সবকিছুই আগুনে পুড়ে গেছে। আগুনে পুড়া জিসিনপত্র বাইরে ফেলে দেওয়ার পরও সেগুলো আবার এমনি এমনিই বাড়ির ভেতরে চলে আসছে। আবার আগুন ধরে পুড়ে যাচ্ছে। গতকাল সোমবার সকাল থেকে ঢাকা থেকে আসা একজন মুফতি বাড়িতে কুরআনের মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আলমডাঙ্গা থানার ওসি মাসুদুর রহমান (পিপিএম) বলেন, স্কুল শিক্ষকের বাড়িতে হঠাৎ আগুন লেগে জিনিসপত্র পুড়ে যাওয়ার সংবাদ পেয়ে অফিসার ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। ঘটনাস্থুল পরির্দশন করে অলৌকিক কোন কিছু মনে হয়নি। প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে জানা যায়, কোন রাসায়নিক পদার্থের কারণে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। সোমবার সকাল থেকে বাড়িতে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। ঢাকা থেকে একজন হুজুর (মুফতি) শিক্ষক আক্তারুজ্জামানের বাড়িতে এসে কোরআন তেলওয়াতের মাধ্যমে তদবির করছিলেন। শেষ এ সংবাদ লেখাবদি ঢাকার মুফতি ওই বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.