ইতালির স্বপ্ন দেখিয়ে লিবিয়ায় নিয়ে আটকে নির্মম নির্যাতন আলমডাঙ্গা খেজুরতলার টকবগে যুবক প্লাবনের মৃত্যু
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: নির্মম এক পরিণতির মুখোমুখি হয়েছে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খেজুরতলা গ্রামের এক তরতাজা যুবক প্লাবন। ইতালিতে ভালো ভবিষ্যতের আশায় বাড়ির সবটুকু সম্বল বিক্রি করে দিয়ে দালালের হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল জুনায়েদ হাসান প্লাবনকে। কিন্তু সেই স্বপ্নপথ রক্তাক্ত দুঃস্বপ্ন হয়ে ফিরে এসেছে। গতকাল বুধবার লিবিয়া থেকে মোবাইলফোনে জানানো হয়, প্রায় দেড় বছর ধরে আটকে রাখা এবং নির্যাতনের মুখে প্লাবনের মৃত্যু হয়েছে। এ খবর পৌঁছতেই কান্নার রোল ওঠে খেজুরতলা গ্রামের ঘরে ঘরে। জুনায়েদ হাসান প্লাবন (২৩) নাগদাহ ইউনিয়নের খেজুরতলা গ্রামের কৃষক জমসেদ আলীর ছেলে। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দেড় বছর আগে বেলগাছি গ্রামের সাগর (লিবিয়ার মাফিয়া) নামে এক দালালের মাধ্যমে প্লাবনকে ইতালি পাঠানোর চুক্তি হয়। বলা হয়েছিলো, প্রথমে লিবিয়া, সেখান থেকে সাগর পথে পৌঁছে দেয়া হবে স্বপ্নের দেশে। সেই চুক্তির আড়ালে ছিল ভয়াবহ প্রতারণা। সাগরের চাচাতো ভাই জিমের মাধ্যমে দফায় দফায় ৪০ লাখ টাকারও বেশি পাঠানো হয়। ছেলেকে ফিরে পেতে শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে দেন পিতা জমসেদ আলী। কিন্তু কিছুতেই মুক্তি মেলেনি। বরং, মারধরের ভিডিও পাঠিয়ে আরও টাকা আদায়ের চেষ্টা চলতে থাকে। প্লাবনের বড় বোন স্বপ্না খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘দেড় বছর আগে সাগর ভাইয়ের হাতে দিয়েছিলাম ভাইটারে। জিম এসে এসে টাকা নিতো। আমরা ভিডিও দেখে কাঁদতাম, আর টাকা দিতাম। শুনেছি, ভাইরে বিক্রি করে দিয়েছে আরেক দালালের কাছে। দুই মাস ধরে মারছে, শেষমেশ মেরে ফেলছে।’ গতকাল বুধবার সকাল ৯টার দিকে লিবিয়ায় আটক থাকা আরও কয়েকজন বাংলাদেশি যুবক ফোন করে প্লাবনের মৃত্যুর খবর দেন। কিন্তু এরপর থেকে তারা আর ফোন ধরছেন না। বৃদ্ধ পিতা জমসেদ আলী চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন, ‘আমার ছেলেটারে ভালো জীবনের আশায় পাঠাইছিলাম, সেই ছেলেই ফিরলো না। শুনছি মারা গেছে, কিন্তু ঠিকমতো জানতেও পারি না। যোগাযোগ বন্ধ।’ খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, প্লাবনের মৃত্যুর খবর শুনে লিবিয়ার মাফিয়া সাগরের বাবা-মা ও জিমের বাবা-মা বাড়িতে তালা লাগিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুদুর রহমান পিপিএম জানান, ‘ঘটনাটি আমরা লোকমুখে শুনেছি। মানবিক কারণে পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে এসেছি। ছেলেটি আদৌ মারা গেছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’ একটি স্বপ্নের পেছনে ছুটে পরিবার হারালো তার সবচেয়ে বড় সম্পদ, আর এক মা হারালেন বুকের ধন। প্লাবনের মতো ওই এলাকার আরও কত তরুণ এভাবে দালাল চক্রের ফাঁদে পড়ে মরছে পরবাসে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। কিন্তু খেজুরতলার বাতাসে এখন ভাসছে কেবলই দীর্ঘশ্বাস আর হারানোর কান্না।
ছবি: প্লাবন।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.