ঈদের আগেই নগদ সহায়তা পাবেন কর্মজীবীরা

রংপুর বিভাগের আট জেলায় ভিডিও কনফারেন্সে : প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারি অফিস-আদালত সীমিত আকারে খুলে দেয়া হবে। ঈদ সামনে রেখে এবং পবিত্র রমজান উপলক্ষে সাধারণ ছুটিতে বন্ধ থাকা দোকানপাটও সীমিত আকারে চালুর অনুমতি দেয়া হবে, যাতে মানুষের কষ্ট না হয়। জনগণ ইফতার ও সেহেরি করতে যাতে কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হয়, সেজন্য সরকার হাটবাজার ও দোকানপাট খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়া প্রতিটি জেলায় যেসব ক্ষুদ্র শিল্প-কারখানা রয়েছে, সেগুলোও চালানো যাবে। অর্থনীতির চাকা যাতে গতিশীল থাকে, সরকার সেভাবেই নির্দেশনা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘মানুষকে সুরক্ষিত রেখে, মানুষের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখে সেগুলো যেন পরিচালিত হতে পারে, তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে বেশ কতগুলো নির্দেশনা আপনারা শিগগিরই পাবেন। এটা আমাদের কেবিনেট ডিভিশন থেকে ঘোষণা দেয়া হবে।’
গতকাল সোমবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে রংপুর বিভাগের আটটি জেলার জেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি লকডাউন শিথিল হলেও মানুষ যেন সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, সে বিষয়ে সতর্ক করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের কারণে যাদের আয়-উপার্জনের পথ নাই, তাদের কিছু নগদ আর্থিক সহায়তা আমরা ঈদের আগেই দিতে চাই, যাতে মানুষের খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।’ তিনি ব্যাংক ঋণের সুদের টাকা দুই মাসের জন্য স্থগিত করার এবং সরকারি ছুটি আগামী ১৫ মে পর্যন্ত বর্ধিত করারও ঘোষণা দেন। তিনি ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ সম্পর্কে বলেন, ‘গত দুই মাস যেহেতু কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য ছিলো না, তাই ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে সচল থাকে সেজন্য ইতোমধ্যে যারা ঋণ নিয়েছেন তাদের সুদ স্থগিত করে দেয়া হয়েছে। আপনাদের সঙ্গে কথা বলার পর আমি নিজেই এ নিয়ে আলোচনায় বসবো।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, খুব বেশি মেলামেশা, সবার সঙ্গে এক জায়গায় জড়ো হওয়া বা খুব বড়ো জনসমাগম এই জায়গা থেকে সবাইকে মুক্ত থাকতে হবে। কারণ সেখানেই কিন্তু সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।’ করোনা ভাইরাসের এই সংকট যে পুরো বিশ্বকেই বিপদে ফেলে দিয়েছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছিলাম এবং এর সুফলও দেশবাসী পাচ্ছিলো। কিন্তু হঠাৎ ভয়াবহ করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের অর্থনীতি থমকে দাঁড়িয়েছে। আমি জানি এটার প্রভাব পড়বে আগামীতেও। আমরা এ ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করায় ভালো ফলাফলও পাচ্ছি। সেজন্য আমি দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশকে সুরক্ষিত করা, দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, এই ভাইরাসের কারণে মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া এটাই সরকারের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি। যেহেতু এটা অত্যন্ত সংক্রামক একটি রোগ, হাঁচি-কাশির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়, সেজন্য দেশবাসীকে আমি অনুরোধ করবো, যেহেতু রোজার মাস, আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি, ধীরে ধীরে আমরা কিছু কিছু জিনিস উন্মুক্ত করে দিচ্ছি। কিন্তু সেখানে আপনাদের সবাইকে নিজেকে সুরক্ষিত করতে হবে। আবার অপরকেও সুরক্ষিত রাখতে হবে।’
কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতির চাকা যেন গতিশীল থাকে সেজন্য এই ব্যবস্থা। কিন্তু সেখানে মানুষকে সুরক্ষিত রেখে, মানুষের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখে সেগুলো যেন পরিচালিত হতে পারে তার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারিতে সারা বিশ্বে সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী কৃষি উৎপাদন বাড়ানো এবং এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখতে সবাইকে পরামর্শ দেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে দেয়া নির্দেশনা মেনে চলার পাশাপাশি সবাইকে তুখে মাস্ক ব্যবহারের আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা ধনী তাদের অগাধ সম্পদ, অনেকের অত্যধিক অস্ত্রশস্ত্র। সেই শক্তি সবই যেন দেখা গেছে ব্যর্থ। একটা অদৃশ্য শক্তি করোনা ভাইরাস। সর্বশক্তিমান আল্লাহ কী খেলা দেখাচ্ছেন, যার ফলে ধন-সম্পদ-অর্থ কোনো কাজে লাগছে না। ধনী-দরিদ্র সবাই যেন একাকার হয়ে গেছে। এই অবস্থা মোকাবেলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলো পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলা। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ভিডিও কনফারেন্স সঞ্চালনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবসহ পিএমওর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এসময় গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More