কোনো তদবির-ঘুস বা রাজনৈতিক প্রভাব ছাড়াই যোগ্যদের সরকারি চাকরি মাত্র ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন চুয়াডাঙ্গায় ১৬ ও ঝিনাইদহে ২৫জন

স্টাফ রিপোর্টার: কোনো তদবির কিংবা ঘুস ছাড়াই মাত্র ১২০ টাকার আবেদন ফিতে পুলিশে কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেয়েছেন চুয়াডাঙ্গার ১৬জন ও ঝিনাইদহ জেলার ২৫জন তরুণ। শতভাগ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগের এ প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নিয়োগ বোর্ড। সম্প্রতি পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় কোনো প্রার্থীকে অর্থ, পৃষ্ঠপোষকতা বা সুপারিশের আশ্রয় নিতে হয়নি। নিয়োগপ্রাপ্তদের অধিকাংশই দিনমজুর বা নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তান। চুয়াডাঙ্গায় মাত্র ১২০ টাকায় ফরম পূরণ করে পুলিশে চাকরি পেয়েছেন ১৬জন তরুণ। গতকাল বৃহস্পতিবার ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ কার্যক্রমে মেধা, যোগ্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রাথমিকভাবে মনোনীত হয়েছেন জেলার ১৬জন তরুণ। চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পাঠানো প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়; নিয়োগের সকল প্রক্রিয়া মেধা, যোগ্যতা ও স্বচ্ছতার সাথে সম্পন্ন করা হবে মর্মে জেলা পুলিশ, চুয়াডাঙ্গার পক্ষ থেকে স্থানীয় পত্রিকা/ফেসবুকে প্রকাশের মাধ্যমে চাকরি প্রত্যাশীদের বারবার সচেতন করা হয়। নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা, বিপিএম-সেবা মহোদয় চাকরি প্রত্যাশীদের প্রতারক/দালালদের শরণাপন্ন না হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। চূড়ান্তভাবে মনোনীত প্রার্থীদের চাকরি প্রাপ্তির সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সরকারি ফি বাবদ খরচ হয়েছে ১২০ টাকা। চুয়াডাঙ্গা জেলায় ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে গত ১০ এপ্রিল নিয়োগ কমিটি ১ম ধাপে চাকরি প্রার্থীদের মধ্য থেকে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই, শারীরিক মাপ, শারীরিক সক্ষমতা ও আনুষঙ্গিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে লিখিত পরীক্ষায় ছেলে ২২৩ জন এবং মেয়ে ১১জনসহ সর্বমোট ২৩৪ অংশগ্রহণ করে ৩২জন ছেলে প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। নিজেদের মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে ১৬জন প্রার্থী নিয়োগ বোর্ড কর্তৃক চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়। নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ ১৬জন তরুণ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও বাংলাদেশ পুলিশে স্বাগত জানান। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় চুয়াডাঙ্গা পুলিশ লাইন্স ড্রিলশেডে নতুন চাকরি পাওয়া এই তরুণদের পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করেন নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা, বিপিএম-সেবা। নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে নিজ মেধা ও যোগ্যতায় বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত সদস্য হওয়ার জন্য নির্বাচিত হতে পেরে খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েন চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা। চুড়ান্ত ফলাফল ঘোষণাকালে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. জামিনুর রহমান খান, কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ফয়সাল মাহমুদসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহে তদবির কিংবা উৎকোচ ছাড়াই ঝিনাইদহে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেয়ে উচ্ছসিত ২৫ জন। জেলা পুলিশের স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়টি জেলা জুড়ে ইতিবাচক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়েছে। গত বুধবার রাতে ঝিনাইদহ পুলিশ লাইন্সের কার্যালয় থেকে (টিআরসি) কনস্টেবল পদে উত্তীর্ণ ২৫ জন প্রার্থীর চূড়ান্ত নাম ঘোষণা করেন পুলিশ সুপার মো. মনজুর মোর্শেদ। আরও ৫ প্রার্থীকে অপেক্ষমান হিসেবে তালিকায় রাখা হয়েছে। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরপরই উত্তীর্ণ প্রার্থী ও তাদের স্বজনরা আনন্দ অশ্রুতে মিলিত হন। সম্প্রতি ঝিনাইদহ জেলায় পুলিশ কনস্টেবল (টিআরসি) পদে কোন সুপারিশ ছাড়াই মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন কৃষক, ভ্যানচালক, দিনমজুর ও মৎস্যজীবী পরিবারের ২৫ সন্তান। চাকুরি পেয়ে ঝিনাইদহ শহরের গুলশানপাড়ার আকাশ দাস বলেন, কোনো সুপারিশ ছিলো না। ভেবেছিলাম চাকরিটা হবে না। কিন্তু চূড়ান্ত তালিকায় সবার ওপরে আমার নাম দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম। স্বচ্ছভাবে নিয়োগ দিয়ে পুলিশ প্রশাসন ও নিয়োগসংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। নিয়োগ পেয়ে আমি কৃতজ্ঞ। এখন দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে পারবো।
ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত এপ্রিল মাসে পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হয়। কনস্টেবল পদে জেলার ৬ উপজেলা থেকে মোট এক হজার ৭৪১জন চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেন। এর পর চলতি মাসের ৪ তারিখ লিখিত পরীক্ষায় ২৬৯ জন অংশ নেন। এর মধ্যে ৬৯ জন উত্তীর্ণ হওয়ার পর ১৪ মে দিনব্যাপী মৌখিক পরীক্ষা (ভাইভা) অনুষ্ঠিত হয়। মৌখিক পরীক্ষার পর রাতেই চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করেন পুলিশ সুপার। চূড়ান্ত ফলাফলে প্রথম হন ঝিনাইদহ শহরের গুলশানপাড়ার আকাশ দাস।এদিকে সচ্ছতার ভিত্তিতে মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে মাত্র ১২০ টাকায় (আবেদন ফি) চাকরি পেয়ে অনেকেই আনন্দ উল্লাস করেন। রাতে পুলিশে চাকরিপ্রাপ্তির খবর শুনে আনন্দের কান্নায় ভেঙে পড়েন কোটচাঁদপুর উপজেলার জয়দিয়া গ্রামের অশোক হালদারের মেয়ে শিমলা হালদার ও তার স্বজনরা। শিমলার বাবা অশোক হালদার বলেন, ঘুষ কিংবা তদবির ছাড়াই আমার মেয়ের চাকরি হয়েছে। এ এক বিরাট পাওয়া। ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মো. মনজুর মোর্শেদ বলেন, সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে ২৫ জনকে কনস্টেবল পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখানে মেধাবী ও যোগ্যদের মুল্যায়ন করা হয়েছে। যোগ্য প্রার্থীরাই তিন ধাপের পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। জেলা পুলিশ যোগ্যদের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার কাজ করেছে। উত্তীর্ণদের নতুন চাকুরি জীবনে শুভ কামনা জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, অনেকের মধ্যে ধারণা আছে পুলিশে চাকরি নিতে গেলেই ঘুষ ও তদবির লাগে। মানুষের সেই ধারণা পাল্টে দিতে কাজ করছে পুলিশ।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More