চুয়াডাঙ্গায় ৭ হলেও মেহেরপুরে একদিনে সর্বোচ্চ ১২ জনের করোনা পজেটিভ

গ্রিনজোন ঘোষণার পর থেকে ঝিনাইদহে বাড়ছে শনাক্ত : কুষ্টিয়াতে কমে এসেছে আক্রান্তের সংখ্যা
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় ৭ হলেও মেহেরপুরে একদিনে সর্বোচ্চ ১২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এছাড়াও কুষ্টিয়াতে কমে এসেছে আক্রান্তের সংখ্যা। ঝিনাইদহে গ্রিনজোন ঘোষণার পর থেকে হু হু করে বেড়ে চলেছে আক্রান্ত। কুষ্টিয়ার মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে মোট ২৭৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। গতকাল শনিবার কুষ্টিয়ার ৩৯, চুয়াডাঙ্গার ৬৪, মেহেরপুরের ৫৫, নড়াইলের ৪৯, ঝিনাইদহের ৬৯ ও রংপুরের একটি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এরমধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৫জন, কুষ্টিয়া জেলায় ৬জন, মেহেরপুরে ১২ জন ঝিনাইদহে ২১ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়াও চুয়াডাঙ্গার ৩, ও মেহেরপুরে একজনের ফলোআপ রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে।
চুয়াডাঙ্গায় পুলিশ কনেস্টেবলসহ নতুন করে ৭ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। নতুন করোনা আক্রান্ত সবাই পুরুষ। করোনা উপসর্গ কম দেখা যাচ্ছে আক্রান্তদের শরীরে। শনিবার রাতে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব থেকে এ রিপোর্ট চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিস কার্যালয়ে আসে। এ নিয়ে জেলায় মোট ২১২ জন করোনা শনাক্ত হলেন। গতকাল নতুন করে আরও ৯ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাব থেকে চুয়াডাঙ্গার করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। ৭ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। দামুড়হুদার দুলালনগর ক্যাম্পের একজন পুলিশ কনেস্টেবল রয়েছেন। তিনি সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দর্শনা বাসস্ট্যান্ড পাড়ার ৪৫ বছর বয়সের একজন। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার গুলশানপাড়ার একজন, ওয়াপদা রোডের একজন, এতিমখানাপাড়ার একজন ও সুমুরদিয়া রেলপাড়ার একজন, আলমডাঙ্গা উপজেলার এরশাদপুর গ্রামের এক যুবক। নতুন আক্রান্তের মধ্যে ৬ জন হোম আইসোলেশনে রয়েছেন।
সিভিল সার্জন এএসএম মারুফ হাসান বলেন, নতুন ৭ জন পজিটিভ রোগি শনাক্ত হয়েছে জেলায়। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ভেতর ৪ জন রয়েছে। সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। করোনা প্রতিরোধ করতে হলে সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুরে ২৪ ঘন্টায় রেকর্ড সংখ্যক ১২ জন করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছেন। জেলার ৩ উপজেলার ৫৪টি নমুনা পরীক্ষায় ১১ জন কোভিড-১৯ পজিটিভ বলে জানান সিভিল সার্জন। আক্রান্তদের মধ্যে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারী পরিবারের তিন জন, গাংনীর বাদিয়াপাড়া গ্রামের করোনাভাইরাস আক্রান্ত অবস্থায় পালিয়ে যাওয়া রেজাউলের পরিবারের ৫ সদস্য। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭২ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সদরে ৫ জন ও গাংনী উপজেলায় ছয় জন। সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২২ জুন মেহেরপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এক কর্মচারী কোভিড-১৯ পজিটিভ হন। উপসর্গ দেখা দেয়ায় তার নমুনা পরীক্ষা করায় জেলা প্রশাসন। তার বাড়ি লকডাউন করে পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য বিভাগ। এর মধ্যে ওই কর্মচারীর স্ত্রী ও দুই পুত্র সন্তান আজ কোভিড-১৯ পজিটিভ। এদিকে সদরে আজ আক্রান্ত ৫ জনের মধ্যে একজন হচ্ছেন ইসলামী ব্যাংক মেহেরপুর শাখার একজন কর্মকর্তা। অপরজন মল্লিকপাড়া এক নারী। এর আগে আক্রান্ত এক সেনা সদস্যর ভাবি। তার মাধ্যমে ওই নারী আক্রান্ত হয়েছেন।
এদিকে গাংনী উপজেলায় আক্রান্ত ছয় জনের মধ্যে পাঁচ জন একই পরিবারের। ২১ তারিখে বাদিয়াপাড়া গ্রামের রেজাউল নামের এক ব্যক্তি ঢাকা থেকে ফিরে কোভিড-১৯ পজিটিভ হন। লকডাউন অবস্থায় ওই রাতেই তিনি পালিয়ে যান। তার সংস্পর্শে আসা পরিবারের লোকজনের নমুনা পরীক্ষায় আজ পাঁচজন পজিটিভ। গাংনী উপজেলায় আক্রান্ত অপরজনের বাড়ি তেরাইল গ্রামে। ৩০ বছর বয়সী ওই যুবক ২২ জুন ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরলে তাকে কোয়ারিন্টিন করে নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য বিভাগ।
মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. নাসির উদ্দীন জানান, আজ আক্রান্ত শনাক্ত ১১ জনকে হোম আইসোলেশন করে বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। তাদের সংস্পর্শে আসা লোকজনকে কোয়ারিন্টিন পূর্বক নমুনা সংগ্রহ করা হবে।
প্রসঙ্গত, জেলায় মোট আক্রান্ত ৭২ জনের মধ্যে সদরে ৩৬ জন, গাংনীতে ৩০ জন ও মুজিবনগরে ৬ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২৩ জন। আর মৃত্যু ৫ জনের। বাকিরা আইসোলেশনে সুস্থ আছেন বলে সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহাম্মদ আলী (৮২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট ৭ জন করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হলো। আজ শনিবার (২৭ জুন) সকাল ৭টায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। আহাম্মদ আলী কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বড়–রিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. এএইচএম আনোয়ারুল ইসলাম জানান, গত ১৫ জুন করোনা পজেটিভ হয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন আহাম্মদ আলী। সেখানে আজ সকাল ৭টার দিকে তিনি মারা যান। এ নিয়ে করোনা পজেটিভ ৭ রোগির মৃত্যু হলো।
এদিকে, কুষ্টিয়ায় গত শুক্রবার ৩৯ জন আক্রান্ত হলেও গতকাল শনিবার নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ৬ জন। শনিবার কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে কুষ্টিয়ার ৩৯ টি নমুনা পরীক্ষার মধ্যে ৬ জনের নমুনার রিপোর্ট পজেটিভ আসে। কুষ্টিয়া জেলায় নতুন করে ৬ জনকে আক্রান্ত বলে সনাক্ত করা হয়েছে। নতুন আক্রান্তের মধ্যে কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুরে ৩ জন, কুমারখালীতে ৩ জন। কুমারখালী উপজেলায় আক্রান্ত ৩ জনের ঠিকানা খয়েরচাড়া মাঠপাড়া১, শেরকান্দি ২ জন। দৌলতপুর উপজেলায় আক্রান্ত ৩ জনের ঠিকানা দফাদারপাড়া ১, গঙ্গারামপুর ২ জন। নতুন আক্রান্তের মধ্যে পুরুষ ৪ জন, মহিলা ২ জন। এই নিয়ে কুষ্টিয়ায় এখন পর্যন্ত ৫৪১ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হলো। (বহিরাগত বাদে)। গতকাল সনাক্ত হওয়া আরও একজন রোগী ফলোআপ পজেটিভ হওয়ায় তাকে হিসাব থেকে বাদ দেয়া হয়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More