জীবননগরের মাধবপুরে হত্যাকা-ের মাত্র ১৩ ঘণ্টার মাথায় রহস্য উদঘাটন জমি নিয়ে বিরোধ : ছেলেকে সাথে নিয়ে স্বামীকে খুন করে স্ত্রী গ্রেফতারের পর পাপিয়ার স্বীকারোক্তি : রাজুকে ধরতে পুলিশের জাল বিস্তার

এম আর বাবু/সালাউদ্দীন কাজল: জীবননগর উপজেলার মাধবপুর গ্রামে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে পৈশাচিকভাবে স্বামী মনিরুল ইসলামকে (৫০) হত্যার অভিযোগে ঘাতক স্ত্রী পাপিয়া খাতুনকে (৪৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত পরশু শনিবার দিনগত রাত ১টার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামে খালা মর্জিনা খাতুনের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যাকা-ে ব্যবহৃত হেসো এবং কুড়ুল আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। জীবননগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মামুন হোসেন বিশ্বাস গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে শনিবার দুপুরে জীবননগর উপজেলার মাধবপুর গ্রামে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। ওই রাতেই নিহতের ভাই জহির হোসেন জীবননগর থানায় ভাইয়ের স্ত্রী পাপিয়া খাতুন এবং ভাইয়ের ছেলে রাজুর নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এদিকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া খাতুন পুলিশের নিকট স্বামী হত্যার সাথে জড়িত থাকার দায় স্বীকার করেছেন। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পলাতক ছেলে রাজুকেও (২৩) খুঁজছে পুলিশ। হত্যার মাত্র ১৩ ঘণ্টার মাথায় ক্লু উদঘাটন করতে সক্ষম হওয়ায় প্রসংশায় ভাসছেন জীবননগর থানার ওসি মো. মামুন হোসেন বিশ্বাসসহ সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা।
এলাকাবাসী জানায়, জীবননগর উপজেলার হাসাদাহ ইউনিয়নের বালিহুদা গ্রামের দিদার আলী ম-লের ছেলে মনিরুল ইসলাম দু’মাস আগে নিজ গ্রাম ছেড়ে পার্শ্ববর্তী মাধবপুর গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের পাশে জমি কেনেন এবং সেখানে টিনের আধা-পাকা বাড়ি তৈরি করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। মনিরুল ইসলাম মাটি কাটা শ্রমিকের পাশাপাশি কলার ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। শনিবার দুপুরে তাকে নিজ বাড়িতে জবাই করে হত্যা করা হয়। হত্যাকা-ের পর বাড়ি থেকে তার স্ত্রী পাপিয়া খাতুন ও ছেলে রাজু কৌশলে পালিয়ে যায়।
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মামুন হোসেন বিশ্বাস জানান, ঘটনার ওই দিন রাত ১১টার সময় নিহত মনিরুল ইসলামের ভাই জাকির হোসেন জীবননগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাপিয়ার অবস্থান শনাক্ত করে পুলিশ। রাত ১টায় আলমডাঙ্গা উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের খালা মর্জিনা খাতুনের বাড়ি থেকে ঘাতক স্ত্রী পাপিয়া খাতুনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর পাপিয়া খাতুন পুলিশকে জানিয়েছে, মাধবপুর গ্রামের জমি তার টাকায় কেনা। কথা ছিলো ওই জমি তার নামে কেনা হবে। কিন্তু স্বামী কথা না রেখে বেঈমানি করে নিজের নামে কিনেছে। এছাড়া বালিহুদা গ্রামে বিক্রি করা জমির টাকা নিয়ে ছেলে রাজু বিদেশ যেতে চেয়েছিলো। কিন্তু স্বামী মনিরুল ইসলাম তাদের কোনো কথাই কর্ণপাত করেনি। বারবার বলা সত্ত্বেও জমি ফেরত কিম্বা রাজুকে বিদেশে যেতে টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে মনিরুল ইসলাম। এ কারণে মা-ছেলে ক্ষুদ্ধ হন মনিরুল ইসলামের ওপর। এক পর্যায়ে শনিবার দুপুরে এ নিয়ে মনিরুল ইসলামের সাথে মা-ছেলের কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মনিরুল ইসলাম কুড়ুল দিয়ে তাদের মারতে উদ্যত হয়। এমন সময় পাপিয়া তার হাতে থাকা ধারালো হেসো দিয়ে স্বামীর গলায় আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই স্বামী মনিরুল ইসলামের মৃত্যু হয়। ঘটনার সময় ছেলে রাজুও তার সাথে ছিলো। হত্যাকান্ডের পর স্ত্রী পাপিয়া খাতুন ও ছেলে রাজু বাড়ি থেকে কৌশলে পালিয়ে আনছারবাড়ীয়া রেলস্টেশনে যায়। পরে ট্রেনযোগে পাপিয়া খাতুন তার খালার বাড়ি আলমডাঙ্গার বাঁশবাড়িয়া গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নেন এবং ছেলে রাজু দর্শনা রেলস্টেশনে নেমে পড়েন। বর্তমানে পুলিশ রাজুকে হন্যে হয়ে খুঁজছেন। ওসি জানান, হত্যার কাজে ব্যবহৃত হেসো ও কুড়ুল আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। গতকাল রোববার চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা বিপিএম-সেবা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পাপিয়াকে আদালতে সোপর্দপূর্বক অধিকতর তদন্তে রিমা-ের আবেদন জানানো হয়েছে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More