স্টাফ রিপোর্টার: নির্বাচন, সংস্কারসহ বেশ কিছু ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির দূরত্ব তৈরি হয়েছে। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার এপ্রিলে নির্বাচনের টাইমফ্রেম ঘোষণা করলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। দলটি ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দাবিতে অনড়। এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের চলমান টানাপোড়েনের মধ্যে ঈদের দিন রাতে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশের স্বার্থে ও দলের স্বার্থে দলীয় নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বার্তা দেন। তিনি দলীয় নেতাদেরকে আলোচনার টেবিলে সমঝোতার দিক-নির্দেশনা দেন।
নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার যাতে যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করে, সেই চেষ্টা করতে বিএনপি নেতাদের পরামর্শ দেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ঈদের দিন শনিবার রাতে রাজধানীর গুলশানের ভাড়াবাসা ফিরোজায় দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে খালেদা জিয়া এ পরামর্শ দেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও বলেছেন যে, আন্দোলন করলে হয়তো এ সরকার টিকবে না। সেটা হলে আবার কে আসবে। তার চেয়ে এ সরকার যাতে নির্বাচন দেয়, সবাই সেই চেষ্টা করেন।’ ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া একাধিক নেতা এ তথ্য জানান। এ দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন কী বুঝানোর চেষ্টা করেছেন জানতে চাইলে এক নেতা বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এই অন্তর্বর্তী সরকার পরিবর্তন নয়, এই সরকার যাতে নির্বাচনের উদ্যোগ নেয় সেই লক্ষ্যে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথাই বুঝিয়েছেন তিনি। সাক্ষাতের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্রের প্রতি খালেদা জিয়ার যে অবিচল আস্থা সেই আস্থা তিনি সবসময় প্রকাশ করেন। লন্ডনে ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠক নিয়ে এক প্রশ্নে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবিসি বাংলাকে বলেন, ওনাকে (তারেক রহমান) ফরমালি দাওয়াত করা হয়েছে মিটিংয়ের জন্যে। এই মিটিংয়ের জন্য আমাদের স্ট্যান্ডিং কমিটির পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করছি, এটা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট কাটাতে পজিটিভ ভূমিকা রাখতে পারে। বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি নেতার এই বৈঠকে আগামী দিনের রাজনীতিতে নতুন মাত্রাও যোগ করতে পারে। সম্প্রতি দক্ষিণ সিটিতে ইশরাক হোসেনের মেয়র পদ, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ইস্যুতে সরকার ও বিএনপির টানাপড়েনের মধ্যেই পরের বছর এপ্রিলে নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণায় বেশ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায় বিএনপি। যে কারণে ঈদের পর আন্দোলনের জন্য অনেকটা মানসিকভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছিল দলটি। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হওয়ার পর সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টাই প্রধান উপদেষ্টা ও তারেক রহমানের বৈঠকের বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় তোলেন। সরকারের একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, সরকারের আগ্রহের পরই লন্ডন সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে রাজি হন বিএনপির ফাংশনাল প্রধান তারেক রহমান। এক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার নির্দেশনাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যদিও শুরু থেকে এই বৈঠকের বিষয়ে দোটানায় ছিল বিএনপি। এখন এই বৈঠকটিকেই আবার আগামী দিনের রাজনীতির ‘টার্নিং পয়েন্ট’ মনে করছে দলটি। মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বর্তমানে যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বা অবস্থান, তাতে এটা একটা বড় ইভেন্ট। গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট। এটার গুরুত্ব অনেক বেশি।’’ একই সঙ্গে এই বৈঠকটিকে বড় রাজনৈতিক ঘটনা আখ্যা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সাম্প্রতিককালের রাজনৈতিক যে প্রেক্ষাপট, যে অবস্থান এটা (বৈঠকটি) একটা বড় ইভেন্ট। যদি সব কিছু সঠিকভাবে চলে, তাহলে নিঃসন্দেহে এটা একটা বড় টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। বিএনপি মহাসচিব বলেছেন যে, “জাতীয়ভাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবেও এটার গুরুত্ব অনেক বেশি। ইতোমধ্যে জানেন, পত্র-পত্রিকায় সাংবাদিকদের মধ্যে বহু আলোচনা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চলছে। এর মধ্যে এই মিটিংটা হলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে এবং অনেক কিছু সহজ হয়ে যেতে পারে, নতুন ডাইমেনশন সৃষ্টি হতে পারেৃসম্ভাবনা অনেক”। এখন এটা নির্ভর করবে আমাদের নেতাদের (মুহাম্মদ ইউনূস-তারেক রহমান) ওপর, তারা কীভাবে সেই সম্ভাবনার দিকে নিয়ে যাবেন।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.