প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের একান্ত বৈঠক আগামী শুক্রবার সবার চোখ এখন লন্ডনে : প্রাধান্য পাবে নির্বাচন-সংস্কার ইস্যু
স্টাফ রিপোর্টার: নির্বাচন-সংস্কারসহ চলমান রাজনৈতিক নানা ইস্যুতে বিএনপি ও অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যকার টানাপড়েনের মধ্যে যুক্তরাজ্য সফররত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একান্ত বৈঠক হবে আগামী ১৩ জুন সকাল বেলা। এই হাই প্রোফাইল বৈঠক ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা দিয়েছে চাঞ্চল্য। বিএনপি সূত্র জানায়, লন্ডনের ডরচেষ্টার হোটেলে প্রথম বারের মতো ‘ওয়ান টু ওয়ান’ বৈঠকে বসছেন তারা। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে এই বৈঠকটি নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে আমন্ত্রণও জানানো হয়েছে। আগামী ১৩ জুন এই বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয় সময় সকাল ৯টা-১১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা চলবে এই বৈঠক। এর আগে চার দিনের সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে তিনি লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হন। ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক নিয়ে সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটি একটি জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে। বৈঠকে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে তারেক রহমান নেতাদের সঙ্গে আলাপ করেন। বৈঠকে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আলাদা করে সবার মত নেন। ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের ‘ওয়ান টু ওয়ান’ বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির নেতারা সরাসরি কিছু না বললেও বৈঠকের বিষয়ে পজিটিভ ইঙ্গিত দিয়েছেন। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে এই বিষয়ে বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেছেন, এ বিষয়ে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে কথা বলবেন লন্ডনে। এই বৈঠকের বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘লন্ডনে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক রাজনীতির জন্য টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাক্ষাৎ হচ্ছে আগামী ১৩ জুন। লন্ডনের স্থানীয় সময় সকালে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে’। বিএনপি শীর্ষ নেতাদের ধারণা, দুই নেতার এই প্রথম সাক্ষাতের গুরুত্ব অনেক বেশি। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনের সময়, নির্বাচন পরবর্তী বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের এজেন্ডা, তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রাসঙ্গিকতাসহ নানা গুরত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হবে।
এদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যুক্তরাজ্য সফররত প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক হবে। এই বৈঠকটি রাজনৈতিক সংকট কাটাতে টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে বলেও উল্লেখ করছেন তিনি। গতকাল রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মহাসচিব বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি (ড. ইউনূস) যে হোটেলে উঠেছেন সেখানেই বৈঠক হবে। আগামী ১৩ জুন শুক্রবার লন্ডনের স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে বৈঠকটি হবে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক যে সংকটগুলো রয়েছে, সেগুলোয় এই বৈঠক ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে বলে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বর্তমানে যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বা অবস্থান, তাতে এটা একটা বড় ইভেন্ট। গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট। এটার গুরুত্ব অনেক বেশি। নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক সংকট কাটাতে এটা একটা বড় টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা (বৈঠক) আমরা বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই যখন থেকে প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে যাবেন সিদ্ধান্ত হয়েছে তখন থেকেই মোটামুটি একটু আলোচনা হচ্ছিল যে, সেখানে যেহেতু আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আছেন সেখানে একটা সাক্ষাৎ হতে পারে। এটা একটা সম্ভাবনা তখন থেকেই শুরু হয়েছিল। এখন এটা পরিপক্ব হয়েছে। তিনি বলেন, সোমবার রাতে আমাদের স্ট্যাডিং কমিটির মিটিংও হয়েছে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করেছেন। তারেক রহমানকে ফরমালি দাওয়াত করা হয়েছে মিটিংয়ের জন্যে। ১৩ তারিখ ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত (লন্ডন স্থানীয় সময়) প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে এই সময়টা দেয়া হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই মিটিংয়ের জন্য আমাদের স্ট্যান্ডিং কমিটির পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করছি যে, এটা বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক সংকট কাটাতে পজিটিভ ভূমিকা রাখতে পারে। অনুষ্ঠেয় বৈঠকটিকে এই সময়ের বড় ‘পলিটিক্যাল ইভেন্ট’ হিসেবে অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, অনেক সুযোগও তৈরি হতে পারে এই বৈঠকে। অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে। অনেক কিছু সহজ হয়ে যেতে পারে। নতুন ডাইমেনশন তৈরি হতে পারে এই বৈঠকে। নতুন একটা দিগন্তের উন্মোচন হতে পারে।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস তিনি দেখা করবেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যিনি দল চালাচ্ছেন এতদিন ধরে। যিনি রাজনীতিতে প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছেন বাংলাদেশে এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যেও একটা প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন। তার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ হওয়াটা আমি বড় ইভেন্ট বলে মনে করি। ‘ইটস এ মেজর পলিটিক্যাল ইভেন্ট। তিনি বলেন, আমার মনে হয় যে, এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ইম্পরটেন্ট ইভেন্ট, এই মিটিংয়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। আমি মনে করি, জাতীয়ভাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবেও এটার গুরুত্ব অনেক বেশি।
মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য বলেছেন, ‘আপনাদের পত্র-পত্রিকায় সাংবাদিকদের মধ্যে বহু আলোচনা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চলছে। এর মধ্যে এই মিটিংটা হলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে এবং অনেক কিছু সহজ হয়ে যেতে পারে। নতুন ডাইমেনশন সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক। এখন এটা নির্ভর করবে আমাদের নেতৃবৃন্দের (মুহাম্মদ ইউনূস-তারেক রহমান) ওপরে তারা কীভাবে সেই সম্ভাবনার দিকে নিয়ে যাবেন। আমরা আমাদের দলের তরফ থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সম্পূর্ণ অথরিটি দিয়েছি তার, সাফল্য প্রার্থনা করেছি।
বৈঠকের স্থান কোথায় জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘লন্ডনে যে হোটেলটিতে (হোটেল ডোরচেস্টার) উনি প্রধান উপদেষ্টা আছেন সেটাতেই ভেন্যু। ওখানেই তার সঙ্গে ‘ইংল্যান্ডের হাউজ অব কমন্সের ডেপুটি লিডার অব দি হাউজ’ দেখা করবেন তারেক রহমান সাহেবের বৈঠকের পরে। এরপরে অন্যান্য নেতা যারা আছেন তারা ওখানেই দেখা করবেন। ভেন্যু একটাই।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বা দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ‘দ্বন্দ্বে না জড়ানোর’ পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। শনিবার ঈদুল আজহার সন্ধ্যায় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সৌজন্য সাক্ষাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার রাজনৈতিক সহকর্মীদের এই পরামর্শ দেন। সাক্ষাৎকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কাছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণের বিষয়ে বেগম জিয়া ইতিবাচক অবস্থান ব্যক্ত করেন। শনিবার শুভেচ্ছা বিনিময়কালে ফিরোজায় ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। তিনি বলেন, আসলে আমরা ঈদের দিন যাই শুধু শুভেচ্ছা বিনিময়ে। আর ম্যাডামের সঙ্গে সাধারণত এত ভিড় থাকে, লোকজন থাকে, যে কারণে আমরা অন্য কোনো আলোচনা করি না। সে কারণে সেটা সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ, শুভেচ্ছা। দুয়েকটা ছুটকা কথাবার্তা হয়তো হয়। এমনি আমাদের যদি প্রয়োজন হয় তার সঙ্গে দুই-একটা কথা বলার, সেটা হয়তো বলে কেউ। আর এই সিচুয়েশন ক্রিয়েট হয়েছে (প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের সাক্ষাৎ) সেটা তো ঈদের পরে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দূরত্ব বা দ্বন্দ্বে না যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘ম্যাডাম জিয়া প্রধান উপদেষ্টার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে। তার এমন অবস্থান স্বাভাবিক।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.