ফারাক্কার প্রভাবসহ নদীতে কোমর বাঁধ দেয়ার নেতিবাচক ফল চুয়াডাঙ্গার খরস্রোতা মাথাভাঙ্গা নদী শুকিয়ে যাচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী মাথাভাঙ্গা নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। ফারাক্কা বাঁধের প্রভাব আর নদীর বুকে অসংখ্য কোমর বাঁধ দেওয়ার ফলে বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার হৃৎপি-খ্যাত মাথাভাঙ্গা নদীটি এখন মরে যাওয়ার উপক্রম। এক সময়ের খরস্রোতা নদীটি এখন চিকন খালে পরিণত হয়েছে। ফলে নদীর কোথাও কোথাও এখন হাঁটু সমান পানি। নদীটি খননের দাবি উঠলেও তা দীর্ঘদিন বাস্তবায়ন হয়নি। এতে সরকারের সদিচ্ছা হলে নদী ফিরে পাবে তার পুরোনো ঐতিহ্য এমনই মনে করেন জেলার মানুষ। জানা গেছে, মাথাভাঙ্গা নদীর দৈর্ঘ্য ১২১ কিলোমিটার। নদীটি পদ্মা থেকে উৎপত্তি হয়ে কুষ্টিয়া থেকে মেহেরপুর হয়ে চুয়াডাঙ্গা দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে। এ নদীর ঐতিহ্য হলো নিজস্ব স্রোতধারা। বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদী থেকে স্রোত প্রবাহিত হয়। কিন্তু শুকনো মৌসুমে নদীটির উৎপত্তিস্থল শুকিয়ে গেলেও নিজস্ব ঝরনা ধারা থেকে নদীর প্রবাহ ঠিক থাকে। আলমডাঙ্গার কৃষ্ণপুর গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি জহর উদ্দিন বিশ^াস বলেন, ‘আমরা দেখেছি শুকনো মৌসুমেও মাথাভাঙ্গা নদীতে বড় বড় মালবাহী নৌকা চলাচল করত।’ চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হাজরাহাটি গ্রামের বজলুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে মাথাভাঙ্গা নদী বয়ে গেছে। বছর বিশেক আগেও শুকনো মৌসুমে আমরা সাঁতার কেটে নদীর এপার ওপার করতাম। বর্তমানে মাথাভাঙ্গা নদীতে গ্রীষ্মকালে হাঁটু সমান পানি হয়। গোসল করা যায় না। কেউ কেউ বসে বসে কোনো রকম গোসল করে। তবে গা চুলকায়। দামুড়হুদা উপজেলার পার দামুড়হুদা গ্রামের তুহিন আলী জানান, ‘মাথাভাঙ্গা নদীতে প্রতি বছর অসংখ্য কোমর বাঁধ দেয় অসৎ মাছ শিকারী ও প্রভাবশালীরা। এতে নদীর স্রোত আটকে দিনদিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ বছরও নদীতে অসংখ্য বাঁধ রয়েছে। মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সী বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলন করে আসছি। ফারাক্কা বাঁধের প্রভাব, কোমার বাঁধ দেওয়া আর ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে নদীকে বাঁচানো যাচ্ছে না। নদীতে যারা বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করেন এবং ময়লা আবর্জনা ফেলেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত তেমন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। এ কারণে প্রতি বছরই বর্ষার শেষে প্রভাবশালী ও অসৎ মৎস্যশিকারীরা নদীর যেখানে সেখানে অসংখ্য কোমর বাঁধ দেয়।’ অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সী দাবি করে বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী মাথাভাঙ্গা নদীকে বাঁচাতে হলে সরকারকে পুনর্খননের উদ্যোগ নিতে হবে। খনন ও সংস্কার করলে মাথাভাঙ্গা নদী তার পুরোনো স্রোতধারা ফিরে পাবে।’ এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, মাথাভাঙ্গা নদীতে যারা কোমর বাঁধ দেয় তাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়, কিন্তু অনেক সময় অভিযুক্তদের পাওয়া যায় না। মাথাভাঙ্গা নদী পুনর্খননের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো আছে। প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন হলে মাথাভাঙ্গা নদী নতুনভাবে প্রাণ ফিরে পাবে।’

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More