ভারতের অভ্যন্তরে দামুড়হুদার ঝাজাডাঙ্গার বাবুকে গুলি করে হত্যা বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান : মরদেহ অপেক্ষায় স্বজনেরা
দর্শনা অফিস: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সুলতানপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে ইব্রাহিম বাবু (৩২) নামের এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার দুপুরে সীমান্তের ৭৯ নম্বর আন্তর্জাতিক মেইন পিলারের প্রায় ২০০ গজ ভেতরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ইব্রাহিম বাবু দামুড়হুদার ঝাজাডাঙ্গা গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে। তার পরিবারের দাবি ইব্রাহিম একজন কৃষক তিনি কোনো চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। নূর ইসলাম ও স্ত্রী জেসমিন খাতুন বলেন, ‘দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আমার ছেলে বাবুসহ চার-পাঁচজন গরুর জন্য ঘাস কাটতে সীমান্তসংলগ্ন গালার মাঠে যায়। অসাবধানতাবশত তারা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। বস্তাভর্তি ঘাস দেখে ভারতের নদীয়া জেলার গেদে ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা ৭৯ নম্বর পিলারের কাছাকাছি গুলি ছোড়ে। গুলিতে বাবু ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়।’ সীমান্ত থেকে বিএসএফ গুলিবিদ্ধ বাবুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পথেই মারা যান। বাবুর লাশ কৃষ্ণগঞ্জ থানা হেফাজতে রয়েছে। বিজিবি প্রতিবাদ জানিয়ে লাশ ফেরত চেয়েছে।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, বাবু বেশ কিছুদিন ধরে সীমান্তে বিভিন্ন ধরণের চোরাচালানের সাথে জড়িত। প্রতিদিনের মতো গতকাল বুধবারও বাবুসহ ৫/৬জন ভারতের নদীয়া জেলার কৃষ্ণগঞ্জ থানার হালদারপাড়া সীমান্তে চোরাচালানী পণ্য বহন করার সময় টহলরত বিএসএফ সদস্যরা ধাওয়া করে। এ সময় বিএসএফ সদস্যরা চোরাচালানীচক্রকে লক্ষ্য করে পরপর ২ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করেছে। ইব্রাহিম বাবু গুলিতে আহত হলে তাকে উদ্ধার করে বিএসএফ সদস্যরা নেয় কৃষ্ণগঞ্জ হাসপাতালে।
একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, হাসাপাতালে নেয়ার পথেই মারা যান বাবু। বাবুর লাশ বিকেলের দিকে রাখা হয় কৃষ্ণগঞ্জ থানা পুলিশের হেফাজতে। গতকাল বুধবার বাবুর লাশ কৃষ্ণনগর হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্ত হতে পারে। এদিকে সীমান্তে গুলি বর্ষণ ও বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যার ঘটনায় কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে বিএসএফকে পত্র দিয়েছে সুলতানপুর বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার। সেই সাথে ফেরত চাওয়া হয়েছে এক সন্তানের জনক বাবুর লাশ। খবর পেয়ে নিহত বাবুর বাড়িতে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে যান দর্শনা থানা অফিসার ইনচার্জ শহীদ তিতুমীর।
জানা গেছে, পুলিশ ও বিজিবি সন্ধান নিচ্ছে বাবুর বাকী সঙ্গীদের নাম পরিচয়। বিএসএফ’র গুলিতে বাবুর নিহতের খবরে পরিবারে শুরু হয় কান্নার রোল। বাবা-মা ও স্ত্রী’র আহাজারিতে এলাকার বাতাশ ভারি হয়ে উঠে। স্বজনেরা বাবুর লাশ পাওয়ার অপেক্ষার প্রহর গুনছে। তবে কবে ও কখন নাগাদ বাবুর লাশ ফেরত পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের ৬নং ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ‘দুপুরে ঘাস কাটার জন্য সীমান্ত এলাকায় যায় বাবু। সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের ভেতরে প্রবেশ করলে বিএসএফ তাকে গুলি করে হত্যা করে মরদেহ নিয়ে যায়। আমরা ইব্রাহিম বাবুর লাশ দ্রুত ফেরত চাই।’
দর্শনা থানার ওসি শহিদ তিতুমীর বলেন, ‘আমরা নিহতের গ্রামে গিয়ে তার পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা বলেন, ‘বাবু অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। বিএসএফের গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে। বিজিবি-বিএসএফ পর্যায়ে আলোচনা চলছে। আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মরদেহ ফেরত আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
চুয়াডাঙ্গা ৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাজমুল হাসান জানান, ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই ভারতের ৩২ ব্যাটালিয়নের বিএসএফ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, একটি সোনা চোরাকারবারি দলের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। নাজমুল হাসান বলেন, ‘আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছি।’
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.