মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন চুয়াডাঙ্গার সাবেক এমপি ছেলুন জোয়ার্দ্দার জানাজায় সাধারণ মানুষের ঢল : দল-মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের প্রিয় নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় শহরের ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটির মাঠে গার্ড অব অনার শেষে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সহযোদ্ধা, শুভানুধ্যায়ী ও সাধারণ মানুষের ঢল নামে। দল-মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ তাদের প্রিয় নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। জানাজার আগে বীর মুক্তিযোদ্ধা ছেলুন জোয়ার্দ্দারকে রাষ্ট্রের পক্ষে গার্ড অব অনার প্রদান করে জেলা পুলিশের একটি দল ও চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নয়ন কুমার রাজবংশী। জানাজায় অংশ নেন জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরে দুপুর সাড়ে ১২টায় চুয়াডাঙ্গার জান্নাতুল মাওলা কবরস্থানে মা আছিয়া বেগমের কবরের পাশে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার দাফন সম্পন্ন হয়। জানাজার আগে মরহুমকে গার্ড অব অনার দেয়া হয় এবং ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে। এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। গতকাল শনিবার সকালে তার মৃতদেহ চুয়াডাঙ্গায় পৌঁছায়। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। আগেও তিনি ভারত ও ব্যাংককে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। গত বছরের ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিবারসহ আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগ নেতা ছেলুন। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ভারতে এবং ব্যাংককে চিকিৎসা নেন। সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে ঈদের পরদিন (৮ জুন) ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর খবর পেয়ে ওই রাতেই হাসপাতালে ছুটে যান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ, সাবেক পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু, দর্শনা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব গোলাপ ফারুক আরিফসহ নেতাকর্মীরা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলা ৭৯ বছর। তিনি স্ত্রী, একমাত্র কন্যা, ভাইবোন, আত্মীয়-স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ওই দিন (শুক্রবার) রাত ১১টায় রাজধানীর গুলশানের আজাদ মসজিদে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তব্য দেন মরহুমের মেজ ভাই রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন। যিনি ৫ আগস্টের পর এই প্রথম প্রকাশ্যে এলেন। সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ১৯৭১ সালে মুকুট বাহিনীর সদস্য হিসেবে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। পরে ১৯৭৩ সালে চুয়াডাঙ্গা মহকুমা যুবলীগের সভাপতি হন তিনি। ১৯৭৯ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য মনোনীত হন। দশম জাতীয় সংসদের হুইপ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। রাজনীতির বাইরেও চুয়াডাঙ্গার শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নে তার অবদান ছিলো। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, যার আমৃত্যু চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উচ্চশিক্ষায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তিনি দীর্ঘদিন চুয়াডাঙ্গা রাইফেল ক্লাব, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্ব পালন করেন। মরহুমের ভাতিজা ও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার জানান, মৃত্যুর আগে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। তার মরদেহ শনিবার সকালে চুয়াডাঙ্গায় আনা হয়। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন তার ভাইয়ের ছেলে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সাবেক সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুল হক, সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লাভলু, চুয়াডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের, যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক শামসুদ্দোহা মল্লিক হাসু, চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাড. শফিকুল ইসলাম শফি, আব্দুর রশিদ, রেজাউল করিম, সিরাজুল ইসলাম আসমান, রাসেদুজ্জামান বাকি, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কবিরসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More