যেভাবে জীবনসঙ্গী বেছে নেবেন, ইসলাম কী বলে?

স্টাফ রিপোর্টার:মানুষের জীবন এক দীর্ঘ যাত্রা। জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি এই যাত্রায় অসংখ্য মানুষের সঙ্গে পরিচয় হলেও, সবচেয়ে কাছের সঙ্গী হন সেই ব্যক্তি, যার হাত ধরা হয় বাকি জীবনের পথচলার জন্য।

তিনি কেবল জীবনের সাথী নন, বরং আত্মার প্রশান্তি, হৃদয়ের আশ্রয়, আর আগামী প্রজন্মের বীজতলা। তাই জীবনসঙ্গী নির্বাচন নিছক ব্যক্তিগত রুচি নয়, এটি আধ্যাত্মিক ও সামাজিক এক মহৎ সিদ্ধান্ত।

ইসলাম এই নির্বাচনকে দেখেছে সর্বোচ্চ মর্যাদায়।

কুরআনে আল্লাহ বলেন,“তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই জীবনসঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া স্থাপন করেছেন”। (সুরা রূম, আয়াত ২১)

এই আয়াত দাম্পত্যকে শুধু একটি সামাজিক বন্ধন হিসেবে নয়, বরং আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরে। এখানে সংসারকে চিহ্নিত করা হয়েছে প্রশান্তির আশ্রয়, আর ভালোবাসা ও দয়ার স্রোতধারারূপে।

নবী করীম সা. এক হাদিসে জীবনসঙ্গী বাছাইয়ের চারটি সাধারণ কারণ উল্লেখ করেছেন—সম্পদ, বংশ-মর্যাদা, সৌন্দর্য এবং ধর্মপরায়ণতা। তারপর তিনি সুস্পষ্টভাবে উপদেশ দিয়েছেন, “ধর্মপরায়ণ জীবনসঙ্গীকেই বেছে নাও, তাতেই তোমার কল্যাণ”। (বুখারি ৫০৯০, মুসলিম ১৪৬৬)

এই শিক্ষার মধ্যে আছে দাম্পত্যের প্রকৃত ভিত্তি। সম্পদ বিলীন হয়, সৌন্দর্য ম্লান হয়ে যায়, বংশগৌরবের জৌলুস ক্ষয় হয়ে যায়, কিন্তু তাকওয়া ও নৈতিকতার আলো সংসারকে টিকিয়ে রাখে দীর্ঘকাল, দুঃখ-ক্লান্তির মাঝেও।

ইমাম গাজ্জালি রহ. তার ইহইয়াউ উলুমুদ্দীন-এ লিখেছেন, একজন জীবনসঙ্গী হওয়া উচিত এমন, যিনি চরিত্রে নির্মল, স্বভাবে কোমল, আর আল্লাহভীরু। কেননা বিবাহ কেবল পার্থিব আকর্ষণের জন্য নয়, এটি হলো আধ্যাত্মিক সহযাত্রা, যেখানে দুইজন মানুষ একে অপরকে জান্নাতের পথে এগিয়ে দেয়।

এই দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জীবনসঙ্গী নির্বাচন মানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভিত্তি নির্মাণ। যে ঘরে তাকওয়াপূর্ণ বাবা-মা থাকেন, সেখানে সন্তানের লালনপালনও হয় ঈমানের আলোয়। আর যে সংসারের ভিত কেবল বাহ্যিক মোহে গড়া, সে সংসার ভেঙে পড়তে সময় লাগে না।

ইসলাম তাই আমাদের শিক্ষা দেয়, দাম্পত্যকে দেখো না কেবল দুইজন মানুষের মিলন হিসেবে, বরং দেখো এক আধ্যাত্মিক যাত্রার সূচনা হিসেবে। জীবনসঙ্গীকে খুঁজে নাও এমন, যিনি শুধু ঘরের মানুষ হবেন না, বরং হবেন আত্মার প্রশান্তি, দুঃসময়ের অবলম্বন, আর জান্নাতের পথে সহযাত্রী।

দাম্পত্য আসলে এক দীর্ঘ কবিতা। এই কবিতা রূপ বা সম্পদের কালি দিয়ে লেখা যায় না, এটি লেখা হয় তাকওয়া, দয়া ও ভালোবাসার অক্ষরে। ইসলাম সেই কবিতার খসড়া আমাদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে, এখন বাকি শুধু তা বাস্তব জীবনে সুন্দর করে রচনা করা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More