স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই প্রথমবার একক সমাবেশ ডেকেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সাত দফা দাবিতে আজ দুপুর ২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জাতীয় সমাবেশ’ শুরু হবে। এর আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াত দলীয়ভাবে কোনো সমাবেশ করেনি। তবে বিভিন্ন দলের সঙ্গে এবং জোটের ব্যানারে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ছিল। দলটির দায়িত্বশীল নেতারা জানান, সমাবেশে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি জনসমাগম ঘটবে। জামায়াতের উদ্দেশ্য-বড় ধরনের সমাবেশ করে রাজনীতির মাঠে নতুনভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করা। সমাবেশে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন। সমাবেশের মূল মঞ্চে জামায়াতের জাতীয় নেতা, জুলাইয়ের শহদীপরিবারের প্রতিনিধি এবং অন্যান্য দলের নেতারা থাকবেন। সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করেছে জামায়াত। সারা দেশ থেকে কয়েক লাখ লোক এ সমাবেশে অংশ নেবে বলে জানিয়েছেন নেতারা।
জামায়াত নেতারা জানান, ইতোমধ্যে সমাবেশ সফলভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দলের আমিরসহ শীর্ষ নেতারা ঢাকা মহানগরসহ দেশজুড়ে ব্যাপক গণসংযোগ, প্রস্তুতিসভা, মিছিল-সমাবেশসহ সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়েছেন। কয়েক হাজার বাস এবং কয়েক জোড়া ট্রেন রিজার্ভ করা হয়েছে। লঞ্চেও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সমাবেশে অংশ নেবেন। বিএনপিসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে সমাবেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো নেতা সমাবেশে যাবেন কি না, তা এ রিপোর্ট লেখা (রাত ৯টা) পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকার পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম, পল্টন ময়দানসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অতীতে অসংখ্য রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। কিন্তু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কখনোই এককভাবে বড় সমাবেশ করেনি দলটি। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে গা ঝাড়া দিয়ে উঠেন দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘জাতীয় সমাবেশ’ করার মাধ্যমে নিজেদের সাংগঠনিক সক্ষমতা জানান দিতে চাইছে দলটি।
জানা যায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ৭ দফা দাবিতে আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ করবে জামায়াতে ইসলামী। দাবিগুলো হচ্ছে-সব গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন, প্রবাসীদের ভোট দেয়ার ব্যবস্থা এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে সমতাভিত্তিক রাজনৈতিক পরিবেশ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করা।
জাতীয় সমাবেশ সফলের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে জামায়াতের নেতারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান একাধিকবার পরিদর্শন করেছেন। গতকাল শুক্রবার বিকালেও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উদ্যান পরিদর্শন করেন। এ সময় গোলাম পরওয়ার বলেন, সমাবেশে অসংখ্য মানুষের সমাগম হবে। অজু ও খাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা থাকবে। ১৫টি মেডিকেল বুথ স্থাপন করা হয়েছে। সেখানেও কমপক্ষে ৫০-৬০ হাজার পানির বোতল থাকবে।
তিনি বলেন, ৩৩টি এলইডি ডিসপ্লে, তিন শতাধিক মাইক, পর্যাপ্ত লাইটিং এবং গণমাধ্যমকর্মীদের বসার জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সমাবেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ৮টি উপকমিটি করা হয়েছে। সমাবেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়াও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, ডিএমপি কমিশনারসহ অন্যদের সঙ্গে কথা বলে সহযোগিতা চেয়েছি। তারাও সাধ্যমতো সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। সবার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় আমাদের প্রস্তুতি সমাপ্তি হয়েছে।
মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, সড়কপথ, রেলপথ ও নৌপথে সমাবেশের উদ্দেশে গত রাতেই অনেকে রওয়ানা হয়েছেন। ঢাকার বাইরে থেকে যেসব গাড়ি আসবে, সেগুলো রাখার স্পট নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিটি স্পটে জামায়াত-শিবিরের স্বেচ্ছাসেবকরা থাকবেন। সবমিলিয়ে সমাবেশ সফল করতে সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ঢাকা মহানগরীর জনসাধারণসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেন জামায়াতের সেক্রেটারি।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.