লিবিয়ায় নিহত ২৪ জনের পরিচয় মিলেছে : আহতদের মধ্যে ২ জনের বাড়ি চুয়াডাঙ্গায়

মাথাভাঙ্গা মনিটর: লিবিয়ায় মানব পাচারকারীদের গুলিতে নিহত ২৬ জন বাংলাদেশির মধ্যে ২৪ জনের পরিচয় মিলেছে। বাকি দুইজনের জানার চেষ্টা চলছে। আহতরা ত্রিপোলি মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহতদের মধ্যে বকুল হোসাইনের বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার বেলগাছির খেজুরতলা গ্রামে। বাপ্পি নামের গুলিবিদ্ধ অপরজনের বাড়িও চুয়াডাঙ্গায়, তবে তার বিস্তারিত ঠিকানা এখনও জানা সম্ভব হয়নি।
নিহতরা হলেন- গোপালগঞ্জের সুজন ও কামরুল, মাদারীপুরের জাকির হোসেন, সৈয়দুল, জুয়েল ও ফিরুজ, রাজৈরের বিদ্যানন্দীর জুয়েল ও মানিক, টেকেরহাটের আসাদুল, আয়নাল মোল্লা (মৃত) ও মনির, ইশবপুরের সজীব ও শাহীন, দুধখালীর শামীম, ঢাকার আরফান (মৃত), টাঙ্গাইলের মহেশপুরের বিনোদপুরের নারায়ণপুরের লাল চান্দ, কিশোরগঞ্জের ভৈরবের রাজন, শাকিল, সাকিব ও সোহাগ, রসুলপুরের আকাশ ও মো. আলী, হোসেনপুরের রহিম (মৃত) এবং যশোরের রাকিবুল। আহত ১১ জন হলেন- মাদারীপুর সদরের তীর বাগদি গ্রামের ফিরোজ বেপারী (হাঁটুতে গুলিবিদ্ধ), ফরিদপুরের ভাঙ্গার দুলকান্দি গ্রামের মো. সাজিদ (পেটে গুলিবিদ্ধ), কিশোরগঞ্জের ভৈরবের শম্ভপুর গ্রামের মো. জানু মিয়া (পেটে গুলিবিদ্ধ), ভৈরবের জগন্নাথপুর গ্রামের মো. সজল মিয়া (দুই হাতে মারাত্মকভাবে জখম), গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের বামনডাঙ্গা বাড়ির ওমর শেখ (হাতে মারাত্মকভাবে জখম ও আঙ্গুলে কামড়ের দাগ, দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ), টাঙ্গাইলের মহেশপুরের বিনোদপুরের নারায়ণপুরের মো. তরিকুল ইসলাম (২২), চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার বেলগাছির খেজুরতলার মো. বকুল হোসাইন (৩০), মাদারীপুরের রাজৈরের কদমবাড়ির মো. আলী (২২), কিশোরগঞ্জের ভৈরবের সখিপুরের মওটুলীর সোহাগ আহমেদ (২০), মাদারীপুরের রাজৈরের ইশবপুরের মো. সম্রাট খালাসী (২৯) এবং চুয়াডাঙ্গার বাপ্পী (মাথায় গুলিবিদ্ধ)। এরা সবাই ত্রিপোলি মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় লিবিয়ায় ৩৮ বাংলাদেশির পরিণতি
উন্নত জীবিকার সন্ধানে ইউরোপ যাওয়ার জন্য লিবিয়ায় দুর্গম পথ পাড়ি দেওয়া ৩৮ বাংলাদেশির করুণ পরিণতির তথ্য পাওয়া গেছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় উঠে এসেছে তাদের রোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা। কীভাবে প্রতারিত হয়েছে তারা তারও খণ্ডচিত্র উঠে এসেছে তাতে। ৩৮ জনের মধ্যে বৃহস্পতিবার মিলিশিয়াদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ জন। বাকী ১১ জন হাসপাতালে আর একজন আছেন আত্মগোপনে। আহত ১১ জনের মধ্যে দুজনের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলায়।
শুক্রবার আত্মগোপনে থাকা ওই ব্যক্তির বরাত দিয়েই ঘটনার একটি বর্ণনা দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
তাদের পরিণতির কথা তুলে ধরে শুক্রবার এক ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, দূতাবাসের সহায়তায় আহত ১১ জনকে মিজদাহ থেকে ত্রিপোলিতে আনা হয়েছে। ছয়জন পুরোপুরি সুস্থ হলেও পাঁচজনের অবস্থা সঙ্গীন। “এর মধ্যে তিনজনের অপারেশন হয়েছে, দুইজনের হবে। তাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বুলেট ঢুকেছে। বুলেট বের করার চেষ্টা হয়েছে।”
২৬ জনের মৃতদেহ মিজদাহ হাসপাতালের মর্গে আছে জানিয়ে মোমেন বলেন, “আমরা আইওমের (ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন) সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তাদের একটা ব্যবস্থা করার জন্য। আমরা দাবি করেছি, এদেরকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য। “আমরা দাবি করেছি, পাচারকারীদের শাস্তি দিতে এবং তার তথ্য আমাদের দিতে। আমরা সেগুলো সংরক্ষণ করব।” পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার লিবিয়ার ত্রিপলি হতে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণের শহর মিজদাহতে এ ঘটনা ঘটেছে। সেখানে বাংলাদেশিদের সঙ্গে প্রাণ গেছে চার আফ্রিকান অভিবাসীর। এতে বলা হয়, আক্রান্তদের মধ্যে সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যাওয়া এক বাংলাদেশি টেলিফোনে জানিয়েছেন, তিনি লিবিয়ার একজন নাগরিকের আশ্রয়ে আত্মগোপনে আছেন। তিনি দূতাবাসকে আরও জানান, ১৫ দিন আগে বেনগাজি থেকে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে কাজের সন্ধানে মানবপাচারকারীরা এসব বাংলাদেশিকে ত্রিপোলিতে নিয়ে আসছিলেন। এ সময় তিনিসহ মোট ৩৮ জন বাংলাদেশি মিজদাহ শহরের কাছে লিবিয়ান মিলিশিয়া বাহিনীর হাতে জিম্মি হন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “যিনি পালিয়ে এসেছেন, তিনি বলেছেন, তারা একেকজন ৮ থেকে ১০ হাজার ডলার দিয়ে গিয়েছেন, ওরা আরও টাকা চাচ্ছিল এবং ওদেরকে খুব অত্যাচার করে। কিন্তু ওরা দিতে রাজি হয়নি, বচসা হয়।” বচসার এক পর্যায়ে তাদের সঙ্গে থাকা একজন আফ্রিকান মূল পাচারকারীকে মেরে ফেলা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “মারার পরপর মূল পাচারকারীর পরিবার এবং বাকী পাচারকারীরা এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। ওরা একই জায়গা ছিল। এলোপাতাড়ি গুলিতে আমাদের ২৬ জন ভাই মারা যায়। ১১ জন আহত হয়।” কোনোমত বেঁচে ফেরা ওই ব্যক্তি প্রথম এসে যে ফার্মেসিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, পাচারকারীরা এসে সেটিও তছনছ করে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ওই ব্যক্তির বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে মোমেন বলেন, “কোনোমতে লুকিয়ে আছেন। উনি বলছেন, খবর পরে জানাবেন।” মিজদাহ শহরের বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতির বর্ণনাও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়, অঞ্চলটি এখন দুটি শক্তিশালী পক্ষের যুদ্ধক্ষেত্র। কিছুদিন আগে ত্রিপোলিভিত্তিক এবং জাতিসংঘ সমর্থিত জিএনএ সরকার এই অঞ্চলটি দখল করে নিলেও জেনারেল হাফতারের নেতৃত্বাধীন পূর্বভিত্তিক সরকারি বাহিনী দুইদিন আগেও শহরটিতে বোমাবর্ষণ করেছে। ত্রিপোলিভিত্তিক সরকারের এ অঞ্চলের উপর নিয়ন্ত্রণ ছিল অত্যন্ত ক্ষীণ। বর্তমানে ত্রিপোলি শহরেও বিরোধীপক্ষ মাঝে মাঝে বোমাবর্ষণ করে। মন্ত্রলালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দু’টি শক্তিশালী পক্ষ যুদ্ধরত থাকায় জীবনযাত্রা স্বাভাবিক নয়। এ কারণে অধিকাংশ দেশ তাদের দূতাবাস তিউনিসিয়াতে সরিয়ে নিলেও বাংলাদেশসহ মাত্র তিনটি দেশ তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এ প্রতিকূল অবস্থাতেও প্রবাসী বাংলাদেশিদের সেবা দিচ্ছে। এই অবস্থার মধ্যে ভাগ্যাহত ব্যক্তিদের জন্য সেভাবে কাজ করা সম্ভব না হওয়ার কথা তুলে ধরে আব্দুল মোমেন বলেন, “আহতদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিতের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস লিবিয়ার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং আইওএম লিবিয়ার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখছে। তারা আহত ব্যক্তিদের সম্ভাব্য সহায়তা প্রদান করছেন।” তিনি বলেন, “ওখানে এখানে মিলিশিয়ার রাজত্ব। সেহেতু ওদেরকে ধরে এনে শাস্তি দেওয়া কখন হবে, আমরা জানি না। আমাদের মিশন তদন্ত করে যারা দায়ী তাদেরকে চিহ্নিত এবং শাস্তি দেওয়ার জন্য বলেছে।” মানুষকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এটা প্রথম ঘটনা নয়, আরও আগে এরকম ঘটনা ঘটেছে। এই পাচারকারীরা যদি সক্রিয় থাকে, এ ধরনের ঘটনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।” বাংলাদেশের যেসব এজেন্সি বা ব্যক্তি এই পাচারের সঙ্গে জড়িত, সুস্থ ব্যক্তিদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে তাদেরকে চিহ্নিত করা হবে বলে জানান তিনি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More