শিশু মননে আলোর ফুল ফোটে ধর্মীয় শিক্ষায়

ইসলামি শরিয়তে সন্তানের সঠিক পরিচর্যা, নৈতিক উন্নয়ন, পারলৌকিক ও পার্থিব কল্যাণ, উত্তম গুণাবলি, তাকওয়া-তাহারাত, আত্মশুদ্ধি ও আদর্শ নৈতিকতা গড়ে তোলার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কুরআনুল কারিমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন : ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর; যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফিরদের জন্য।’ (সূরা তাহরিম : ৬।)

হজরত আলী (রা.) এ আয়াতের তাফসিরে বলেন, ‘তোমরা সন্তানদের উত্তম শিষ্টাচার শিখাও।’ উম্মাহর ফকিহগণ এ ব্যাপারে একমত যে, ‘প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর ফরজ হলো, সে যেন তার স্ত্রী-সন্তানকে দ্বীনি ফরজ শিক্ষা, হালাল-হারামের বিধান এবং ইমানি দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে শিক্ষা দেয় এবং আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে।’

সন্তান গঠনের গুরুত্ব কতটুকু, তা আমরা রাসূল (সা.)-এর হাদিস থেকেও জানতে পারি। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, সাহাবায়ে কেরাম একবার জিজ্ঞেস করলেন : ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তো পিতা-মাতার হক জানলাম; এখন বলুন, সন্তানের কী কী হক রয়েছে আমাদের ওপর?’ তিনি বললেন : ‘তাদের সুন্দর নাম রাখ এবং তাদের উত্তম শিক্ষা ও আদব শেখাও।’ (সুনানে বায়হাকী।) আরেক হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, ‘কোনো বাবা তার সন্তানকে আদবের চেয়ে উত্তম কিছু দান করতে পারে না।’ (বুখারি।)

অর্থাৎ, সন্তানকে সুশিক্ষা ও শিষ্টাচার শেখানোই পিতার পক্ষ থেকে সন্তানের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার।

শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ স্থপতি। যদি তাদের সঠিকভাবে গড়ে তোলা যায়, তাহলে সমাজের ভিত্তিই হয় দৃঢ় ও মজবুত। কারণ একটি ভালো গাছই ভবিষ্যতে দেয় ছায়া, ফুল ও ফলে ভরে ওঠে। তেমনিভাবে আজকের একটি শিশুই ভবিষ্যতে হয়ে উঠতে পারে মহান সমাজ সংস্কারক।

শৈশবের শিক্ষা ও চরিত্রগঠন পাথরে খোদাইয়ের মতো স্থায়ী ও সুগভীর হয়। এ সময় যদি সন্তানকে সঠিকভাবে গড়ে তোলা না হয়, তাহলে বড় হয়ে তারা সাধারণত সঠিক পথে আসে না। তাই তাদের খারাপ কাজ ও চরিত্রের জন্য প্রথম দায়ী হবে তার পিতা-মাতা, যারা তাকে ছোটবেলায় গড়ে তোলেনি।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা.) বলেন, ‘তোমাদের সন্তানদের শিষ্টাচার শেখাও। কিয়ামতের দিন তোমাদের কাছে জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমরা তাদের কী শিক্ষা দিয়েছিলে এবং কেমন আদব শিখিয়েছিলে?’ (শুআবুল ঈমান।)

সন্তানকে গঠন করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন তার মা। সন্তানের জীবনে সবচেয়ে প্রভাবশালী জায়গা হচ্ছে মায়ের কোল। একজন মা যদি দ্বীনদার, পরহেজগার, বিশ্বস্ত, দায়িত্ববান, মেহমানপরায়ণ, দরিদ্র-অসহায়ের সহায় এবং আদর্শ শিক্ষায় শিক্ষিত হন, তাহলে সেই মায়ের ছায়ায় বেড়ে ওঠা সন্তান খুব দ্রুতই হয়ে ওঠে সচ্চরিত্রবান, ন্যায়পরায়ণ, জ্ঞানপিপাসু এবং সমাজের আলোকবর্তিকা। ইতিহাসে দেখা যায়, মহান ব্যক্তিদের গঠনের পেছনে তাদের মায়েদের ভূমিকা ছিল বিস্ময়কর।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More