ইসলামের আধ্যাত্মিক ইতিহাসে কিছু শব্দ আছে, যেগুলো উচ্চারণ করলেই হৃদয় রহস্যময় আলোয় ভরে ওঠে। “সিদরাতুল মুনতাহা” তেমনই এক পরিভাষা।
কুরআনের সূরা আন-নাজমে আল্লাহ তাআলা এই মহিমান্বিত সত্তার উল্লেখ করেছেন। সেখানে বর্ণিত হয়েছে, নবী করিম সা. মেরাজের রাতে পৌঁছেছিলেন সেই মহাবৃক্ষের কাছে, যার পাশে আছে জান্নাতুল মাওয়া।
মুফাসসিররা বলেন, সিদরাতুল মুনতাহা সপ্তম আসমানে অবস্থিত এক মহাবৃক্ষ, যেখানে গিয়ে থেমে যায় সব সৃষ্টির যাত্রা। ফেরেশতারা পর্যন্ত এর পরে আর অগ্রসর হতে পারে না।
রাসুলুল্লাহ সা. মেরাজের রাতে সেখানে পৌঁছেছিলেন বিশেষ মর্যাদায়, যা আর কারো জন্য নির্ধারিত হয়নি।
ইমাম নববী (রহ.) তার ব্যাখ্যায় লিখেছেন, সিদরাতুল মুনতাহা সেই সীমানা, যেখানে এসে থেমে যায় ফেরেশতাদের জ্ঞান, নবীদের যাত্রা এবং মানুষের কল্পনা। এর পরের জগত আল্লাহর অনন্ত মহিমা ছাড়া আর কিছুই নয়।
এর নামকরণও অর্থবহ। ‘সিদরাহ’ মানে বড় বৃক্ষ, আর ‘মুনতাহা’ মানে সমাপ্তি। অর্থাৎ এটি সেই বৃক্ষ, যার কাছে এসে শেষ হয়ে যায় সব কিছুর গমন।
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, এখানে এসে সমস্ত সৃষ্টির জ্ঞান সমাপ্ত হয়, এর পরে আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না, কেবল আল্লাহর জ্ঞানের অসীম ভাণ্ডার।
রাসুলুল্লাহ সা. এর সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, এর পাতাগুলো হাতির কানসম বড়, আর ফলগুলো বিশাল পাত্রের মতো। সহিহ মুসলিমে এসেছে, যখন আল্লাহর নূর এটিকে আচ্ছন্ন করে, তখন এর সৌন্দর্য এমন হয়ে ওঠে যে কোনো সৃষ্টি তা বর্ণনা করতে সক্ষম নয়।
সিদরাতুল মুনতাহা শুধু আসমানি এক স্থান নয়; এটি প্রতীকও বটে। এটি সীমারেখার প্রতিচ্ছবি, যেখানে এসে মানুষ উপলব্ধি করে জ্ঞানেরও এক সীমা আছে, শক্তিরও এক সীমানা আছে। এরপর থাকে কেবল আল্লাহর সীমাহীন মহিমা।
মেরাজের রাত তাই আমাদের শেখায়, জীবনের সেরা উচ্চতাও আসলে সীমাবদ্ধ, আর সীমাহীন কেবল আল্লাহর সান্নিধ্য।
তথ্যসূত্র: সুরা আন-নাজমের আয়াত (১৩-১৮), সহিহ বুখারির ৩৪৯ নম্বর হাদিস, সহিহ মুসলিমের ১৬৪ নম্বর হাদিস, ইমাম নববীর শরহ মুসলিম এবং তাফসিরে ইবনে কাসির।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.