নারীকে ঘিরে সভ্যতার গল্পে কত রঙ, কত বৈপরীত্য! কোথাও তিনি নিছক গৃহের আবদ্ধ বন্দিনী, কোথাও বা সভ্যতার ইতিহাস রচয়িতা।
ইসলাম আবির্ভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নারীরা পেল এক নতুন মর্যাদা—তারা আর অবহেলিত নন, বরং হয়েছেন সম্মানিত সহচর।
হযরত খদিজা (রা.)–এর ব্যবসায়িক সাফল্য কিংবা উহুদের প্রান্তরে নুসাইবা বিনতে কাব (রা.)–এর অমর সাহস স্মরণ করিয়ে দেয়, নারী কেবল পর্দার অন্তরালেই নন, বরং সমাজ ও ইতিহাসের সম্মুখভাগেও ছিলেন দীপ্ত।
তবু ইসলাম নারীর হাতে সব দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়নি। কুরআনের আয়াত স্পষ্ট ঘোষণা দেয় “পুরুষেরা নারীদের দায়িত্বশীল… কারণ তারা তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে থাকে।” (সূরা নিসা, ৩৪)
অর্থাৎ সংসারের ভরণপোষণ পুরুষের দায়িত্ব। স্ত্রী যদি কাজ করেন, তা হবে তার ইচ্ছায়; তার উপার্জন তার নিজের। সংসার চালানো তার কর্তব্য নয়, তার কাঁধে বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার কারও নেই।
কিন্তু বাস্তবতা কত ভিন্ন! বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক জরিপ জানায়, শ্রমশক্তির এক-তৃতীয়াংশ নারী। তারা স্কুল-কলেজ, ব্যাংক-বীমা, হাসপাতাল কিংবা শিল্প-কারখানায় সমানতালে অবদান রাখছেন।
রাষ্ট্রের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছেন, পরিবারকে করছেন স্বাবলম্বী। কিন্তু এর উল্টো পিঠও আছে। অনেক নারী চাকরিকে বেছে নেন না স্বপ্ন হিসেবে, বরং সংসারের চাপ হিসেবে তারা কর্মক্ষেত্রে নামতে বাধ্য হন। তাদের উপার্জনকে ভালোবাসার প্রমাণ নয়, বরং দায়মোচনের হাতিয়ার হিসেবে দেখা হয়।
এখানেই ইসলামি নীতির সঙ্গে সংঘাত—কারণ ইসলাম নারীকে দেয় স্বাধীনতার স্বাদ, কিন্তু চাপিয়ে দেওয়া দায়িত্বের তিক্ততা অনুমোদন করে না।
সংসারকে যদি রূপকের আয়নায় দেখি, তবে তা এক অশ্বত্থ বৃক্ষের মতো। শেকড়ে জল ঢালে স্বামী, ছায়ায় প্রশান্তি দেয় স্ত্রী। শেকড় শুকিয়ে গেলে বৃক্ষ ভেঙে পড়ে, ছায়া হারালে বৃক্ষ হয়ে ওঠে নিষ্প্রাণ।
তাই দাম্পত্য টিকে থাকে ভারসাম্যে—যেখানে দায়িত্ব থাকে পুরুষের কাঁধে, আর ভালোবাসা ও মর্যাদার ছায়ায় আশ্রয় পান নারী। চাকরি এলে তা হবে স্বেচ্ছায়, সম্মানের পথ ধরে, নয়তো তা পরিণত হবে অশান্তির ছাইয়ে।
আজকের সমাজ তাই নতুন করে মুখোমুখি হচ্ছে সেই প্রশ্নের, যেটি কুরআন আর ইতিহাস বহু আগে উচ্চারণ করেছিল—নারীর কাজের অধিকার আছে, কিন্তু তাকে কি কাজে বাধ্য করা যায়?
উত্তরটি স্পষ্ট: নেই। তার স্বাধীনতা সম্মানের সঙ্গে রক্ষিত না হলে, কর্মজীবন আশীর্বাদ নয়, অভিশাপে রূপ নেয়। আর এই সত্যই নির্ধারণ করবে আমাদের সমাজের ভবিষ্যৎ, দাম্পত্যের প্রশান্তি ও ইসলামী নীতির মর্যাদা।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.