অনার্স শেষ না করা চুয়াডাঙ্গার জেরিন ঘরে বসেই মাসে আয় করছেন ৪০ হাজার টাকা

আফজালুল হক: পড়াশোনার পাশাপাশি হাতে চকলেট তৈরি করেন জেরিন। তার বানানো চকলেট অনলাইনের মাধ্যমে যাচ্ছে দেশে এবং দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশে। পেয়েছেন ব্যাপক সাড়া। ঘরে বসে অনলাইনে এভাবে প্রতি মাসে তিনি আয় করেন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। উদ্যোক্তা জেরিন তাসনিম বৃষ্টি সৃজনশীল কাজের প্রতি বেশি আগ্রহী। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি এটা-সেটা করতে করতে নিজেকে থিতু করেন চকলেট উদ্যোক্ত হিসেবে। স্বাবলম্বী হতে এখন এটাকেই বেছে নিয়েছেন তিনি। জেরিন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাবা জাহাঙ্গীর আলম ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মারা যান। মা গৃহিণী। দুই ভাই-বোনের মধ্যে তিনি বড়। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বেলগাছি মুসলিমপাড়ায় মা-ভাইকে নিয়ে বসবাস করেন তিনি। শুরুটা ২০২১ সালের মাঝামাঝি। জেরিন নিজের ফেসবুক পেজে চকলেটের ছবি ও দাম লিখে পোস্ট দেন। এরপর ক্রেতারা তার সঙ্গে যোগাযোগ করে চকলেট কিনে নেন। কুরিয়ারের মাধ্যমেও চকলেট পাঠাতে শুরু করেন ক্রেতাদের কাছে। এভাবে আস্তে আস্তে অনলাইনে পরিচিতি হয়ে ওঠে।

জেরিন তাসনিম বৃষ্টি দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, অনেক দিন ধরে ইচ্ছা ছিলো পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু একটা করবো, যেটা চুয়াডাঙ্গায় আগে কেউ করেননি। ফেসবুকে অনেক উদ্যোক্তাকে দেখতাম। তারা কীভাবে পণ্য নিয়ে কাজ করেন, তা লক্ষ্য করতাম। পরে আমার এক বান্ধবীর পরামর্শে ২০২১ সালে হাতে চকলেট বানানোর কাজ শুরু করি। অনলাইনে পোস্ট করার পর থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।

প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার চকলেট বিক্রি করছি জানিয়ে বৃষ্টি বলেন, প্রকারভেদে ১০০ থেকে ১ হাজার টাকা দামের মধ্যে চকলেট তৈরি করে থাকি। আমার এই চকলেট অনেকে বিভিন্ন দেশে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের পরিবারের জন্য। তবে চকলেট বানানোর উপকরণ ও সামগ্রীগুলো পেতে আমাকে বেগ পেতে হচ্ছে। কারণ, চুয়াডাঙ্গায় এসব পাওয়া যায় না। ঢাকা কিংবা অন্য জেলা থেকে অর্ডার করে নিয়ে আসতে হয়। এতে আমার খরচ বেশি পড়ে।

তিনি আরও বলেন, প্রথমে আমি হতাশায় পড়ি পরিবার নিয়ে। কারণ, আমার বাবা বেঁচে নেই। পরিবারের হাল ধরতে চাই বলে জানালে পরিবার আমাকে সাপোর্ট দেন। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা অনলাইন উদ্যোক্তাদের গ্রুপ থেকেও অনেক সাপোর্ট পেয়েছি। এ কারণে আমি অল্পদিনে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি।  বাড়িতে বসেই অর্থ উপার্জনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। পরিবারকে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করছি। তবে পড়াশোনাকেই আমি প্রাধান্য দিচ্ছি। পরীক্ষার সময় হলে চকলেট বানানো কমিয়ে দিই, যোগ করে বলেন তিনি।

জেরিনের মা মরিয়ম বেগম মিলি দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, আমার মেয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজ হাতে চকলেট বানিয়ে অনলাইনে বিক্রি করছে। এতে প্রথমে আমার ইচ্ছা না থাকলেও পরে আর বাধা দিইনি। এখন তার বানানো চকলেট ব্যাপকভাবে সাড়া পেয়েছে। আমিও তার এ কাজে সহযোগিতা করি। প্রতিবেশীরাও জেরিন খুব ভালো চকলেট বানান, তা জেনে গেছে।

রোকেয়া নামের এক প্রতিবেশী বলেন, আমরা নিয়মিত চকলেট খাচ্ছি। তার বানানো চকলেট খুবই সুস্বাদু। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি উদ্যোক্তার কাজ করছেন, এটা দেখে সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীরাও উৎসাহী হচ্ছেন। অনেকে দেশে বেড়াতে এলে যাওয়ার সময় তার চকলেট কিনে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে।

দেশসেরা কৃষাণী ও তরুণ উদ্যোক্তা মেরিনা জামান মমি দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, চুয়াডাঙ্গায় উদ্যোক্তাদের মধ্যে জেরিন কনিষ্ঠ। সে পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়তি আয় করছে। তার চকলেট আসলেই সুস্বাদু। আমরা সব সময় তাকে সহযোগিতা করি। তাকে দেখে অন্য নারীরাও যেমন উৎসাহিত হচ্ছে, তেমনই অনলাইন উদ্যোক্তা বাড়ছে চুয়াডাঙ্গায়।

চুয়াডাঙ্গার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হাজি ইয়াকুব হোসেন মালিক দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, চুয়াডাঙ্গায় ভিন্ন ধরনের এক ইমেজ তৈরি করেছে অনলাইন বিজনেসে নারীর অংশগ্রহণ। বিদেশি পণ্যের পাশাপাশি দেশীয় খাঁটি পণ্য অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয় বাড়ায় প্রতিবছর চুয়াডাঙ্গায় কয়েক কোটি টাকা বেচাকেনা হচ্ছে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে জাতীয় অর্থনীতিতে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More