আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জের বিএনপি নেতা কামাল হত্যার তিন বছরেও ন্যায়বিচার সম্পন্ন না হওয়ার বেদনা পরিবারে

রহমান মুকুল: চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জের বিএনপি নেতা কামাল হোসেন হত্যা মামলার ধীরগতিতে হতাশ পরিবার। মুন্সিগঞ্জে বিএনপি নেতা ও ঠিকাদার কামাল হোসেনকে নির্মমভাবে হত্যার তিন বছর পূর্ণ হয়েছে শুক্রবার। ২০২২ সালের ১ মে রাতে শরিকানা জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ঘরজামাই স্বাধীন আলীর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী কামাল হোসেনকে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। মৃত্যুর আগে শেষবারের মতো স্ত্রীকে ঘাতক স্বাধীনের নাম বলেছিলেন কামাল হোসেন। মুন্সিগঞ্জের জেহালা গ্রামের মাঝেরপাড়ার মৃত জাহান আলী মাস্টারের ছেলে কামাল হোসেন ছিলেন একজন প্রজ্ঞাবান, স্পষ্টভাষী রাজনীতিক। থিঙ্ক ট্যাংক হিসেবে স্থানীয় বিএনপির ভরসার প্রতীক ছিলেন তিনি। পাশাপাশি একজন সৎ ঠিকাদার হিসেবেও তার পরিচিতি ছিল। ঘটনার পর নিহতের স্ত্রী সেলিনা খাতুন বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় ১১জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামি স্বাধীন আলীসহ ৯জনকে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন আসামি স্বাধীন আলী, রাহুল কুমার দাস এবং আশিকুর রহমান বাদশা। তবে মামলার এক পর্যায়ে আসামিরা হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্ত হন। এরপর থেকেই আদালতে আর হাজির হননি স্বাধীন আলী। ২০২৪ সালের ১৪ মে চুয়াডাঙ্গা সিনিয়র জজ মো. জিয়া হায়দার প্রধান আসামি স্বাধীনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন, কিন্তু তিনি ছিলেন পলাতক। গত বছর পুলিশ তাকে আবারও গ্রেফতার করে। স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, স্বাধীন আলী ছিলেন বামানগর গ্রামের দরিদ্র কাশেম আলীর ছেলে। কলেজ জীবনে বখে যাওয়া স্বাধীন প্রেমে পড়েন নাইমা নিগারের, যিনি ছিলেন বিত্তশালী পরিবারের সদস্য। পরিবার রাজি না থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাকে ঘরজামাই হিসেবে মেনে নেয়া হয়, এবং পারিবারিক জমি বিরোধে বখে যাওয়া স্বাধীনকে ‘তুরুপের তাস’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কামাল হোসেনের পরিবার বলছে, মামলা আদালতে থাকলেও বিচারপ্রক্রিয়ার গতি অত্যন্ত ধীর। তিন বছরে চার্জ গঠন হলেও খুব ধীর গতিতে চলছে আর্গুমেন্ট। আর্থিক সহায়তা নয়, নিহত কামাল হোসেনের পরিবার চায় দলের নেতাকর্মীরা পাশে থাকুক, জামিনে মুক্ত ঘাতকদের বিচার ত্বরান্বিত হোক। সেলিনা খাতুন বলেন, ‘স্বামীকে হারিয়ে আমরা নিঃস্ব। ওনার হত্যা মামলার বিচার না পেলে কী বলব সন্তানের কাছে? বিএনপির নেতাকর্মীদের বলছি টাকা নয়, আমাদের পাশে থাকুন। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে দলীয়ভাবে পদক্ষেপ নিন।’
আজ তিন বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেছে আত্মস্বীকৃত ঘাতকদের বিচার সম্পন্ন হবে কবে? বিলম্বের বিচার তো অবিচারের সামিল। কেন আলোচিত হত্যা মামলার বিচারে ধীর এই বিচার প্রক্রিয়া? পরিবারটি আশায় বুক বেঁধে আছে, কোনো একদিন হয়তো কামাল হোসেনের আত্মা শান্তি পাবে ন্যায়বিচারের সুবাতাসে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More