গতবার দাম বেশি পাওয়ায় এবার অনেক চাষি ঝুঁকেছিলেন কচু চাষে জীবননগরে মুখী কচু চাষ করে লোকসান গুনছেন চাষিরা

সালাউদ্দীন কাজল: জীবননগরে অধিক লাভের আশায় মুখী কচু চাষ করে এখন লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের। ব্যয়বহুল এ চাষে কৃষকদের বিঘা প্রতি ৪০-৪৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে। কচুর সঠিক বাজার মূল্য না থাকায় এখন পুঁজি হারানোর শঙ্কায় আছেন চাষিরা। গত বছর কচুর দাম বেশি পাওয়ায় এবার অনেক চাষি ঝুঁকেছিলেন কচু চাষে।
জীবননগর উপজেলার উথলী, আন্দুলবাড়ীয়া, রায়পুর, হাসাদাহ, বাঁকা, মনোরপুর ও সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এবার বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ার কারণে বেশিরভাগ জমির কচুর পাতাগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। পানিতে ভাসছে নিচু জমিতে চাষ করা মুখী কচু। দাম বেশি পাওয়ার আশায় অনেকে এখনো কচু বিক্রি না করে রেখে দিয়েছেন। কেউ আবার কচু তুলে খুচরা বিক্রি করছেন।
কৃষকরা জানান, মুখী কচু চাষে অন্যন্য চাষ ছাড়াও উৎপাদন খরচ বেশি এবং সময়ও বেশি লাগে। খ্বু ভালো মানের কচু হলে বর্তমানে বিঘা প্রতি ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিছু কচু বিঘা প্রতি ৫০ হাজার টাকার কমে বিক্রি হচ্ছে। বিঘা প্রতি ৮০ হাজার টাকার নিচে বিক্রি করলে তাদের পুঁজি হারাতে হবে বলে জানিয়েছেন।
জীবননগর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের কচু চাষি আবুল হোসেন বলেন, ৪০ শতক জমিতে কচু চাষ করে ৬০ হাজার টাকা খরচ করেছি। আবার জমির মালিককে লিজের জন্য দিতে হবে ২০ হাজার টাকা। এক মাস আগে খর্দ্দের ১ লাখ টাকা দাম বলেছিলো। আমার টার্গেট ছিলো ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করবো। কিন্তু এখন দাম বলছে মাত্র ৬০ হাজার টাকা। এই টাকায় কচু বিক্রি করলে সারের দোকানের বাকি ও জমি লিজের টাকা দিয়ে আমার কিছুই পুঁজি থাকবে না।
উথলী গ্রামের চাষি কৌশিক রহমান বলেন, দেড় বিঘা জমিতে কচু চাষ করেছি। জমির অর্ধেক কচু পানিতে ডুবে গেছে। উচু জমিতে কিছু কচু আছে সেগুলোও অতি বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে। মাটির নিচ থেকে কচু তুলে বাজারজাত করতে অনেক শ্রমিকের প্রয়োজন হবে। বাজারে পাইকারি প্রতি কেজি কচু ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এই দামে কচু বিক্রি করলে শ্রমিকদের খরচ পরিশোধ করলে টাকা শেষ হয়ে যাবে। বৃষ্টিতে ২ বিঘা অন্যন্য ফসল ডুবে গেছে। সব মিলিয়ে ১ লাখ টাকা লোকসান হবে।
উথলী গ্রামের লাবু মল্লিক নামে কচু চাষি বলেন, কচু চাষে অনেক খরচ। জমিতে একদিন পরপর সেচ দিতে হয়। এই চাষে অনেক সার দেয়া লাগে। আবার অনেক শ্রমিক খরচ হয়। গতবার এক বিঘা জমিতে কচু চাষ করে এক লাখ টাকায় বিক্রি করেছিলাম। কিন্তু এবার দাম বলছে তার অর্ধেক। কচু বিক্রি করার উপযুক্ত হলেও সঠিক বাজারমূল্য না থাকায় বিক্রি করছি না।
কচু ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ার কারনে কচুর চাহিদা কমে গেছে। এছাড়াও বাজারে আলুর দাম কম থাকার কারণে কচু ছাড়া মানুষ আলু বেশি খাচ্ছে। তবে বৃষ্টি কমার সাথে সাথে কচুর দাম কিছুটা উঠতে শুরু করেছে।
জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন জানান, চলতি বছরে জীবননগরে মুখী কচুর আবাদ হয়েছে ৬৩ হেক্টর জমিতে। ফলন আশা করছি বিঘা প্রতি ৯০ থেকে ১০০ মন করে হবে।
তিনি বলেন, এ বছর সব সবজিরই দাম কম। এ কারণে কৃষকদের আশানুরূপ লাভ হচ্ছে না। এছাড়া শ্রমিকসহ অন্যন্য সব উপকরণের দাম বেশি। আর কৃষকরা বেশি ফলনের আশায় জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করছেন। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে এবং জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হচ্ছে। এ কারণে কৃষকদেরকে জমিতে পরিমিত সার ব্যবহার করার মরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More