চুয়াডাঙ্গার কুন্দিপুরের একটি বাগানে নিরাপদ আম উৎপাদনের লক্ষ্যে সুরক্ষা প্রযুক্তির ব্যবহার

নজরুল ইসলাম: আমগাছ চির সবুজ বৃক্ষ। বাঙালিদের জীবন ও ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো আমগাছ। প্রাচীন মধ্য ও আধুনিক সব সাহিত্যের আমগাছের কথা উল্লেখ রয়েছে। আমগাছ আমাদের জাতীয় গাছ। আমাদের জাতীয় অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রয়েছে আমগাছ। এ সময় আমগাছ প্রাকৃতিক ভাবে বা শখের বসে মানুষ লাগিয়ে থাকতো। বর্তমানে বানিজ্যিকভাবে আমের বাগান করে আমচাষ করা হচ্ছে। আমগাছ বা আমের বাগান সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি অবগত আছি। চৈত্র-বৈশাখ মাসে আমের ফুল ফুটলে সুমিষ্ট গন্ধে চারপাশে ভরে ওঠে। সরাচার আমবাগান নিয়ে মানুষের তেমন একটা কৌতুহল না থাকলেও আম সুরক্ষার জন্য ব্যাগিং পদ্ধতিটা বেশ কৌতুহলের সৃষ্টি করেছে অনেকের কাছে। তেমনি একটি আমার বাগান রয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নবগঠিত নেহালপুর ইউনিয়নের কুন্দিপুর বেলেমাঠ পাড়ায়। যে বাগানটির মালিক ঢাকা কদমতলির হাজি ফারুক আহম্মেদ। আজ থেকে ৩০ বছর আগে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নেহালপুর ইউনিয়নের কুন্দিপুর বেলেমাঠ পাড়ায় একদাগে ২৫ বিঘা জমি খরিদ করেন ঢাকা কদমতলীর হাজি ফারুক হোসেন। জমিতে বালির পরিমান বেশি হওয়া এখানে তেমন কোন ফসলের আবাদ হোতো না বলেই কুন্দিপুর গ্রামের কয়েকজন ওই জমিগুলো বিক্রি করেদেন। জমিগুলো কিনে ২৫ বিঘা জমিতেই আমের বাগান গড়ে তোলেন ফারুক আহম্মেদ। আমগাছ গুলোর বয়স আজ ত্রিশ বছর হতে চলেছে। এ বাগানে আছে হিম সাগর, ল্যাংড়া, মোম্বাই ও আমরূপালী জাতের আমগাছ। ফারুক আহম্মেদ একজন পল ব্যবসায়ি হবার সুবাদে দেশে এবং বিদেশে ফলের ব্যবসা করে থাকেন। বিশেষ করে আমের কারবার। গতকাল শুক্রবার সকালের দিকে কুন্দিপুর গ্রামের প্রধান সড়ক ধরে যেতেই চোখে পড়ে একটি আমবাগান। যে বাগানের আম বিশেষ একটি ব্যাগ দিয়ে মোড়ানো। কৌতুহল বসত বাগানে ঢুকতেই দেখা মেলে বাগানের পাহারদার নুরুজ্জামানের সাথে। তার সাথে গাছের আম বিশেষ একধরণের ব্যাগ লাগানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমের মুকুল আসার পর আমের গুটিগুলো একটু মোটা হলে বাগানের মালিক বিশেষ ধরণের ব্যাগ নিয়ে আসেন। পেয়ারা চাষে যেমন পলিথিনের মধ্যে পেয়ারা ঢুকিয়ে দিয়ে মোকামাকড়ের হাত থেকে পেয়ারা রক্ষা করা হয়। ঠিক তেমনি ভাবে আমের ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। তবে এ ব্যাগগুলো বৃষ্টি, আলো, বাতাস যে কোন প্রতিকুল পরিবেশে আমকে রক্ষা করতে পারে। এ ব্যাগ ব্যবহারের ফলে আমে কোন প্রকার মেডিসিন বা বিষ প্রয়োগ করা লাগে না। আবার পাকলে আমের যে প্রকৃত হলুদ রং তা ভেসে উঠবে। এক কথায় বিষমুক্ত ও ফরমালিন মুক্ত আম। সাধারণ আমের চাইতে এর বাজার দর একটু বেশি। এদিকে আমে ব্যাগ লাগানোর বিষয়টা অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রাপ্ততথ্যে জানাযায়, আমচাষীগণ আম উৎপাদনের বিভিন্ন ধাপে ১৫-৬২ বার বালাইনাশক ব্যবহার করে থাকেন। এই ভয়াবহ মাত্রা যেন কোন ভাবেই কমানো সম্ভব হচ্ছিলো না। জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে এবং রপ্তানির কথা মাথায় রেখে মূলত ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তির গবেষণা শুরু হয়। ২০১৬ সালে প্রমাণিত হয় ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তির মাধ্যমে মাত্র ৩-৪টি ¯েপ্রর মাধ্যমে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন সম্ভব। অতীতে শুধুমাত্র নূন্যতম চাহিদা পূরণের জন্য গবেষণা কার্যক্রম, নীতিমালা প্রণয়ন করা হতো। কিন্তু বর্তমানে সেই সাথে যোগ হয়েছে গুণগত মানসম্পন্ন ফল উৎপাদন। অতীত ও বর্তমানের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হলো শুধু ফলের চাহিদা পূরণ করলেই চলবেনা সেটি অবশ্যই পুষ্টিমানে সমৃদ্ধ এবং নিরাপদ ও বিষমুক্ত হতে হবে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তিটি এদেশে ফল উৎপাদনে একটি নতুন ও সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি হিসেবে মাঠ পর্যায়ে পরিচিতি লাভ করেছে। ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি বলতে ফল গাছে থাকা অবস্থায় একটি নির্দিষ্ট সময়ে বা বয়সে বিশেষ ধরনের ব্যাগ দ্বারা ফলকে আবৃত করাকে বুঝায়। ব্যাগিং করার পর থেকে ফল সংগ্রহ করা পর্যন্ত গাছেই লাগানো থাকে ব্যাগটি। আমের জন্য দুই ধরনের ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। রঙিন আমের জন্য সাদা ব্যাগ আর অন্যান্য জাতের জন্য বাদামী রঙের ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। সুতরাং নির্দিষ্ট জাতের জন্য নির্দিষ্ট ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, ভালোমানের নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম উৎপাদনের জন্য আমচাষীরা এই প্রযুক্তিটি নিঃসন্দেহে ব্যবহার করতে পারেন। সঠিক সময়ে ও নিয়মকানুন মেনে ব্যাগিং করলে সবচেয়ে কম খরচে দাগমুক্ত ও রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন করা যাবে। এই প্রযুক্তিটির ব্যবহার মাঠ পর্যায়ে বাড়ানো সম্ভব হলে খুব সহজেই নিরাপদ ও বিষমুক্ত ফলের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে। এটি ব্যায় বহুল হওয়ায় বর্তমানে বিষমুক্ত আম উৎপাদন করার জন্য আমচাষিদের পরামর্শ দিচ্ছি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More