চুয়াডাঙ্গার সফল উদ্যোক্তা তারেকের জীবন বদলে দেয়া সংগ্রামের গল্প

শেখ রাকিব: আর আট দশটা মানুষের মতো জীবন ছিলো না হৃদয়ের, জীবন শুরু হয়েছিল অন্ধকার আর অনিশ্চয়তার মধ্যে। যখন অন্য শিশুরা খেলনা আর বই-খাতা নিয়ে ব্যস্ত, তখন মাত্র সাত বছর বয়সে হৃদয় হোসেন তারেকের কাঁধে এসে পড়ে জীবনের কঠিন বোঝা। মাত্র চারমাস বয়সে মা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন, আর সেই সময় থেকেই শুরু হয় তার একাকী পথচলা। ঠাঁই হয় ফুপা জামাইয়ের সংসারে, সেখানেই বড় হয়ে ওঠা তার এবং তার জীবন যুদ্ধের প্রথম সেখান থেকেই শুরু। চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার বাবুপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. শাহাবুদ্দিন ও মোছা. ঝর্ণা খাতুনের তিন মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে হৃদয় হোসেন মেজো সন্তান। ছেলেবেলা থেকেই হৃদয় হোসেন কর্মঠ এবং আত্মবিশ্বাসী। পড়াশোনা এবং খেলাধুলার বয়সে বই ছেড়ে কাজে লাগেন ফার্নিচারের দোকানে। দীর্ঘদিন কাজের মধ্যদিয়ে অতিবাহিত হয় তার ছেলেবেলা। এক পর্যায়ে এসে হৃদয় হোসেন দীর্ঘদিন কাজের টাকা গুছিয়ে বাবুপাড়ায় নিজের একটি ছোট দোকান দিয়ে ব্যবসার জগতে পা রাখেন। তবে তার জীবনের সবচেয়ে বড় মোড় আসে ১৮ বছর বয়সে। অল্প পুঁজি এবং অধিক আত্মবিশ্বাস নিয়ে তিনি চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ রোডে একটি টং দোকান খোলেন। ছোট পরিসরের সেই দোকানই হয়ে ওঠে তার স্বপ্নের প্রথম ধাপ। অদম্য ইচ্ছেশক্তি, কঠোর পরিশ্রম আর সততাকে পুঁজি করে হৃদয় হোসেন ধীরে ধীরে তার ব্যবসাকে একটি স্থিতিশীল রূপ দেন। বর্তমানে তার দোকানে প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয়। প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা লাভ থাকে আর এই আয় দিয়েই তিনি গড়ে তুলেছেন একটি সাজানো সুখের সংসার। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে এখন মাধ্যমিকে পড়াশোনা করছে। হৃদয় হোসেন তারেক বলেন, “যার কেউ নাই, তার আল্লাহ আছে।” এই বিশ্বাসই তাকে এতদূর এনেছে। হৃদয়ের জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন তার সন্তানদের যেন সেই কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে না হয়, যা তিনি নিজে পার করেছেন। তিনি চান, তার সন্তানেরা শুধু প্রতিষ্ঠিতই না, মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠুক। হৃদয় হোসেনের এই জীবনগল্প আমাদের শেখায় যে, প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ইচ্ছেশক্তি, পরিশ্রম এবং আত্মবিশ্বাস থাকলে সফলতা অর্জন করা সম্ভব। উদ্যোক্তা ও গনমাধ্যামকর্মী মো. আব্দুল্লাহ হক বলেন, তিনি শুধু একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা নন বরং আমাদের সমাজের একজন নীরব নায়ক, যার গল্প হাজারো মানুষকে নতুন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা জোগায়। প্রতিদিন হৃদয় টি স্টলে শতশত মানুষ চা কফি খেতে আসেন চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। তার এই প্রতিষ্ঠানের নাম ছড়িয়ে গেছে জেলা থেকে জেলার বাহিরে। চুয়াডাঙ্গার শান্তিপাড়ার বাসিন্দা মো. সুজন আলী বলেন, এখানে নিয়মিত আসি কফি খেতে, প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ও মালিকের ব্যবহার খুবই ভালো লাগে। আলোকদিয়ার বাসিন্দা তানজিমুল শাহরিয়ার অন্তু বলেন, হৃদয় হোসেন মামা মাঝেমধ্যে গরিব ও অসহায়দের ফ্রিতে তার দোকানের পণ্য সামগ্রী খাওয়ান। তার ব্যবহার ও সফলতা চুয়াডাঙ্গার মানুষের রিদয় কেড়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More