চুয়াডাঙ্গায় প্রতিবছর প্রায় ৪৯ মেট্রিকটন কদবেল উৎপাদন হয়

পুষ্টিগুণে ভরা ফল অপুষ্ট পেড়ে সিদ্ধ করার কারণে হচ্ছে বিষ

আনোয়ার হোসেন: কদবেলের কদর নেই কার কাছে! ছোট থেকে বড়, বুড়ো থেকে বুড়ি এদের ক’জন আছে যে তারা কদবেলের গন্ধ শোকেননি, নেননি স্বাদ? বাঙালী সমাজে কদবেলের যেমন রয়েছে বাড়তি কদর, তেমনই কদবেলেও রয়েছে বাড়তি গুণ। অথচ গুণে ভরা এই ফল পুষ্ট হওয়ার আগেই গাছ থেকে পেড়ে বিশেষ কৌশলে সিদ্ধ করে দিব্যি বিক্রি করা হচ্ছে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে। অবশ্য কিছু বিক্রেতা আছেন যাদের কাছে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পাকানোটাও পাওয়া যায়। তবে সেটাও সাদা চোখে বোঝা অতো সহজ নয়।
কদবেল শুধু চুয়াডাঙ্গার ফল নয়। দেশির প্রায় সব এলাকাতেই দু একটি করে কদবেল গাছ পাওয়া যায়। এখন তো বিশেষ যত্মে ছাদের টবেও কদবেলের আবাদ হয়। যদিও বাণিজ্যিকভাবে মাঠে বাগান করে কদবেলের আবাদ খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায় না। এরপরও চুয়াডাঙ্গায় বছরান্তে কদবেল কম হয় না। এবারও চুয়াডাঙ্গায় জেলায় মোট ৪৯ মেট্রিকটন কদবেল উৎপাদন হয়েছে। এ দাবি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের। এ পরিমাণের কদবেল পেতে কতটুকু মোট কী পরিমাণের জমির দরকার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আলী হোসেন বললেন, চুয়াডাঙ্গার মোট ১০ হেক্টর জমিতে কদবেল গাছ রয়েছে। এ থেকেই পাওয়া গেছে ওই পরিমাণের কদবেল। প্রতিবছর প্রায় একই পরিমাণের কদবেল উৎপাদন হয় চুয়াডাঙ্গায়। কদবেল পুষ্টিগুণে ভরা। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে পুষ্টি শুধু অপুষ্টিই হচ্ছে না, ক্ষেত্র বিশেষ বিষেও রূপান্তর হচ্ছে। কেনো? কৃষি সম্প্রসারণ চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কর্মকর্তা তালহা জুবাইর মাসরুর বললেন, বাজারে পাকা কদবেল পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কদবেল গাছে সব একসাথে পাকে না। দু একটি করে পাকে। যারা এক সাথে অনেক কদবেল গাছ থেকে পেড়ে পাকায় তাদের কদবেল অধিকাংশই নষ্ট হয়। আর যারা অপুষ্ট কদবেল পেড়ে সিদ্ধ করে বাজারে মশলা দিয়ে বিক্রি করে তারা ভোক্তাদের উপকারের বদলে বড় ক্ষতিই করে বসে। কেউ যদি কাঁচা কদবেল পেড়ে সাথে সাথে খান তা হলেও অনেক উপকার পাবেন। কিন্তু চুয়াডাঙ্গার বাস্তবতায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা হচ্ছে না। একসাথে গাছ থেকে অপুষ্ট কদবেল পেড়ে বিক্রির জন্য সিদ্ধ করে ঝাল মশলা মাখিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছেন এক শ্রেণির বিক্রেতা। ৩০ থেকে ৬০ টাকা দিয়ে একটি কদবেল কিনে ভোক্তা উপকারের বদলে ক্ষতিগ্রস্থই হচ্ছেন। তবে ক্রেতা সাধারণ একটু সজাগ হলে ওই ধরণের ঠকবাজ বিক্রেতা বাধ্য হয়েই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পাকা কদবেল বিক্রি করার পথে হাটবে। তাছাড়া বর্তমানে করোনা ভাইরাস ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এ অবস্থ্য়া ফুটপাতের খোলা কোন খাবারই খাওয়া উচিৎ হবে না। মনে রাখতে হবে, একটু অসতর্কতার কারণে বড় ধরণের ক্ষতি হতে পারে। বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারাহ মাসুদা কদবেলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানান। তিনি বলেন, কদবেল খুব উপকারী ফল। এটা মৌসুমি জ্বর, ঠা-া, পেটের সমস্যা ইত্যাদি থেকে রক্ষা করে। টক ফল কদবেল ভিটামিন সি’য়ের ভালো উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম কদবেলে ১ দশমিক ৮ গ্রাম প্রোটিন, ৩১ দশমিক ৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেইট, ০ দশমিক ৩ গ্রাম উপকারী চর্বি থাকে। কদবেলে ২ গ্রাম খনিজ, ১ দশমিক ১ মিলি গ্রাম নায়াসিন, ১দশমিক ১৯ মি. গ্রাম রিবোফ্লাভিন, দশমিক ০১৩ মি গ্রাম থায়ামিন এবং ৮৫ মি. গ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। কদবেল ভিটামিনেরও ভালো উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম কদবেলে ৫৫ মি.গ্রাম ভিটামিন এ, ৬০ মি. গ্রাম ভিটামিন সি থাকে। এছাড়াও ৫ গ্রাম আঁশ, ৫০ মি গ্রাম ফসফরাস ও ৬শ’ মিলি গ্রাম পটাশিয়াম পাওয়া যায়। কদবেল ডায়রিয়া রোগের চিকিৎসায় সহায়তা করে। আঁশবহুল হওয়ায় এটা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর করে। পেপ্টিক আলসার থেকে রক্ষা করে। ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ভিটামিন সি’য়ের ভালো উৎস; তাই স্কার্ভি প্রতিরোধে সহায়ক। এছাড়াও রয়েছে অনেকগুণ। মোট কথা উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ কদবেল দেহকে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। তবে এ পুষ্টি পেতে সঠিকভাবে ফল খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More