স্বপ্ন পূরণের সিঁড়িতে মেঘলা : খরচ জোগাতে অক্ষম প্রতিবন্ধী পিতা

শেখ শফি: ছোট বেলা থেকে পাড়ার খেলার সাথীদের নিয়ে ডাক্তার-রোগীর খেলা। সেই থেকে অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করে তোলার স্বপ্ন মনের ভেতর লালন করত মেঘলা। সেই স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলেছে মেঘলা। চলতি বছরের এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে স্বপ্নের সিঁড়িতে পা রেখেছে মেঘলা। কিন্তু মেয়ে লেখাপড়ার খরচ যোগাতে অক্ষম শারিরীক প্রতিবন্ধী পিতা মাইকেল ম-ল। তাই মেঘলার ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত মেঘলাসহ সংখ্যলঘু খ্রীস্টান পরিবারটি।
সোনার চামস মুখে নিয়ে জন্মায়নি মেঘলা। জন্মেছে মুজিবনগর উপজেলার রতনপুর খ্রীস্টান পল্লীর শারিরীক প্রতিবন্ধী মাইকেল ম-লের ঘরে। শারিরিক প্রতিবন্ধী মাইকেল ম-লের চায়ের দোকানের ওপর দিয়ে চলে দুই ছেলে-মেয়ের লেখা-পড়াসহ চারজন মানুষের খাওয়া-পরা। তাই বলে কি বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতে নেই?
মেঘলা ছোট থেকে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখতো। সেই মতে পড়ালেখা করে চলেছে। দিনদিন সে একজন মেধাবী ছাত্রী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এক ভাই আর এক বোনের মধ্যে ছোট মেঘলা ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ২০১৭ সালে একই বিদ্যালয় থেকে সে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৪.৯ পায়। এছাড়া রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিইসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পায়। এ বছর সে মেহেরপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হয়ে ও কলেজ হোস্টেলে থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে চায়। একমাত্র ভাই নার্সিং ডিপ্লোমা পড়ছে।
বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পড়তে দু’টি বছর প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা গুনতে হবে মা-বাবাকে। এই ভেবেও রাতে ঘুমাতে পারছেন গৃহিনী মা বন্যা ম-ল। শারিরীক প্রতিবন্ধী স্বামী মাইকেল ম-লের আয়ের একমাত্র পথ চা বিক্রি। তার আয়ে সংসার চালাতে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তাই তিনি কি করে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগাবেন।
অবশেষ গতকাল বুধবার মেঘলাকে সাথে নিয়ে বাবা মাইকেল ম-ল যান মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উসমান গণি’র নিকটে। তিনি অশ্রু ভরা নয়নে এ প্রতিবেদকে জানান, মেয়ের ভালো ফলাফলে বহু মানুষ বাহবা দিচ্ছেন। কিন্তু একজন প্রতিবন্ধী পিতার মেধাবী মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে কেউ পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে না। আমিও চাই আমার মেয়ে লেখাপড়া শিখে অনেক বড় হোক। একদিন সে পরিবারের অভাব আর দুঃখ ঘোচাবে। কিন্তু আমি কি দিয়ে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগাব?
মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওসমান গণি জানান, মেঘলার লেখাপড়ার ভবিষ্যৎ চিন্তা করে (আজ বুধবার) আমার অফিসে বাবা মেয়ে একসাথে ছিলেন। তারা কেঁদে ফেললেন। দোয়া করি মেঘলা ম-লের স্বপ্ন পূরণ হোক, তার বাবার মুখে হাসি ফুটুক। আমি তার ভর্তি খরচের ব্যবস্থা করে দিতে পারবো। কিন্তু পরবর্তীতে আর্থিক অনটনে তার এ স্বপ্ন অধরা থেকে যাবে না তো?

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More