খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন আফগানিস্তানের মানুষরা

পূর্ব আফগানিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন হাজারো মানুষ। ভয়ে তারা অবশিষ্ট অক্ষত ভবনগুলোতেও ঢুকতে সাহস পাচ্ছেন না—যেকোনো পরাঘাত (আফটারশক) আবার ধ্বংস ডেকে আনতে পারে।

বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

গত সপ্তাহে পাকিস্তান সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকায় আঘাত হানে ৬ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প। এতে প্রাণ হারান অন্তত ১,৪০০ জন। এরপর আরও ছয়টি শক্তিশালী পরাঘাত এবং অগণিত ছোট ছোট কম্পন আঘাত হানে। সবুজ পাহাড়ঘেরা গ্রামীণ বসতিগুলোর অনেকগুলোই মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। কোথাও আংশিক ধ্বংস হলেও লোকজন ঘরে ফিরতে পারছেন না, বেছে নিচ্ছেন খোলা মাঠ বা রাস্তার ধারে আশ্রয়।

আফগানিস্তানের কুনার প্রদেশের নুরগাল জেলায় প্রাণঘাতী ভূমিকম্পের পর ধ্বংসস্তূপের ওপর বসে আছে কয়েকজন কিশোর। ৩ সেপ্টেম্বর, রয়টার্স।
ভয়াবহ রাত

নানগারহার প্রদেশের দার-ই-নূর গ্রামের বাসিন্দা ইমরান মোহাম্মদ আরেফ বলেন, ভূমিকম্পে বাড়ি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে তিনি চারজন পরিবার নিয়ে প্লাস্টিকের চাটাইয়ে রাত কাটাচ্ছেন।

‘গতকালও কম্পন হয়েছে, আজ সকালে আবার কেঁপেছে,’ বলেন তিনি। ‘এখন আমাদের কোনো আশ্রয় নেই। সবার কাছে সাহায্য চাইছি।’

যাদের সামর্থ্য ছিল, তারা গ্রাম ছেড়েছেন। বাকিরা ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে যা পেয়েছেন, তাই দিয়ে বানাচ্ছেন অস্থায়ী আশ্রয়।

ভয় নগরীতেও

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে দূরে নানগারহারের রাজধানী জালালাবাদেও মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। ‘প্রতিবার পা ফেললেই মনে হয় মাটি কাঁপছে,’ বললেন ৪২ বছর বয়সি চিকিৎসক ফেরেশতা। ‘আমরা ঘরে থাকি না, বাগানে ঘুমাই। সবসময়ই মনে হয় আবার কম্পন হবে।’

আফগানিস্তানের কুনার প্রদেশের নুরগাল জেলায় রোববার আঘাত হানা ৬ মাত্রার প্রাণঘাতী ভূমিকম্পের পর ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন কিশোরী। ৩ সেপ্টেম্বর, রয়টার্স।
সহায়তার অপেক্ষায়

কুনার প্রদেশের দুর্গম অনেক গ্রাম এখনো ভূমিধসের কারণে সাহায্য থেকে বিচ্ছিন্ন। অথচ এসব গ্রামেই ক্ষয়ক্ষতি সবচেয়ে বেশি। নুরগাল জেলার কর্মকর্তা ইজাজ উলহক ইয়াদ সতর্ক করে বলেন, ‘উচ্চভূমি ছেড়ে নিচু এলাকায় আশ্রয় নেওয়াও ঝুঁকিপূর্ণ। পরাঘাত হলে পাথরধসে প্রাণ হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।’

জাতিসংঘ জানিয়েছে, ১৪,০০০ তাঁবু বিতরণের জন্য প্রস্তুত আছে। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (আইএফরিসি) বলেছে, তাদের কাছে ৭০০ তাঁবু মজুত থাকলেও দুর্গম গ্রামগুলোতে পৌঁছানো যাচ্ছে না।

ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার পাওয়া সোরাত, এক আহত গৃহিণী, কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, ‘আমার সন্তানদের জন্য আশ্রয় দিন, আমাদের কিছুই নেই।’ চিকিৎসা শেষে তিনি ফিরেছেন ধ্বংসপ্রাপ্ত গ্রামে—যেখানে তাকে অপেক্ষা করছে শুধু অনিশ্চয়তা।

দুর্বল এক দেশ, দুর্ভাগ্যের পর দুর্ভাগ্য

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বলছে, ‌‘একটি দেশে যেখানে বহু পরিবার পর্যাপ্ত খাবার পায় না, আর অগণিত শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে—সেখানে এই ভয়াবহ ভূমিকম্প তাদের জন্য চরম আঘাত।’

আফগানিস্তান দীর্ঘ যুদ্ধ আর মানবিক সংকটে নাজুক অবস্থায় থাকা দেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতেও দেশটি বিধ্বংসী ভূমিকম্পের শিকার হয়েছে। ২০২৩ সালে পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাতে ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে বহু গ্রাম মাটির সঙ্গে মিশে যায়, প্রাণ যায় শত শত মানুষের।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More