আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ধর্মীয় নিপীড়ন এড়াতে ভারতে যাওয়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা পাসপোর্ট বা অন্য কোনো ভ্রমণ নথি ছাড়াই সেখানে থাকতে পারবেন।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়েছে, ‘আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত কোনো ব্যক্তি—হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি ও খ্রিস্টান—যারা ধর্মীয় নিপীড়ন বা নিপীড়নের আশঙ্কায় ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন এবং ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪-এর আগে প্রবেশ করেছেন, তারা বৈধ ভ্রমণ নথি ছাড়াই ভারতে থাকতে পারবেন। বৈধ পাসপোর্ট বা নথি নিয়ে যারা এসেছিলেন কিন্তু যার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তারাও এ নিয়মের বাইরে থাকবেন।’
এর ফলে মূলত হিন্দু শিখ বৌদ্ধ জৈন পার্সি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষজন সরাসরি উপকৃত হবেন যা কার্যত বিজেপির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কৌশলেরই প্রতিফলন।
বিশ্লেষকরা বলছেন এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বিজেপি দুটি উদ্দেশ্য পূরণ করতে চাইছে। প্রথমত অমুসলিম জনগোষ্ঠীকে স্থায়ী ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা এবং দ্বিতীয়ত দেশকে হিন্দু রাষ্ট্রের দিকে নিয়ে যাওয়ার এক সুস্পষ্ট সংকেত দেওয়া।
কারণ ধর্মভিত্তিক বৈধতা ভারতীয় সংবিধানের সমতা নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং এটি নিছক মানবিকতার নামে বিজেপির রাজনৈতিক খেলা।
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর এই পদক্ষেপে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং মতুয়া সমাজে ব্যাপক সাড়া পড়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন এটিই বিজেপির মূল লক্ষ্য কারণ মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোট বিজেপিকে ক্ষমতায় টেনে তুলতে পারে পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পূর্বে।
অন্যদিকে আসামের ছাত্র সংগঠন আসু নতুন নির্দেশনার বিরোধিতা করেছে। তাদের অভিযোগ এই পদক্ষেপ আসাম চুক্তিকে ভঙ্গ করছে এবং সেখানে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করতে পারে।
বিরোধীরা বলছে, বিজেপি নির্বাচনের আগে হিন্দুত্ববাদী উগ্রতা উসকে দিয়ে ভোট কাটার চেষ্টা করছে এবং ধর্মীয় বিভাজন বাড়িয়ে তুলছে।
সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করছেন এই পদক্ষেপে সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট হবে সাম্প্রদায়িকতা আরও ঘনীভূত হবে অথচ বিজেপি এই সমালোচনা পাশ কাটিয়ে জনসমর্থন কুড়োনোর চেষ্টা করছে।
বিশ্লেষকদের মতে- আসল প্রশ্ন হলো নাগরিকত্ব কি মানবিক অধিকারের ভিত্তিতে দেওয়া হবে নাকি নিছক ভোট রাজনীতির অঙ্কে? বিজেপি যে হিন্দুত্ববাদী চাল দিয়ে দেশকে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের ভিত্তিতে সাজাতে চাইছে তা এখন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.