ফুটবল স্টেডিয়ামের চেয়ে হাসপাতালে গুরুত্ব দাও, দাবি মরক্কোর জেন-জিদের

স্টাফ রিপোর্টার:২০৩০ সালের বিশ্বকাপ সহ-আয়োজকের প্রস্তুতি হিসেবে মরক্কো বিশ্বের বৃহত্তম ফুটবল স্টেডিয়াম তৈরি করছে।

তবে দেশব্যাপী প্রতিবাদকারী তরুণরা বলছেন, সরকারের অগ্রাধিকার ভুল—মারাত্মক স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সমস্যা সমাধানের চেয়ে কোটি ডলারের স্টেডিয়াম নির্মাণে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

শনিবার (৪ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বিবিসি।

সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে দেশজুড়ে প্রতিবাদ হচ্ছে। তরুণ আন্দোলন ‘জেনজি ২১২’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং ডিসকর্ড, টিকটক ও ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে আন্দোলন সমন্বয় করছে।

তারা মূলত দাবি করছে:

১. সকলের জন্য মানসম্মত শিক্ষা

২. সবার জন্য সহজলভ্য স্বাস্থ্যসেবা

৩. সুলভ ও যোগ্য বাসস্থান

৪. উন্নত গণপরিবহণ

৫. প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ

৬. বেতন ও পেনশন বৃদ্ধি

৭. যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান

৮. ইংরেজিকে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে গ্রহণ (ফ্রেঞ্চের পরিবর্তে)

প্রতিবাদীরা বলছেন, মধ্য-সেপ্টেম্বরের একটি ঘটনা আন্দোলনের তীব্রতা বাড়িয়েছে। আগাদির একটি হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে আটজন নারীর মৃত্যুতে দেখা যায় স্বাস্থ্যসেবা ও পর্যাপ্ত সরঞ্জামের অভাব।

২০২৩ সালে প্রতি ১০,০০০ মানুষের জন্য ৭.৮ জন চিকিৎসক ছিল, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ ২৩ জনের থেকে অনেক কম।

প্রতিবাদকারীরা বলেন, ‘আমরা যৌক্তিক এবং মৌলিক দাবি করছি। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অবশ্যই অগ্রাধিকার পেতে হবে’। তবে পুলিশ প্রায় ৪০০ জনকে গ্রেফতার করেছে, সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আজিজ আখানউচ বলেছেন, তিনি সংলাপের জন্য প্রস্তুত, কিন্তু নেতৃত্বহীন এই আন্দোলন সরকারী প্রতিশ্রুতি পাওয়া পর্যন্ত চলবে বলেও জানান তারা।

জেনজি ২১২-এর তরুণরা স্পষ্ট করছেন, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংযুক্ত নয় এবং তাদের নেতৃত্ব নেই। ‘শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিকভাবে আমাদের দাবি জানাচ্ছি, কিন্তু সরকার আমাদের উপেক্ষা করছে’—বলেছেন আন্দোলনের সমন্বয়ক হাজার বেলহাসান।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন নই। আমাদের কোনো নেতা নেই।’

দেশটির তরুদের বক্তব্য, ‘আমরা বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য উত্সাহী, তবে আমাদের মানুষের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থা সঠিকভাবে তৈরি হওয়া উচিত’।

আরব বসন্ত ও মরক্কো

২০১১ সালের ঘটনা আরব বসন্তের অংশ হিসেবে সংঘটিত হয়েছিল এবং তা দেশের সংবিধান সংস্কারের দিকে নিয়ে যায়। সেই সময়ে রাজা মোহামেদ ষষ্ঠ জাতীয় গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের নির্দেশ দেন। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো মরক্কোর ইতিহাসে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদের হাতে কার্যনির্বাহী ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়।

চলমান জেনজি ২১২ আন্দোলনকে অনন্য করে তোলার বিষয় হলো, এই আন্দোলনটি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নয় এবং এর কোনো আনুষ্ঠানিক কাঠামো নেই।

তবে কিছু সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগও রয়েছে। গত ১ অক্টোবর রাতে ল্কলিয়ায় তিনজন প্রতিবাদকারী নিহত হয়, যখন কিছু মানুষ একটি পুলিশ স্টেশন দখলের চেষ্টা করছিল। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী তখন গুলি চালিয়েছিল, কারণ প্রতিবাদকারীরা আগুন ধরানোর চেষ্টা এবং অস্ত্র চুরি করতে চেয়েছিল। পরে তারা সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করে ভুয়ো তথ্যের দাবি খণ্ডন করেছে।

প্রতিবাদকারীরা কয়েকটি এলাকায় সংঘটিত দাঙ্গা ও লুটপাটের নিন্দা জানিয়েছে এবং পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য দল গঠন করেছে। তারা শান্তি ও সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে, তবে প্রধানমন্ত্রী সংলাপের প্রতিশ্রুতিতে তারা পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয়।

২০৩০ সালের দিকে তাকিয়ে, আন্দোলনের সদস্য হাজার বেলহাসান বলেছেন, ‘অবশ্যই মরক্কোর মানুষ বিশ্বকাপ আয়োজনকে উদ্দীপ্ত মনে করছে। আমরা ফুটবল ভালোবাসি, এটা আমাদের রক্তে রয়েছে। কিন্তু আমাদের মৌলিক অবকাঠামো নেই। হ্যাঁ, স্টেডিয়াম বানান, কিন্তু আমাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও উন্নত করুন। আমাদের মানুষদের দেখাশোনা করুন।’

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More