জি.আর মামলা যখন ইচ্ছা তখন কি তুলে নেওয়া যায়?

-অ্যাডভোকেট তুহিন

জি.আর মামলা যখন ইচ্ছা তখন কি তুলে নেওয়া যায়?

-অ্যাডভোকেট তুহিন

এজাহারের মাধ্যমে থানায় যে সকল মামলার কার্যক্রম শুরু হয় সেগুলো জি.আর (জেনারেল রেজিস্ট্রার) মামলা হিসেবে পরিচিত। আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে থানাতে জি.আর মামলা দায়ের হয়ে থাকে। তবে আদালতে নালিশি দরখাস্ত দাখিল করা হলে বিজ্ঞ আদালত যদি ওই অভিযোগটি এফ.আই.আর হিসেবে গণ্য করার জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে আদেশ দেন, তাহলে সেই মামলাটিও জি.আর মামলা হিসেবে গণ্য হবে।

জি.আর মামলা দায়েরকারীকে এজাহারকারী বলা হয়। যিনি মামলা করেন (এজাহারকারী) তিনি মামলা দায়েরের পর মামলার একজন সাক্ষী মাত্র, আর বাদী হবে রাষ্ট্র। রাষ্ট্র বাদী হওয়ার কারণে এজাহারকারী মারা গেলেও জি.আর মামলার কার্যক্রম চলতে থাকবে। মামলাটি আমলী আদালতে চলমান থাকাবস্থায় এজাহারকারী পক্ষে তথা রাষ্ট্রপক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা (সি.এস.আই) এবং বিচারিক আদালতে চলমান থাকা অবস্থায় বিজ্ঞ পি.পি/এ.পি.পি মামলা পরিচালনা করে থাকেন। জি.আর মামলার আসামি মারা গেলে মামলার কার্যক্রম শেষ হয়ে যাবে। তবে একাধিক আসামি থাকলে বেঁচে থাকা আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম চলতে থাকবে। অনেকের ধারণা, জি.আর মামলা দায়েরকারী (এজাহারকারী) মারা গেলে মামলাটি শেষ হয়ে যায়, এ ধারণা একবারেই সঠিক নয়। এজাহারকারীর মৃত্যুতে মামলার কার্যক্রম শেষ হবে না বরং একইভাবে চলতে থাকবে। জি.আর মামলা একবার রেকর্ড (দায়ের) হয়ে গেলে অথবা বিজ্ঞ আদালত এফ.আই.আর হিসেবে গণ্য করার আদেশ দিলে ওই মামলাটি এজাহারকারী কোনোভাবেই যখন ইচ্ছে তখন তুলে নিতে পারবেন না। অনেকে বলেন, আমরা উভয়পক্ষ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং মেম্বার চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে আপস-মীমাংসা করেছি, মামলা আর চালাতে চায় না, মামলা তুলে নিতে চায়। মনে রাখবেন, জি.আর মামলা আপস-মীমাংসা যেভাবেই হোক না কেন এবং যত প্রভাবশালী ব্যক্তির উপস্থিতিতেই হোক না কেন, বিচারের নির্ধারিত ধাপ ও প্রক্রিয়া ছাড়া এজাহারকারী কোনভাবেই মামলা তুলে (উঠাইয়া) নিতে পারবেন না। এ ধরনের মামলার কার্যক্রম একবার শুরু হয়ে গেলে তদন্তকারী কর্মকর্তা (আই.ও) ওই ঘটনার তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট অথবা ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করবেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা ফাইনাল রিপোর্ট প্রদান করলে বিজ্ঞ আদালত যদি ওই রিপোর্ট গ্রহণ করেন তাহলে আসামি অব্যাহতি পাবে। আর তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি চার্জশিট দাখিল করেন তাহলে সাক্ষ্যগ্রহণ সহ বিচারিক সকল প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রায়ের মাধ্যমে মামলার কার্যক্রম শেষ হবে। তবে তদন্তকারী কর্মকর্তা যে সমস্ত ধারায় চার্জশিট দাখিল করেন সেগুলো যদি মীমাংসাযোগ্য ধারা হয় এবং পক্ষদের মধ্যে যদি আপস-মীমাংসা হয়ে থাকে তাহলে মামলাটি বিচারিক আদালতে বদলি হওয়ার পরে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে আপসে সাক্ষ্য দিয়ে মামলা নিষ্পত্তি করা যাবে। অন্যদিকে, আসামির বিরুদ্ধে যদি আপস অযোগ্য ধারায় মামলা হয় এবং সেই আলোকেই যদি চার্জশিট আসে, তাহলে আপস মীমাংসা হলেও মামলা তুলে নেয়া যায় না, বরং বিচারিক সমস্ত ধাপ পার করে রায়ের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি হবে। মনে রাখতে হবে, জি.আর মামলা দায়ের হয়ে গেলে বিচারের নির্ধারিত ধাপ ও প্রক্রিয়া ছাড়া এজাহারকারী কোনোভাবেই যখন ইচ্ছা তখন মামলা তুলে নিতে পারবেন না, নির্ধারিত ধাপ পর্যন্ত অবশ্যই অপেক্ষা করতে হবে।

লেখক: অ্যাডভোকেট তুহিন, জজ কোর্ট, চুয়াডাঙ্গা।
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More