প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর দুই দেশের আস্থা ও সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নীত করেছে

দিলীপ কুমার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর দুই দেশের গভীর আস্থা ও মৈত্রীর সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নীত করেছে। চার দিনের এ সফরের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার দুই দেশের মধ্যে সাতটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাংলাদেশকে খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস পাওয়া গেছে ভারতের থেকে। দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত সাতটি সমঝোতা স্মারক হয়েছে ১. কুশিয়ারা নদী থেকে বাংলাদেশ কর্তৃক ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক। ২. বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা বিষয়ে ভারতের বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক। ৩. বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে ভারতের ভোপালে অবস্থিত ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক। ৪. ভারতের রেলওয়ের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোয় বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য দুই দেশের রেল মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা স্মারক। ৫. বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্যপ্রযুক্তিগত সহযোগিতার জন্য ভারত ও বাংলাদেশের রেল মন্ত্রণালয়ের আরেকটি সমঝোতা স্মারক। ৬. ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম ‘প্রসার ভারতী’র সঙ্গে বাংলাদেশ টেলিভিশনের একটি সমঝোতা স্মারক। ৭. বিএসসিএল ও এনএসআইএলের মধ্যে মহাশূন্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতাবিষয়ক সমঝোতা স্মারক। সফরকালে প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ণাঢ্য রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা দেয়া হয় মঙ্গলবার। প্রধানমন্ত্রী তাকে দেয়া চৌকস গার্ড অব অনার শেষে বলেন, বিপদে সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট থাকবে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের স্থিতিশীল সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নে ভারত-বাংলাদেশ পা মিলিয়ে চলবে। ভারত বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের মিত্র দেশ। মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক ভারতীয় সেনা জীবন দিয়েছেন। দুই দেশের যোদ্ধাদের রক্ত মিশেছে এক স্রােতে। এ রাখীবন্ধন দুই দেশের সম্পর্কের নিয়ামক হিসেবে বিবেচিত। চীনের পরই ভারত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বাণিজ্য সহযোগী। দুই দেশের প্রায় ১৬০ কোটি মানুষের কল্যাণে এ বন্ধুত্ব আরও বেগবান হবে এমনটিই প্রত্যাশিত। আঞ্চলিক শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য তার কোনো বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো। আর সে কারণেই দুই দেশের মধ্যকার সহযোগিতামূলক সম্পর্ক দ্রুত এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের মধ্য দিয়ে সহযোগিতার সেই সম্পর্ক নতুন গতি পেয়েছে।

বাংলাদেশের নিকটতম ও বৃহত্তম প্রতিবেশী ভারত। রয়েছে বৃহত্তম স্থল ও জল সীমান্ত। নিকট অতীতে ছিটমহলসহ স্থল ও জল সীমান্তের অনেক বিরোধ আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সমাধান হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে অর্ধশতাধিক অভিন্ন নদী রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান সফরে সিলেটের কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে যে চুক্তি হয়েছে, তার খবর শুনেই সিলেট অঞ্চলের মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইতে শুরু করেছে। দুই প্রধানমন্ত্রী যে প্রকল্পগুলো উন্মোচন করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নামে পরিচিত মৈত্রী বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিট-১। আগামী মাসে এটি উৎপাদনে যেতে পারে। ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই সুপারক্রিটিক্যাল কয়লাচালিত তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় করা হচ্ছে আনুমানিক ২০০ কোটি মার্কিন ডলার। উদ্বোধন করা হয়েছে ৫.১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রূপসা রেল সেতুর। খুলনা ও মোংলা বন্দরের মধ্যে রেলযোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে এই সেতু গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। ভারত বাংলাদেশের সড়ক ও জনপথ বিভাগকে ২৫টি প্যাকেজে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ এবং নির্মাণ সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছে। পার্বতীপুর-কাউনিয়া রেললাইনের বিদ্যমান মিটার গেজ লাইনকে ‘ডুয়াল গেজ’ লাইনে রূপান্তরেরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন ছাড়াও সম্পাদিত এমওইউগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিলের মধ্যে সহযোগিতা, ভারতের ভোপালের ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি ও বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে সহযোগিতা, বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, বাংলাদেশ ও ভারতের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে তথ্য-প্রযুক্তি সেবা, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও প্রসার ভারতীর মধ্যে সমঝোতা এবং স্পেস টেকনোলজি বা মহাকাশ প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা।

দুই নেতার বৈঠকে কানেক্টিভিটি, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং ঋণরেখার (এলওসি) মতো খাতগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমরা আশা করি, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দুই দেশ ক্রমেই সমৃদ্ধির শিখরে পৌঁছাবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More