অনলাইন জুয়া রোধে ঢাকা সিআডি’র চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ও কক্সবাজারে অভিযান শেষে প্রেসব্রিফিং

নগদের এজেন্ট সিমে জুয়ার লেনদেন : চক্রের ৯ সদস্য গ্রেফতার
স্টাফ রিপোর্টার: অনলাইনে কোটি কোটি টাকার জুয়াড়ি চক্র ধরতে মাঠে নেমেছে সিআইডি। ইতোমধ্যেই মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘নগদের এজেন্ট সিম’ ব্যবহার করে জুয়ার টাকা লেনদেন চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও কক্সবাজারে অভিযান চালিয়ে এদের গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় ১৬টি মোবাইল ফোন, ৩টি নগদ এজেন্ট সিম, একটি ল্যাপটপ, একটি প্রাইভেটকার ও ৪ লাখ ১০ হাজার নগদ টাকা।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছে, স্বপন মাহমুদ (২৭), নাজমুল হক (২১), আসলাম উদ্দিন (৩৫), মুরশিদ আলম লিপু (২৫), শিশির মোল্লা (২১), মাহফুজুর রহমান নবাব (২৬), নবাবের স্ত্রী মনিরা আক্তার মিলি (২৪), সাদিক (২২) ও মাসুম রানা (২০)। সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক কামরুল আহসান গতকাল রোববার সাংবাদিকদের বলেন, সিআইডির নজরদারির ভিত্তিতে এদের গ্রেফতার করা হয়েছে। বিভিন্ন খেলাকে কেন্দ্র করে তারা রাশিয়াভিত্তিক ‘বেটিং ওয়েবসাইটে’ অ্যাকাউন্ট খুলে এরা ‘জুয়ার কারবার’ করত। আর লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করত নগদের এজেন্ট সিম।
সিআইডি আরও জানায়, “চলমান টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, আইপিএল, বিগ ব্যাশ, ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে জুয়া খেলার জন্য একজন জুয়াড়ি মোবাইল নম্বর বা ইমেইলের মাধ্যমে এই বেটিং সাইট বা অ্যাপে একাউন্ট খুলে সে একাউন্টের বিপরীতে একটি ই-ওয়ালেট তৈরি করে ব্যালেন্স যোগ করে। ব্যালেন্স যোগ করার জন্য অনেক মাধ্যম থাকলেও তার মধ্যে ‘নগদ’ অন্যতম।” কামরুল বলেন, গ্রেফতারকৃত স্বপনের সিম থেকে প্রতিদিন গড়ে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা, লিপুর সিম থেকে প্রতিদিনি গড়ে ১০ লাখ টাকা, নবাবের সিম থেকে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে।
মেহেরপুরে নগদের কয়েকজন ‘এস আর’ ও স্থানীয় ডিপোর ম্যানেজার চক্রের সাথে জড়িত বলেও জানিয়েছেন সিআইডির এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, অনলাইনে জুয়ার নামে দেশের এক জেলাতেই দিনে অন্তত তিন থেকে পাঁচ কোটি টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অবৈধভাবে লেনদেন হচ্ছে বলে তথ্য পেয়ে অভিযান শুরু করা হয়। সিআইডির পক্ষ থেকে বলা হয়, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৫০ জন মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের তথ্য পাওয়া গেছে, যেসব নম্বরে অনলাইন জুয়ার টাকা লেনদেন হচ্ছে। নম্বরগুলোর মধ্যে অন্তত ১৫টিতে দিনে ১০ লাখ টাকার ওপরে লেনদেন করছে জুয়াড়ি চক্র। পরে এই টাকা হুন্ডি বা অবৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে পাচার হচ্ছে বলে ধারণা সিআইডির।
সিআইডি অফিসার কামরুল আহসান বলেন, আমরা একটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে একটি বেটিং সাইটের সন্ধান পাই। সাইটটি রাশিয়া থেকে পরিচালিত হলেও বাংলাদেশে তার এজেন্ট রয়েছে। সীমান্তবর্তী জেলায় অনলাইন জুয়ার নামে টাকা লেনদেনের তথ্য বেশি পাওয়া যায়। যেমন চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও কক্সবাজার। সিআইডি আরও জানায়, চক্রটি বিভিন্ন বড় লিগ টার্গেট করে অনলাইন জুয়ার আয়োজন করে। বেটিং সাইট বা অ্যাপসে যে কেউ লগিং অ্যাকাউন্ট খোলার পর একটি ই-ওয়ালেট পান। সেটিতে অ্যাকাউন্ট ওপেনকারী ব্যক্তিকে টাকা রিচার্জ করতে হয়। বেটিং সাইটে দেয়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নম্বরে টাকা পাঠানোর পর এই ই-ওয়ালেটে টাকা যুক্ত হয়।
সিআইডি সূত্র জানায়, বিজনেস সিম বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স থাকার কথা। কিন্তু জুয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা কোনো রকম শর্ত না মেনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বিজনেস সিম পেয়ে যাচ্ছেন। এমনকি বিজনেস সিম ভাড়াও নিচ্ছে চক্রটি। তাছাড়া কোন এজেন্ট সিম স্যারেন্ডার করলে ওই সিম অবৈধভাবে অন্যের হাতে তুলে দেয়া হয়। যার মাধ্যমে অবৈধ লেন দেন চলে দেদারছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে কর্মরত অসাধু ব্যক্তিরা এ কাজে জড়িত থাকতে পারে বলেও ধারণা সিআইডির।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More