আখচাষে আগ্রহ হারিয়েছে চাষিকূল : হুমকির মুুখে কেরুজ চিনিকলের মাড়াই মরসুম

দর্শনা অফিস: দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির চিনিকলে ২০২০-২১ মরসুমে আখ রোপণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। পাঁচটি কারণে আখ চাষ কমে যাচ্ছে। সময় মতো মিল থেকে চাষিদের মধ্যে সার বীজ সরবরাহ না করা। মিলে সিডিএ সংকট। বর্তমান বাজার দরের চেয়ে আখের মূল্য কম। উন্নত জাতের আখ না দিয়ে পুরাতন একই জাতের আখ সরবরাহ করা। অন্যদিকে ধান, পাট, ভুট্টার ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা আখচাষ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে আগামী মাড়াই মরসুমে মিলটি মারাত্মক আখ সংকটে পড়তে পারে বলে কর্তৃপক্ষ মনে করছে।
মিলসূত্রে জানা গেছে, গত ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিনেই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয় ২০২০-২১ ইক্ষু রোপণ মরসুমের কার্যক্রম। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৯ হাজার ৩৫০ একর জমির। এর মধ্যে চিনিকলের নিজস্ব জমির পরিমাণ ৮৫০ একর, বাকি ৮ হাজার ৫শ একর জমি কৃষকের। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ইক্ষু রোপণ কার্যক্রম চলমান ছিলো কচ্ছপগতিতে। শেষ পর্যন্ত ইক্ষু রোপণ হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৬২৭ একর জমিতে। এর মধ্যে কেরুজ চিনিকলের নিজস্ব জমিতে ৯৮৯ একর ও বাকি ৩ হাজার ৬৩৮ একর জমির কৃষকের। যে পরিমাণ আখচাষ করা হয়েছে সে আখ দিয়ে আগামী ২০২১-২২ আখ মাড়াই মরসুম চলতে পারে ৪৩ দিন। ২০২১-২২ ইক্ষু রোপণ মরসুমের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে বরাবরের মতোই সেপ্টেম্বরের প্রথম দিনেই। এবারের রোপণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ হাজার একর জমিতে। এর মধ্যে কেরুজ চিনিকলের নিজস্ব জমির পরিমাণ ১ হাজার ৫৮৫ একর ও বাকি ৫ হাজার ৪১৫ একর জমি কৃষকের। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে আগামী ২০২২-২৩ আখ মাড়াই মরসুমে মিল চলতে পারে মাত্র ৫০দিন। এ নিয়ে কেউ কেউ মন্তব্য করে বলেছে গত মরসুমে সাড়ে ৯ হাজার একর জমিতে আখ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত থাকলে তা পূরণ হয়েছে মাত্র অর্ধেক। এবার যদি ৭ হাজার একর জমির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়ে থাকে; তবে শেষ পর্যন্ত ৩ হাজার একর পর্যন্ত পৌঁছুবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে চরম সংশয়। তবে ধারণায় সঠিক হয় তবে মিল চলবে কয়দিন?
আখচাষ কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে কেরু চিনিকল আখচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুল হান্নান, সহসভাপতি ওমর আলী জানান, প্রতিমণ আখের মূল্য ৩০০ টাকা না করলে আখচাষ সম্ভব না। তাছাড়া গত রোপণ মরসুমে চাষিরা সময় মতো সার না পাওয়ায় আখ রোপণ অর্ধেকে নেমেছে। এরপর কেরুর কৃষি খামারের জমি কর্তৃপক্ষ আখ রোপণ না করে সাধারণ কৃষকের কাছে লিজ দিয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর কেরুতে এবারই প্রথম আখচাষ কম হলো বলে তারা জানালেন। আখচাষি কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল বারী জানান, আখ দেড় বছরের ফসল, সে হিসেবে দেড় বছরে দুইবার পাট তিন বার ধান ও ভুট্টাসহ অন্যান্য সবজি চাষ করে চাষিরা ব্যাপক লাভবান হচ্ছে। এ জন্য আখ চাষ থেকে চাষিরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। কেরুর জিএম (খামার) সুমন কুমার সাহা জানান, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় ঢাকার নির্দেশে কৃষি খামারের মোট জমি থেকে ১ হাজার ২৭৪ একর জমি লিজ দেয়া হয়েছে, এজন্য কেরুর খামারে আখ রোপণ কিছুটা কমেছে।
কেরুর জিএম (কৃষি) মো. গিয়াস উদ্দীন জানান, গত বছর দেশে বেশ কয়েকটি চিনিকলের মাড়াই বন্ধ ও স্থগিত করায় কেরু চিনিকল এলাকার চাষিরাও বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে আখ চাষ কমিয়ে দেয়। এছাড়া প্রতি ১০০ একর জমির বিপরীতে একজন করে সিডিএ (মাঠকর্মী) থাকার কথা থাকলেও ২০২১-২২ রোপণ মরসুমে ৭ হাজার একর জমির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে সিডিএ রয়েছে মাত্র ৪৬ জন।
এদিকে গত বুধবার ২০২১-২২ মরসুমের আখ রোপণের উদ্বোধন করা হয়েছে। কেরুর কৃষি খামার ১ হাজার ৪৫০ একর। পরীক্ষামূলক খামারে ১৩৫ একর এবং মিল জোন এলাকার আখচাষিরা ৫ হাজার ৪১৫ একর জমিতে আখ রোপণ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে মিলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) গিয়াস উদ্দিনের কাছে আখ রোপণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, স্বল্প মেয়াদি ফসলের দিকে ঝুকেছে কৃষকরা। তাতে কৃষকরাও অধিক মুনাফা অর্জন করে থাকে। দীর্ঘ মেয়াদী আখচাষ লাভজনক না হওয়া মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে কৃষককূল। বর্তমানে আখের মূল্য কেরুজ মিলগেটে প্রতি মণ ১৪০ টাকা ও ইক্ষুক্রয় কেন্দ্রে ১৩৬ টাকা ৩৭ পয়সা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More