আজ থেকে লকডাউনে পুরো দেশ : জীবনযাত্রায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা

গণপরিবহন বন্ধ, আওতামুক্ত সংবাদপত্রসহ সব জরুরি সেবা, সীমিতভাবে খোলা বাজার, ব্যাংক লেনদেন চলবে আড়াই ঘণ্টা
স্টাফ রিপোর্টার: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় আজ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এ সময়ে গণপরিবহণ- বাস, ট্রেন, লঞ্চ, অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বন্ধ থাকবে। সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত জরুরি প্রয়োজনে সীমিত পরিসরে খোলা রাখা যাবে। শপিং মল-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ থাকবে। নির্দিষ্ট সময় খোলা থাকবে নিত্যপণ্যের দোকান। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। খাবার দোকান খোলা থাকলেও সেখানে বসে খাওয়া যাবে না। তবে খাদ্য বিক্রি করা যাবে পারসেল বা টেকওয়ে অথবা অনলাইনে।
রোববার করোনা মহামারী প্রতিরোধে উল্লিখিত বিষয়সহ ১১ দফা নির্দেশনা জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এছাড়া ব্যাংক লেনদেন সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা এবং একুশে বইমেলা দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বলে জানিয়েছে যথাক্রমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
তবে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে ৩ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহণমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ৫ এপ্রিল থেকে ৭ দিনের লকডাউন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এমনকি লকডাউনে বইমেলা বন্ধ থাকবে বলে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। তবে সরকারের ১১ দফা নির্দেশনার কোনো জায়গায় এ নিষেধাজ্ঞাকে ‘লকডাউন’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়নি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে রোববার ‘করোনা ভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধে শর্ত সাপেক্ষে সার্বিক কার্যাবলি/চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ’ শিরোনামের জারি করা আদেশে বলা হয়- করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের বিদ্যমান পরিস্থিতি পর্যালোচনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কর্তৃক ২৯ মার্চ তারিখের ১৮ দফা নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ওই স্মারকের ধারাবাহিকতায় ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত প্রতিপালনের জন্য নি¤œলিখিত ১১টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ১. সব প্রকার গণপরিবহণ (সড়ক, নৌ, রেল ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহণ, উৎপাদন ব্যবস্থা, জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না। এছাড়া, বিদেশগামী/বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না।
২. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন বন্দরের (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। ৩. সব সরকারি/আধাসরকারি/স্বায়ত্তশাসিত অফিস ও আদালত এবং বেসরকারি অফিস কেবল জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য সীমিত পরিসরে প্রয়োজনীয় জনবলকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহণ ব্যবস্থাপনায় অফিসে আনা-নেয়া করতে পারবে। শিল্প-কারখানা ও নির্মাণ কার্যাদি চালু থাকবে। শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিবহণ ব্যবস্থাপনায় আনা-নেয়া করতে হবে। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকে শিল্প-কারখানা এলাকায় কাছাকাছি সুবিধাজনক স্থানে তাদের শ্রমিকদের জন্য ফিল্ড হাসপাতাল/চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। ৪. সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ঔষধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। ৫. খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় কেবল খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ করা যাবে। কোনো অবস্থাতেই হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ করা যাবে না। ৬. শপিং মলসহ অন্যান্য সব দোকান বন্ধ থাকবে। তবে দোকানগুলো পাইকারি ও খুচরা পণ্য অনলাইনের মাধ্যমে কেনাবেচা করতে পারবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই সর্বাবস্থায় কর্মচারীদের মধ্যে আবশ্যিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং কোনো ক্রেতা সশরীরে যেতে পারবে না। ৭. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে। ৮. ব্যাংকিং ব্যবস্থা সীমিত পরিসরে চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে। ৯. সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ঢাকায় সুবিধাজনক স্থানে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। ১০. সারা দেশে জেলা ও মাঠপ্রশাসন এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে। এবং ১১. এ আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ নির্দেশনার কপি সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিব/সচিবকে এ নির্দেশনা পাঠিয়ে তা অধীন দপ্তর/সংস্থাগুলোকে বাস্তবায়ন করতে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
ব্যাংকিং লেনদেন চলবে আড়াই ঘণ্টা: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউন চলাকালীন সময়ে সীমিত আকারে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু থাকবে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এ আড়াই ঘণ্টা লেনদেন করা যাবে। তবে ব্যাংকগুলোর সব শাখা খোলা থাকবে না। সিটি করপোরেশন ও জেলা সদরে দুই কিলোমিটারের মধ্যে একাধিক শাখা থাকলে একটি খোলা রাখতে হবে। কোনো শাখা বন্ধ থাকলে ওই শাখার গ্রাহকরা নিকটবর্তী কোন শাখায় সেবা পাবেন তা নোটিশ দিয়ে গ্রাহকদের জানাতে হবে। তবে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ও ব্যবসা বাণিজ্যের স্বার্থে শ্রম ঘন এলাকা ও বৈদেশিক বাণিজ্যের শাখাগুলো খোলা থাকবে।
এ বিষয়ে রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। সার্কুলারে বলা হয়, সাপ্তাহিক ছুটির দিন ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত অন্য দিনগুলোতে ব্যাংকিং লেনদেনের জন্য সংশ্লিষ্ট শাখাগুলো সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চালু থাকবে। ব্যাংকগুলো অভ্যন্তরীণ কাজের সমন্বয়ের জন্য দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এতে বলা হয়, ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও শাখাগুলো জরুরি ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন অনুযায়ী জনবলের বিন্যাস করতে হবে। ব্যাংক নিজ বিবেচনায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
এ সময় গ্রাহকরা টাকা জমা, উত্তোলন, ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার, ট্রেজারি চালান, সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অর্থ বিতরণ, রেমিটেন্সে অর্থ প্রদান, নিজ শাখা বা আন্তঃশাখা অর্থ স্থানান্তর, সঞ্চয়পত্র ভাঙানো, বন্ড ভাঙানো যাবে। এছাড়া সব ধরনের ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা যাবে। চেক ক্লিয়ারিং ব্যবস্থাও খোলা থাকবে।
সার্কুলারে বলা হয়, সিটি করপোরেশন ও জেলা সদরে দুই কিলোমিটারের মধ্যে একাধিক শাখা থাকলে যে কোনো একটি খোলা থাকবে। মঞ্জুর করা ঋণ বিতরণ, প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন, শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের কাজগুলো চালু থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক লেনদেনে চালু থাকবে।
এতে আরও বলা হয়, বিমান, সমুদ্র ও স্থলবন্দরে অবস্থিত শাখাগুলো সার্বক্ষণিক খোলা রাখার নির্দেশনা রয়েছে। এক্ষেত্রে লকডাউনের সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কার্যক্রম চালাতে হবে। এটিএম সেবা সার্বক্ষণিক চালু থাকবে। গ্রাহকদের সুবিধার্থে বুথগুলোতে পর্যাপ্ত টাকার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে অনলাইন লেনদেন সবসময় চালু রাখতে হবে। আপাতত সান্ধ্যকালীন ব্যাংকিং বন্ধ থাকবে। গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে শুরু করে ৬৬ দিনের ‘সাধারণ ছুটি’ ছিল সারা দেশে। এ সময়ে জরুরি ছাড়া সব যানবাহন বন্ধ ছিল। আর ১৮ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সংক্রমণ কমে গেলে ৩০ মার্চ স্কুল-কলেজ খোলার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ২৩ মে করা হয়। আর পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলবে ২৪ মে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More