আবাসিক ছাত্রী দোলার মৃত্যুতে উত্তেজনা ॥ মাদরাসা ছাড়লো শিক্ষার্থীরা

দর্শনা মাছুমা জান্নাত মহিলা মাদরাসার ছোট দুটি কক্ষে ১২০ শিক্ষার্থীর ঠাসাঠাসি অবস্থান
দর্শনা অফিস: দর্শনা হল্টস্টেশন তেতুলতলায় মাছুমা জান্নাত মহিলা মাদরাসায় ৩য় শ্রেণির ছাত্রী দোলার মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যু ঘটনায় যেমন সৃষ্টি হয়েছে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি, তেমনি রহস্যজনক মৃত্যু বলেও ধারণা অনেকের। দোলার পরিবারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি কোনো আইনি ব্যবস্থা। ময়নাতদন্ত ছাড়ায় দাফন সম্পন্ন হলো দোলার লাশ। পার পেয়ে গেলো মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। বিতর্কের মুখে পড়ে দর্শনা রেল বাজার জামে মসজিদের ইমামতি হারান মুফতি গোলাম কিবরিয়া। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা মাদরাসা ছেড়ে নিজবাড়ি চলে যায়। উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পুলিশ এতে পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণে আনে।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে গোলাম কিবরিয়া দর্শনা হল্টস্টেশনের একটি বাসা-বাড়ি ভাড়া নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন মাছুমা জান্নাত মহিলা মাদরাসা।

মাদরাসার বয়স ৫ বছর ধরধর হলেও আজ অবধি ব্যবস্থাপনা পরিষদ যেমন গঠন হয়নি, তেমনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে রয়েছে ঘাটতি। নিজে অধ্যক্ষ, স্ত্রী, মেয়ে ও জামাতা মিলেই শিক্ষকতা করেন ওই মাদরাসায়। ১ম শ্রেণি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত ক্লাস চালু থাকলেও আবাসিকের নেই কোনো ব্যবস্থা। বর্তমানে মাদরাসায় ২০০ জন শিক্ষার্থী থাকলেও নিয়মিত ক্লাস করে থাকে ১৭৫ জন। এদের মধ্যে আবাসিকে থাকে ১২০ জন। মাত্র দুটি কক্ষে ১২০ জন শিক্ষার্থী ঠাসাঠাসি করে অনেকটাই হাজতবাসের মতো ঘুমোতে হতো। যেখানে পড়ালেখা-সেখানেই খাওয়া, ঘুমোতেও হয় সেখানেই। প্রতিরাতের মতো গত বুধবার রাতেও ঠাসাঠাসি করেই ঘুমাচ্ছিলো ৩য় শ্রেণির ছাত্রী আফসানা দোলা। ভোর ৪টার দিকে ফজরের নামাজের জন্য অন্যান্য ছাত্রীরা ঘুম থেকে উঠলেও আফসানা দোলার সাড়া মেলে না। ডাকাডাকি করেও যখন দোলার ঘুম না ভাঙে তখনই অধ্যক্ষ মুফতি গোলাম কিবরিয়াকে জানায় ছাত্রীরা। সাথে সাথে দোলাকে নিথর অবস্থায় নেয়া হয় দর্শনা বাসস্ট্যান্ডের পল্লী চিকিৎসক নাজমুল হোসাইনের কাছে। ওই চিকিৎসক দোলার অবস্থা খারাপ বুঝতে পেরে তাকে হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। দোলাকে দ্রুত নেয়া হয় জীবননগর হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকরা দোলাকে মৃত্যু বলে ঘোষণা দেন। দোলার লাশ মাদরাসায় আনা হলেও ছাত্রীদের মধ্যে ভীতি ও কান্নার রোল পড়ে যায়। ঘটনা জানাজানি হলে এলাকার মানুষজন ভীড় করে মাদরাসা এলাকায়। সৃষ্টি হয় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির। এক পর্যায়ে দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুর রহমান কাজল সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করেন। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নবগঠিত নেহালপুর ইউনিয়নের কুন্দিপুর গ্রামের দুলাল হোসেনের মেয়ে দোলার লাশ গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে নেয়া হয় বাড়িতে। সেখানে স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে বাতাস। গোটা গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া। সন্ধ্যায় স্থানীয় গোরস্থানে শোকাবহ পরিবেশে দোলার লাশ দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
এ দিকে এ মৃত্যুতে দোলার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ করেনি বলে জানান ওসি মাহব্বুর রহমান কাজল। দোলার স্বাভাবিক মৃত্যু বলেও ধারণা করেছেন তিনি। মাদরাসা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেছে, দেশের ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতেও ওই মাদরাসায় ১২০ জন ছাত্রী মাত্র দুটি ছোট কক্ষে ঠাসাঠাসি করে পড়ালেখা ও ঘুমানো ছিলো চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকি। মানা হতো না স্বাস্থ্যবিধি, নেই চিকিৎসা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পরিচালনার জন্য গঠন করা হয়নি কোনো প্রকার কমিটি। তবে অনেকই হতবাক হয়েছে আধুনিক যুগেও ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ওই মাদরাসায় টাকা ও মোবাইল চোর শনাক্ত করণে প্রত্যেক ছাত্রীকে চাল পড়া খাওয়ানো নিয়েও তোপের মুখে পড়তে হয়েছে অধ্যক্ষকে। এদিকে দোলার মৃত্যুর পর গতকালই মাদরাসা ছাত্রী শূন্য হয়ে পড়েছে। ঝাঁকে ঝাঁকে ছাত্রীদের বাড়ি নিয়ে গেছে অভিভাবকরা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More