আরএমও’র জাল স্বাক্ষরে করা স্বেচ্ছাসেবকদের পরিচয়পত্রে রাষ্ট্রীয় মনোগ্রাম

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে দালাল বিরোধী অভিযান : রোগীর টাকা হাতিয়ে নেয়া রুবেলের কারাদণ্ড

আরএমও’র জাল স্বাক্ষরে করা স্বেচ্ছাসেবকদের পরিচয়পত্রে রাষ্ট্রীয় মনোগ্রাম

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে দালাল বিরোধী অভিযান : রোগীর টাকা হাতিয়ে নেয়া রুবেলের কারাদণ্ড

আফজালুল হক, স্টাফ রিপোর্টার:

তারা কোনো সরকারি কর্মকর্তা নন, সরকারি বেতনভুক্তও নন, অথচ গলায় ঝুলিয়ে রাখা পরিচয়পত্রে দেয়া হয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রীয় মনোগ্রাম বা লোগো। সেই লোগোসংবলিত পরিচয়পত্র গলায় ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবক পরিচয় দেয়া কয়েকজন। হাসপাতালের আরএমও’র স্বাক্ষরযুক্ত এসব পরিচয়পত্র দেখে অনেকেই মনে করছেন তারা সরকারি চাকরিজীবী। অথচ দেখা গেলো লোগোসংবলিত পরিচয়পত্র গলায় ঝুলিয়ে দাপিয়ে বেড়ানো যুবকরা স্বেচ্ছাসেবকও নন, মূলত রোগী ভাগিয়ে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেয়াই তাদের কাজ।

গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে দালাল বিরোধী অভিযান চালিয়ে রুবেল হোসেন নামের এক দালালকে আটক করে উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। রোগীর কাছ থেকে কৌশলে টাকা আদায়ের অপরাধে তাকে ১০ দিনের কারাদ- দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সাজাপ্রাপ্ত রুবেল হোসেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ভুলটিয়া গ্রামের মৃত রেন্টু মিয়ার ছেলে। শনিবার দুপুর ১টার দিকে এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ভূইয়া।

এসময় রুবেলের কাছ থেকে পাওয়া যায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রীয় মনোগ্রাম সম্বলিত ওই পরিচয়পত্রে দেখা যায়। এছাড়া আস্থা নামক প্রকল্পের স্বেচ্ছাসেবক আশরাফুলসহ বেশকয়েকজনের পরিচয়পত্রে রাষ্ট্রীয় মনোগ্রাম ও আসাবিক মেডিকেল অফিসারের (আরএমও) সই রয়েছে। তবে স্বাক্ষর জাল করে পরিচয়পত্র তৈরি করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন আরএমও ডা. এএসএম ফাতেহ আকরাম নিজেই। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের লোগো থাকা স্বেচ্ছাসেবকদের ওই সকল পরিচয়পত্রগুলো বাতিলের ঘোষণা দেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আতাউর রহমান।

ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুর ১টার দিকে সদর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীনের উদ্যোগে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ভূইয়ার নেতৃত্বে হাসপাতালে দালাল বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় রোগীর কাছ থেকে টাকা নেয়ার সময় রুবেলকে হাতেনাতে আটক করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম ভুইয়া বলেন, সদর হাসপাতালে দালালের উপদ্রবে রোগী ও তাদের স্বজনরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে রুবেল নামে এক দালালকে ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদ- দেয়া হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আতাউর রহমান বলেন, এখন থেকে দালাল নির্মূলে নিয়মিত অভিযান চলবে। গলায় কার্ড ঝুলিয়ে দালালি করার দিন শেষ। যেসব স্বেচ্ছাসেবকদের পরিচয়পত্রে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের লোগো আছে, সেসব স্বেচ্ছাসেবকদের পরিচয়পত্র বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তীতে যাচাই-বাছাই করে স্বেচ্ছাসেবকদের পরিচয়পত্র দেয়া হবে। কোনো দালালকে আর স্বেচ্ছাসেবক পরিচয়ে দালালি করার সুযোগ দেয়া হবে না।

চুয়াডাঙ্গায় সদর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, দালালের অত্যাচারে শুধু রোগী বা স্বজনরাই অতিষ্ঠ নন, প্রতারিত রোগীদের প্রতিনিয়ত অভিযোগে আমরাও অতিষ্ঠ। হাসপাতালকে দালালমুক্ত করতে এখন থেকে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে।

এদিকে, প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা ব্যাতিত অন্য কেউ সরকারি লোগো ব্যবহার করতে পারবে না জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারি গেজেটভুক্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কারো সরকারি লোগো ব্যবহার করা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। এমনকি তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারীরাও ব্যবহার করতে পারবে না। আর হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবকদের পরিচয়পত্রে বা তার ফিতায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মনোগ্রাম ব্যবহারের প্রশ্নই ওঠে না।

দালাল বিরোধী অভিযানে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. আতাউর রহমান মুন্সী, সিনিয়র সার্জারী কনসালটেন্ট ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়ন, শিশু কনসালটেন্ট ডা. আসাদুর রহমান মালিক খোকন প্রমুখ।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More