আলমডাঙ্গার গাংনী ইউপি নির্বাচনে সম্ভাব্য ১৩ চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ৯ জনই নৌকা প্রত্যাশী

শাহাদাৎ লাভলু: তফসিল ঘোষণা না হলেও থেমে নেই আলমডাঙ্গার গাংনী ইউপি নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। প্রথম ধাপে না হলেও পরবর্তী ধাপে অনুষ্ঠিত হবে এ ইউনিয়নের নির্বাচন। আর এই নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেক আগেভাগেই মাঠে নেমেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। চেয়ারম্যান পদে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন সম্ভাব্য ১৩ প্রার্থী। তালিকায় পুরনোদের সাথে রয়েছে নতুন মুখও। ১৩ জনের মধ্যে ৯ জনই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মনোয়ন প্রত্যাশী। এছাড়া বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী দুজন এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলের একজন ও সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন একজন। চেয়ারম্যান পদে বর্তমানে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা দীর্ঘ হলেও শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবেন কতজন? এ প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষদের মধ্যে।
গাংনী ইউপি নির্বাচন উপলক্ষে এলাকার হাট-বাজারের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লায় আনাগোনা বেড়েছে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের। অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে। ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কর্মী সমাবেশ ও ঘরোয়া বৈঠক নিয়ে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোয়ন পেতে ইতোমধ্যেই অনেকে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। অনেকেই ধরনা দিচ্ছেন জেলা ও উপজেলার শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কাছে। তবে, দুজন প্রার্থীর নাম উঠে এলেও বিএনপি ইউপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ার কথা জানিয়ে দেয়ায় তেমন সাড়া নেই নেতাকর্মীদের মাঝে। শুধু চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নন, আগাম প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন সংরক্ষিত নারী মেম্বার ও সাধারণ ওয়ার্ডের মেম্বার পদের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও। উঠোন বৈঠক ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তারাও।
দেশের প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নের মধ্যে আগামী ১১ এপ্রিল প্রথম ধাপে ৩৭১ ইউনিয়ন পরিষদের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর রমজান মাস। ঈদের পর মে-জুন মাস জুড়ে চলবে মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিয়ন পরিষদের ভোটগ্রহণ।
আলমডাঙ্গার গাংনী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১৩ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে ৯ জনই নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী। প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশা রেখেছেন। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে নিজের পক্ষে যুক্তিও আওড়িয়েছেন। তবে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অধিকাংশ সম্ভাব্য প্রার্থীই বলেছেন, দল যাকে ভালো মনে করবে তাকেই দলীয় প্রতীক দেবে। আর যে-ই দলীয় প্রতীক পান না কেন তার পক্ষে তথা দলের পক্ষেই নির্বাচনে কাজ করবেন তারা।
আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীক প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন গাংনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান আবু তাহের আবু। তিনি বড়গাংনী গ্রামের মৃত আবুল কাসেম মাস্টারের ছেলে। এর আগে দু’বার নির্বাচনে অংশ নিয়ে দ্বিতীয়বার জয়লাভ করেন তিনি।
নৌকা প্রতীকের মনোয়ন প্রত্যাশী চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের সদস্য রকিবুল হাসান। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রকিবুল হাসান গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হন।
প্রথমবারের প্রচার-প্রচারণায় নেমেছেন ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা ছোটগাংনী গ্রামের ইফতেখার রাসুল সিহাব। তিনি আলমডাঙ্গা পোল্ট্রি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক। দীর্ঘদিন ধরে দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে থেকে সেবামূলক কাজ করে আসছেন।
প্রথমবারের মতো সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে দেখা যাচ্ছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও আসমানখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ডা. মো. জয়নাল আবেদীনকে। নান্দবার গ্রামের মৃত খবির উদ্দীনের ছেলে ডা. মো. জয়নাল আবেদীন বিএসসি পাস করে আর্মি মেডিকেল কোরে যোগদান করেন। অবসরের পর তিনি আসমানখালী বাজারে ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করেন। তিনিও নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী।
প্রথমবারের মতো সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা বজলুর রহমান। বন্দরভিটা গ্রামের মৃত ওসমান আলী ম-লের ছেলে বজলুর রহমান ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী রাজনীতির সাথে যুক্ত রয়েছেন। তিনি চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ও দর্শনা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাথেও জড়িত ছিলেন। ইউপি চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার ঘোষণা দিয়ে কয়েক বছর ধরে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক বন্দরভিটা গ্রামের এমদাদুল হক ওদুদ। তবে গত নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশা করলেও অবশ্য নির্বাচনে অংশ নেননি।
গাংনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রেজওয়ানুর রহমান মিলন বিশ্বাস প্রথমবারের মতো অংশ নিতে যাচ্ছেন। তিনি মোচাইনগর গ্রামের আবু জাফর বিশ্বাসের ছেলে। আলোকিত মোচাইনগর গ্রাম গড়ার উদ্যোক্তা মিলন বিশ্বাসও নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী।
প্রথমবারের মতো নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজি আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বন্দরভিটা গ্রামের মৃত জাকের আলীর ছেলে ।
একবার পরাজিত হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুন্সী এমদাদুল হক। তিনি নান্দবার গ্রামের মৃত মুন্সী রেজাউল হকের ছেলে।
অপরদিকে, আসন্ন গাংনী ইউপি নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছেন সম্ভাব্য দু’প্রার্থী। তাদের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউর রহমান রেজু। প্রথমবার ধানের শীষ প্রতীক পেয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেন। তবে দ্বিতীয়বার পরাজিত হন তিনি। আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি দলীয়ভাবে অংশ না নিলেও স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার কথা জানিয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান মোচাইনগর গ্রামের রেজাউর রহমান রেজু। তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছেন ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মামুন। তিনি নান্দবার গ্রামের মো. মতিয়ার রহমানের ছেলে ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম আতিয়ার রহমানের ভাতিজা। সাইফুল ইসলাম মামুন এর আগেও দু’বার নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন।
প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নেয়ার লক্ষ্যে মাঠে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ গাংনী ইউনিয়ন শাখার সভাপতি মোচাইনগর গ্রামের নাজিম উদ্দীন মোল্লা।
দু’বার পরাজয়ের পর তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছেন ফুলবগাদী গ্রামের মৃত এবাদত আলী ছেলে আজাহারুল ইসলাম।
গাংনী ইউনিয়নে সর্বশেষ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ৭ এপ্রিল। মেয়াদ শেষ হবে ২০২১ সালের ৬ জুন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী গাংনী ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৭ হাজার ৭১৭ জনের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮ হাজার ৯৯১ জন এবং মহিলা ভোটার ৮ হাজার ৭২৬ জন। ১৪টি গ্রাম নিয়ে গঠিত এই ইউনিয়নে ৯টি ওয়ার্ড রয়েছে। ১নং ওয়ার্ড নওদাপাড়া, মোচাইনগর, ২নং ওয়ার্ড শালিকা, ৩নং ওয়ার্ড আসমানখালী ও নান্দবার, ৪নং ওয়ার্ড ছোটগাংনী, বড়গাংনী বাজার পাড়া, ক্লাব পাড়া ও গুচ্ছ গ্রাম, ৫নং ওয়ার্ড বড়গাংনী হাফিজিয়া মাদরাসাপাড়া ও মাস্টারপাড়া, ৬নং ওয়ার্ড বড়গাংনী সরদার পাড়া, পূর্বপাড়া, শেখপাড়া ও মিয়া পাড়া, ৭নং ওয়ার্ড ফুলবগাদি ও নিমতলা, ৮নং ওয়ার্ড বন্দরভিটা ও সাহেবপুর, ৯নং ওয়ার্ড রামনগর গ্রাম। এদিকে নির্বাচণের দিনক্ষণ যতোই ঘনিয়ে আসছে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ততোই প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More