আলমডাঙ্গার বধ্যভূমিতে নাটক ‘লালব্রিজ অতঃপর’ মঞ্চায়িত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এমপি ছেলুন জোয়ার্দ্দার

নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন বলেছেন, বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা। সেই স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা বধ্যভূমিতে একাত্তরের গণহত্যা নিয়ে রচিত নাটক ‘লালব্রিজ অতঃপর’ মঞ্চায়নের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুদৃঢ় নেতৃত্বে এদেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করে। অনেক আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা অর্জন করি কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। এদেশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে হলে তাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে এমপি ছেলুন জোয়ার্দ্দার আরও বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বে মাথাউঁচু করে দাঁড়িয়েছে। এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তিনি এ সময় সকলকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানান। ‘নতুন প্রজন্মের সামনে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। বিগত সময়ে মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে’। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে তাদের সামনে সত্যিকার ইতিহাস তুলে ধরেছে। তরুণরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে জানতে পারছে বলে মন্ত্রী জানান। তিনি আরো বলেন, ‘তরুণ প্রজন্ম আগামীদিনে দেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে। তাই যুব সমাজকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে হবে’।
জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, ব্যাটেলিয়ন-৬ বিজিবি’র অধিনায়ক খালেকুজ্জামান পিএসসি। উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাবিবুর রহমান। সহকারী অধ্যাপক মুন্সী আবু সাঈদের উপস্থাপনায় অন্যান্য অতিথির মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাজিয়া আফরীন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শারমিন আক্তার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও ম্যাজিস্ট্রেট (শিক্ষা ও আইসিটি) আরাফাত রহমান, আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রনি আলম নূর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কনক কুমার দাস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান, আলমডাঙ্গা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেজওয়ানা নাহিদ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নান, আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম, কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমির সম্পাদক আমিরুল ইসলাম, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. সালমুন আহমেদ ডন, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ইয়াকুব আলী, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান ফারুক, আলমডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবু মুসা প্রমুখ।
এদিকে, আলমডাঙ্গা বধ্যভূমিতে মঞ্চায়িত ‘লালব্রিজ অতঃপর’ নাটকটি তুমুল দর্শক মাতিয়েছে। দীর্ঘদিন পর মানুষ প্রকৃত বিনোদন পেয়েছে। বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার ও প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পেয়েছে। মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে এ নাটক মঞ্চায়ন করা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনি ও তাদের এদেশীয় দোসর কর্তৃক গণহত্যা নিয়ে রচিত নাটকটি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় মঞ্চায়িত হয়। নাটকটিতে পৃষ্ঠপোষকতা করছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনী বাংলাদেশে অসংখ্য নির্যাতন কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলো। সেখানে হাজার হাজার মা-বোন, যুবা-বৃদ্ধা, শিশু-কিশোরদের দিনের পর দিন নির্যাতন চালিয়ে অবশেষে তাদের হত্যা করে কবরের নামে যততত্র মাটিচাপা দিয়ে রেখেছিলো। নাটকে তুলে ধরা হয় চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ বাজারে পাকবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ। লালব্রিজ হিসেবে পরিচিত রেল ব্রিজের কাছে যুদ্ধ চলাকালে পাক ঘাতকরা ট্রেন থামিয়ে স্বাধীনতাকামী প্রায় দুই হাজার নারী-পুরুষকে হত্যা করে ব্রিজের পাশে ওয়াপদা ভবনের সীমানার মধ্যে ও পার্শ্ববর্তী দুটি বধ্যভূমিতে পুঁতে রাখে। সেই চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরা হয় নাটকে। নাটকটি রচনা করেছেন বজলুর রহমান, নাট্য নির্দেশক ছিলেন অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম সৈকত।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More