আসছে কঠোর লকডাউন : জরুরি সেবা ছাড়া ১৪ থেকে ২০ এপ্রিল সব বন্ধ

সবাইকে এক সপ্তাহ ঘরে থাকতে হবে : এটা হবে কমপ্লিট লকডাউন

স্টাফ রিপোর্টার: দেশে করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। সেইসঙ্গে বাড়ছে জনগণের অবহেলা ও উদাসীনতা। এমতাবস্থায় সরকার জনস্বার্থে ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ বিষয়ে সক্রিয় চিন্তা-ভাবনা করছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ঢিলেঢালা ‘লকডাউনে’ করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আর বর্তমান করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি আরও কয়েক সপ্তাহ অব্যাহত থাকলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। তখন করোনায় আক্রান্ত বহু লোককেই ন্যূনতম চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে না।
সূত্রটি জানায়, এখন যে ধরনের লকডাউন চলছে, তাতে সাধারণভাবে দেখলে দেখা যাচ্ছে সংক্রমণ কমেনি। তবে এটাও ঠিক সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বাড়েওনি। এখন কঠোর লকডাউন দেয়া গেলে হয়তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে বলেই তারা মনে করছেন। দেশে প্রতিদিন সাত হাজারের বেশি মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। মৃত্যুও বেড়েছে। করোনার প্রথম ঢেউয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যু যেখানে ছিল ৬৪, দ্বিতীয় ঢেউয়ে একদিনে মৃত্যুর সর্বোচ্চ সংখ্যা ৭৪ জনে এসে দাঁড়িয়েছে।
আশঙ্কা, ভয়, জনস্বাস্থ্যবিদদের নানা পূর্বাভাসের মধ্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শুক্রবার দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ বিষয়ে সক্রিয় চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। চলমান এক সপ্তাহের ‘লকডাউনে’ জনগণের উদাসীন মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয় না জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশে করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। সঙ্গে বাড়ছে জনগণের অবহেলা ও উদাসীনতা। এমতাবস্থায় সরকার জনস্বার্থে ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ বিষয়ে সক্রিয় চিন্তা-ভাবনা করছে। ১৩ এপ্রিলের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ ইঙ্গিত দিলেও বিস্তারিত কিছু জানাননি। তবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন একটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ১৪ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত এক সপ্তাহের জন্য প্রযোজ্য হবে এই ‘লকডাউন’। এই সময়ে জরুরি সেবা ছাড়া আর সবকিছু বন্ধ থাকবে। এই ‘লকডাউন’ কেমন হতে পারে সেই বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, অত্যন্ত কঠোরভাবে ‘লকডাউন’ হবে। শুধু জরুরি সেবা ছাড়া সব বন্ধ থাকবে। সবাই যেন ঘরে থাকে, সবাই যেন ‘লকডাউন’ পালন করতে সহায়তা করে, সেটি দেখা হবে। তিনি বলেন, কাউকে খুব জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যেতে হলে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। পোশাক খাতসহ অন্যান্য শিল্প কারখানার সবাইকে ‘লকডাউনে’ থাকতে হবে। এ বিষয়ে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। সরকারের চিন্তা-ভাবনা হলো ‘কমপ্লিট লকডাউন’। গত বছর সাধারণ ছুটি ঘোষণার সময় জেলা প্রশাসনকে সহায়তা করতে সেনাবাহিনী টহল দিয়েছে সারাদেশে। এবারেও সেনাবাহিনী টহল দেবে কি না, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যেটি করলে ভালো হবে, সেটি বিবেচনায় রেখেই পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। তার মতে মানুষ বুঝতে পেরেছে করোনাভাইরাসের এই সংক্রমণ কমাতে হলে লকডাউন প্রয়োজন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্ট সবাইও এই পরামর্শই দিয়েছেন। সবার প্রস্তাবনা-পরামর্শ বিবেচনায় নিয়েই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। তার মতে সরকার প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে ২৯ মার্চ থেকে। ওইদিন ১৮ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো। বেশকিছু কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিলো। এরপর ৪ এপ্রিল আরও কিছু সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়। সরকারের লক্ষ্য ছিল জনমত তৈরি করা, জনসচেতনতা তৈরি করা। সরকার সেটি করেছে। মানুষ মোটামুটি প্রস্তুত হতে পেরেছে। এখন খুব দ্রুত আমাদের কঠোর লকডাউনে যেতে হবে। আমাদের হাতে আরও কয়েকদিন সময় আছে। এই কয়েকদিনের মধ্যে বাকি প্রস্তুতি নিয়ে নেয়া হবে। এরপর ১৪ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর লকডাউন চলবে, যে সময়ে সবাই ঘরে থাকবে। কেবল জরুরি সেবা চলবে।
এদিকে, করোনাভাইরাসের প্রকোপ দিন দিন বাড়তে থাকায় ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত সারাদেশে শপিং মল, দোকান-পাট, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি গণপরিবহণ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। বুধবার থেকে সিটি করপোরেশন এলাকায় সকাল-সন্ধ্যা গণপরিবহন সেবা চালু রাখার ঘোষণা দেয় সরকার। গত রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে ১১ দফা নিষেধাজ্ঞায় সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, ব্যাংক জরুরি প্রয়োজনে সীমিত পরিসরে খোলা রাখার অনুমতি দেয়া হয়।
এদিকে, পয়লা বৈশাখ ও রোজার আগে দোকান-পাট খুলতে কয়েকদিন ধরেই রাজধানীতে বিক্ষোভ করে দোকান মালিক ও কর্মচারীরা। তাদের দাবির মুখে বৃহস্পতিবার ‘কঠোর স্বাস্থ্যবিধি’ মেনে ‘লকডাউনের’ মধ্যেও ৯ থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত সকাল ৯টা-৫টা দোকানপাট ও শপিংমলও খোলা রাখার অনুমতি দেয় সরকার। অন্যদিকে, শুক্রবার ‘করোনাভাইরাস সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি’র সভায় দুই সপ্তাহের জন্য পূর্ণ লকডাউনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তবে সরকার আপাতত এক সপ্তাহের জন্যই ‘সর্বাত্মক লকডাউনে’ যেতে চায়। প্রয়োজনে আবার লকডাউন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More