ঈদ আনন্দে নদীতীরসহ চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে বিনোদনপ্রেমীদের ভিড়

লকডাউনের প্রথম দিনে মোবাইলকোর্টে ৭৯ জনকে ৫৫ হাজার ৪শ টাকা জরিমানা
স্টাফ রিপোর্টার: করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ অমান্য করা এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানায় চুয়াডাঙ্গার বিভিন্নস্থানে ৭৯ জনকে ৫৫ হাজার ৪শ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার নদীতীরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এ জরিমানা করেন জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এদিন নয়টি মোবাইলকোর্টের মাধ্যমে ৭৭টি মামলায় ৭৯ জনকে ৫৫ হাজার ৪শ টাকা জরিমানা করা হয় বলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
ঈদের পর গতকাল শুক্রবার থেকে আবারও শুরু হয়েছে কঠোর লকডাউন। লকডাউন চলবে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত। লকডাউনের ফলে চুয়াডাঙ্গার সব বিনোদন কেন্দ্রে দর্শনার্থীদের প্রবেশে সম্পূর্ণভাবে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ঈদ আনন্দে ঘুরে বেড়ানো বন্ধ হয়নি। বরং করোনাভীতি ভুলে শিশু-কিশোর-তরুণ ও বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ ভিড় করছে পার্ক, ফুসকা হাউজ ও নদীর তীরে। একঘেয়ে অবস্থা থেকে একটু মুক্তি পেতে তারা দলে দলে ছুটছেন মুক্ত পরিবেশে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত ১ জুলাই সাত দিনের লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। পরে তা আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়। তবে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ২২ জুলাই পর্যন্ত লকডাউন শিথিল করা হয়। এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। একই প্রজ্ঞাপনে ২৩ জুলাই ভোর থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে সরকার।
এদিকে গতকাল শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন। চুয়াডাঙ্গার রাস্তাগুলো সকাল থেকে অন্য দিনের তুলনায় বেশ ফাঁকা দেখা গেছে। শহরের বড়বাজার চৌরাস্তার মোড়, কোর্ট মোড়, রেলবাজারসহ বিভিন্ন সড়কে কোনো গণপরিবহন চলতে দেখা যায়নি। রাস্তায় রিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ি এবং রোগীবাহী ব্যাট্যারি চালিত অটোরিকশা চলতে দেখা গেছে। পুলিশের ও ব্যাপক টহল দিতে দেখা গেছে। ঈদের প্রথম ও দিত্বীয় দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা শহর ও গ্রামাঞ্চলের ফুসকা হাউজ, মেহেরুন্নেছা পার্ক, সততা ফুট পার্ক, নদ-নদীর তীর ও বিভিন্ন ব্রিজ ঘিরে দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়। করোনা ঝুঁকি উপেক্ষা করে নানা বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে এসব স্থান। কথা হয় ঘুরতে আসা কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সাথে। তারা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে স্কুল-কলেজ বন্ধ। ঘরবন্দি হয়ে থাকতে ভালো লাগে না। এ কারণে ঈদে বন্ধুরা মিলে ঘুরতে বের হয়েছেন। এই করোনা পরিস্থিতিতে বের হওয়া ঠিক না; তারপরেও কিছুক্ষণের জন্য ঘরবন্দি দশা থেকে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে বাইরে এসেছেন। শত শত মানুষের পদচারণে মুখর ইব্রাহিমপুর মেহেরুন্নেছা পার্ক, আলুকদিয়ায় সততা ফুড পার্কে বসে থেকে, ছবি তুলে, আবার কখনো গা ঘেসে সময় কাটাতে দেখা গেছে আগত ব্যক্তিদের। সেখানে ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের ভিড়ে শিশু-কিশোররা আনন্দে মাতোয়ারা। এছাড়াও অনেকে স্বাস্থ্যবিধি তোয়াক্কা না করেই আলমসাধু, মিনি পিকাপ ও ইঞ্জিন চালিত ভ্যানে লাউড স্পিকারে উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে শহর ও গ্রামাঞ্চলে উল¬াস করতেও দেখা গেছে।
এদিকে, লকডাউনের প্রথম দিনে অনেকটা ঢিলে ঢালা ভাব দেখা গেছে চুয়াডাঙ্গায়। বিনা প্রয়োজনে রাস্তা ও বাজারে ঘুরতে দেখা গেছে মানুষকে। জীবিকার তাগিদে বাইরে বের হয়েছিলেন শ্রমজীবি মানুষগুলোও। কঠোর লকডাউনে থেমে নেই বিয়ের অনুষ্ঠান। ঈদে বউ বা বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছেন অনেকেই। স্বাস্থ্যবিধিও মানতে অনীহা দেখা গেছে মানুষের মাঝে। অনেকেরই মুখে ছিলো না মাস্ক, কেউ আবার মাস্ক ঝুলিয়ে রেখেছিলেন গলায়। শহরের শহীদ হাসান চত্বরে অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযান শেষে ম্যাজিস্ট্রেট চলে গেলে আবারও দেখা যাচ্ছে পূর্বের চিত্র। করোনার ভয়াবহ সংক্রমণ রোধে লকডাউন বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কঠোর অবস্থানে ছিল সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। প্রয়োজন ছাড়া কেউ রাস্তায় বের হলে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গায় লকডাউনের প্রথম দিনে বিধিনিষেধ না মেনে রাস্তায় বের হওয়ায় জেলায় ৭৭টি মামলায় ৭৯ জনকে ৫৫ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
দামুড়হুদার বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে অভিযান চালিয়েছেন উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুদীপ্ত কুমার সিংহ ওই অভিযান চালান। বিকেলে যোগ দেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজ হোসেন ও রিফাত জাহান। এ সময় ৮টি মামলায় ১০ জনকে ৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More